Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Thursday, August 11, 2011

ঘুরে দাঁড়াল বিশ্ব শেয়ারবাজার


বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সিউল স্টক এক্সচেঞ্জে একজন ব্রোকারের প্রতিক্রিয়া
বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সিউল স্টক এক্সচেঞ্জে একজন ব্রোকারের প্রতিক্রিয়া
এপি
প্রথম ইতিবাচক সংবাদটা এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা সুদের হার (ফেডারেল ফান্ড রেট) অন্তত ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিচু পর্যায়ে ধরে রাখবে।
সুদের হার নিচু পর্যায়ে রাখার মানে হলো, ফেডারেল রিজার্ভ খুব স্বল্প সুদে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া। বর্তমানে এই হার শূন্য থেকে দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। 
মঙ্গলবারের ঘোষণায় নিচু পর্যায়ে ধরে রাখা বলতে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার উল্লিখিত সীমার বাইরে নিয়ে যাবে বলে বোঝাতে চেয়েছে। 
মঙ্গলবার যখন এই ঘোষণাটি আসে, তখন আটলান্টিকের এপারে ইউরোপ ও প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারে এশিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। 
আর তাই ফেডারেল রিজার্ভের এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রভাবটা পড়েছে তাদেরই আর্থিক বাজারে বিশেষত ওয়ালস্ট্রিটে। মঙ্গলবার ওয়ালস্ট্রিটে ডাও জোনস সূচক প্রায় চার শতাংশ বা ৪২৯ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষ করেছে। ফলে ডাও জোনস আবার ১১ হাজার পয়েন্টের ওপরে উঠে যায়।
এর জের ধরে গতকাল বুধবার প্রথমে এশিয়া, তারপর ইউরোপের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক নিক্কি এক দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্টের ওপরে গিয়ে শেষ হয়েছে। 
হংকং ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বাজারগুলো গড়ে সোয়া দুই শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। এ ছাড়া সাংহাই, সিউল, জাকার্তা ও মুম্বাই ঊর্ধ্বমুখী ধারা নিয়ে দিন শেষ করেছে। 
এশিয়ায় যখন মধ্য দুপুর, তখন ইউরোপের বাজার দিনের যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে একটা ইতিবাচক সংবাদ সঙ্গী করে। আর তাই ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক বাজারদর বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ। পাশাপাশি লন্ডনের এফটিএসই-১০০ সূচক প্রায় দেড় শতাংশ আর প্যারিসের ক্যাক সূচক সোয়া এক শতাংশ বেড়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, সুদের হারে কোনো পরিবর্তন না আনার ঘোষণার মধ্য দিযে পুঁজিবাজারে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে যে এখান থেকে তহবিল অন্যত্র স্থানান্তর করে খুব একটা লাভ হবে না। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকই বলছেন যে এটা নেহাতই খণ্ডিত ধারণা। কেননা, সুদের হার নিম্নতম পর্যায়ে অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমেরিকা স্বীকার করে নিল যে তাদের অর্থনীতির মন্দাদশা কার্যত অব্যাহত রয়েছে। দেশটির আবাসন খাতে স্থবিরতা চলছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারও খুব শ্লথ আর মানুষের খরচও কমেছে।
বরং গত কয়েক দিনে অব্যাহত দরপতনের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। ফেডারেল রিজার্ভের ঘোষণা সেই প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন দিয়ে সাময়িক স্বস্তি এনেছে। 
অবশ্য গতকালই খবর আসে যে জুলাই মাসে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে তিন হাজার ১৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। জুন মাসে এই উদ্বৃত্ত ছিল দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে ৪১ শতাংশেরও বেশি।
এর মধ্য দিয়ে এ রকম একটা আভাসও মিলল যে বিশ্ব অর্থনীতি যতটা নাজুক হয়ে গেছে বলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন, বাস্তবে ততটা নাজুক হয়নি। 
তবে উচ্চ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর ঊর্ধ্বমুখী পুনর্মূল্যায়নের চাপ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। [সূত্র: বিবিসি ও এফটি]

Monday, August 8, 2011

খাওয়া কম, কথা বেশি


সৃষ্টির রহস্য অপার। একই অঙ্গ দিয়ে আমরা একাধিক কাজ করে থাকি। যেমন ধরুন, কান দিয়ে আমরা শুনি, আবার কানে চশমাও গুঁজি। নাক দিয়ে আমরা শ্বাস নিই, গন্ধ শুঁকি, আবার নাক দিয়ে নাক ডাকি। চোখ দিয়ে দেখি, আবার চোখ দিয়ে অশ্রুপাত করি। মাথা দিয়ে আমরা দেহটাকে চালাই, মাথা খাটাই, আবার মাথাব্যথায় ভুগি। জিভ দিয়েও আমরা একাধিক কাজ করি। জিভের দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে আছে খাওয়া আর কথা বলা।
বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আমাদের কম খেতে বলেছেন। কথাটার মধ্যে ন্যায্যতা আছে। ধনী বিশ্বের মানুষ, আমাদের দেশেরও ধনবানেরা না খাওয়ার জন্য যত মরে, বেশি খাওয়ার জন্য মরে তার চেয়ে অনেক বেশি। বেশি খেলে হূদরোগ হয়, রক্তেচাপ বাড়ে। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে ১০১টা অসুখের মূলে বেশি খাওয়া, ওজন বাড়িয়ে ফেলা, পরিশ্রম না করা। কাজেই বড়লোকেরা যদি কম খায়, তাতে তাদেরই মঙ্গল। কিন্তু গরিবদের জন্য এই কথাটা উপহাসের মতো শোনায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পৃথিবীতে যেসব দেশে পুষ্টিহীনতার সমস্যা সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এই দেশে পুষ্টিহীনতার কারণে ৫৪ শতাংশ স্কুল-পূর্ব শিশুর বৃদ্ধি থেমে আছে। এই শিশুর সংখ্যা ৯৫ লাখ। এ দেশে ৫৬ শতাংশ শিশুর ওজন কম। নারীর ক্ষেত্রেও পুষ্টিহীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ তালিকায়। ৫০ শতাংশের বেশি নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন, এফএওর ভাষায়, ভুগছেন ক্রনিক এনার্জি ডেফিসিয়েন্সিতে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী যখন কম খাওয়ার কথা বলেন, তখন মনে হয়, তিনি কাকে বলছেন এবং কখন বলছেন?
প্রথম আলোতেই খবর বেরিয়েছে, কেবল পুষ্টিহীনতায় ভোগা দরিদ্র নয়, সীমিত আয়ের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে পারছে না। তাই খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। জিনিসপাতির দাম খুবই বেড়ে গেছে। অসম্ভব হারে বেড়ে গেছে বাসাভাড়া আর রিকশাভাড়া। ১০ টাকার নিচে ঢাকায় রিকশাভাড়া নেই বললেই চলে। আমি মাঝেমধ্যে ধানমন্ডি থেকে গ্রিনরোড হয়ে পূর্ণিমা সিনেমা হলের গলি পর্যন্ত যাই। আগে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। গত ছয় মাসে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়। সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া চাওয়ার কোনো নির্দিষ্টতা নেই—যখন যেমন, যার কাছ থেকে যত খুশি তাঁরা ভাড়া আদায় করেন। রোজার আগেভাগে বহু তরিতরকারির দাম বেড়েছে অর্ধশত থেকে শতভাগ পর্যন্ত। কেবল আলুর দামটা এখনো কম আছে বলেই মনে হয়। তবু রোজার আগে আলু ছিল ১২ টাকা কেজি, এখন ১৬ থেকে ১৮ টাকা। শতকরা হিসাবে আলুর দামও বেড়েছে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ। এখন চিন্তা করুন, যে সরকারি কর্মচারী মাসে বেতন পেতেন ১৫ হাজার টাকা, তাঁর আয় তো ছয় মাসে ৫০ শতাংশ বেড়ে ২২ হাজার টাকা হবে না। সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল বেসিক ৪১০০ টাকা, সব মিলিয়ে তাঁরা সাত হাজার ২০০ টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। বছরের শেষে তাঁদের বেতন ১৯০ টাকার মতো বাড়ে। ঢাকা শহরে একটা লোক যদি এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় রোজ একবার যাতায়াত করেন, তাহলে তাঁর ২০০ টাকা এমনিতেই বেরিয়ে যাবে। এর মধ্যে তাঁরা বাসাভাড়া কী দেবেন, আর পেটে কী দেবেন, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। তাঁরা কেবল কম খান তা-ই নয়, তাঁরা দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন, অফিস থেকে বেরিয়ে তাঁদের দ্বিতীয় কোনো কাজে লেগে পড়তে হয়, তাঁরা তাঁদের মোমবাতির দুই প্রান্তেই আগুন লাগিয়ে দেন, ক্ষয়ে যেতে থাকেন দ্রুত। ‘নিমঅন্নপূর্ণা’ নামে কমল কুমার মজুমদারের গল্প আছে, আর আছে তা অবলম্বনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমা। সেই ছবি শুরুই হয় এ কথা বলে যে পরিবারটি ভদ্রলোকদের, কারণ তারা খবরের কাগজ পড়ে থাকে। সেই খবরের কাগজ পড়া ভদ্রলোক-পরিবারের বধূটি বাড়ির সামনের রাস্তার ভিক্ষুককে মেরে তার চাল ও টাকা কেড়ে নিয়ে এসে পরিজনদের ভাত খেতে দিয়েছিল। আমাদের মধ্যবিত্তরা কীভাবে তাদের দিন গুজরান করছে, সেই হিসাব কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মেলাতে পারবেন না।
শুধু খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে তা নয়—চুলায় গ্যাস নেই, আর ট্যাপে পানি নেই। রামপুরায় মিছিল হয়েছে, কিন্তু উত্তরা থেকে মিরপুর, গুলশান থেকে সেন্ট্রাল রোড, রামপুরা থেকে কলাবাগান, বাড্ডা থেকে মগবাজার—বহু স্থানে বহু বাড়িতে পানি নেই। পত্রিকান্তরে পড়লাম, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, না, সমস্যা অত তীব্র নয়, যতটা বলা হচ্ছে। ২৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা, ২২০ কোটি লিটার উ ৎ পাদিত হচ্ছে। ৩০ কোটি লিটার কম মানে, কত বাড়িতে পানি নেই—একটু হিসাব করলেই বোঝা যাবে। আর যার বাড়িতে পানি নেই, সে যে হিসাব ধুয়ে পানি খাবে, সেই উপায়ও তো তার থাকবে না। এই পানির সংকট দূর করা, দ্রুত ও অস্থায়ীভাবে, সবচেয়ে সোজা। গরমের সময় পানির সংকট হয়। কারণ বিদ্যুতের সংকট হয়, ওয়াসার পাম্পগুলো চলতে পারে না। কারণ সব কটিতে জেনারেটর নেই। ৫৯০টি পাম্পের ২৯৩টিতে জেনারেটর আছে, আর আছে কয়েকটা ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর। ২০০ জেনারেটর কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে। এ বাবদ ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, কিন্তু তা আজও কেনা হয়নি। এই দেশ চলবে কেমন করে?
কিছু নতুন গভীর নলকূপ আর জেনারেটর চালু হলে সমস্যার আপাতত সমাধান হয়ে যায়। যদিও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদের ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের দিকে যেতেই হবে। ঢাকার মাটির নিচের পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ১০ বছর পরে গভীর থেকে গভীরতর নলকূপেও আর পানি উঠবে কি না, সন্দেহ আছে।
তো কথাটা দাঁড়াচ্ছে, আপাতত বহু বাড়ির ট্যাপে পানি পড়ে না। ট্যাংক খালি। কাজেই এই উপদেশও আমরা দিতে পারি, পানিও কম খান। এক কোটি ঢাকাবাসী প্রতিদিন যদি ৩০ লিটার করে পানি কম খায়, তাহলে ৩০ কোটি লিটার পানি বেঁচে যাবে। তাহলে আমাদের প্রতিদিন যে ৩০ কোটি লিটার পানির ঘাটতি, তা আর থাকবে না।
তো আমরা কম খাব, কম পান করব—এ কাজটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, বেশি কথা বলা। আমাদের বাগ্যন্ত্র, যথা—ওষ্ঠ, জিহ্বা, কণ্ঠ, নাসিকা, দন্ত, তালু আমরা কেবল কথা বলার জন্যই ব্যবহার করি না, খাদ্য গ্রহণ ও পানীয় পান করার জন্যও ব্যবহার করে থাকি। (নাক দিয়ে কীভাবে খাই, প্রশ্ন করতে পারেন। নাক দিয়ে আমরা খাদ্যের ঘ্রাণ নিই। ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন হয়ে যায়।) তো আমরা যদি দাঁত দিয়ে খাদ্যবস্তু না চিবিয়ে দন্ত্য বর্ণগুলো উচ্চারণ করি, যথা—ত, থ, দ, ধ, ন; ওষ্ঠ দিয়ে খাদ্যবস্তু না চেটে ওষ্ঠ্য বর্ণ যথা—প, ফ, ব, ভ, ম উচ্চারণ করি, তাহলে আমাদের এই অঙ্গগুলো ব্যস্ত থাকে, আমাদের আর খেতে হয় না। আমাদের আর পানও করতে হয় না।
আমাদের মন্ত্রীরা নিজেরা কিন্তু তা-ই করছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই কম খান। কমই যদি তাঁরা না খাবেন, তাহলে তাঁরা এত কথা কখন বলেন, কেমন করে বলেন? এই ক্ষুদ্র কলামলেখক, এই কলামে বহুবার, এমনকি এই মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পরপরই প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় লিখে এই আবেদন জানিয়েছেন যে মন্ত্রীরা যেন দয়া করে কথা কম বলেন। যেন তাঁরা টেলিভিশনের চোঙাটা দেখামাত্র দাঁড়িয়ে পড়ে চুলটা আঁচড়ে নিয়েই কথা বলতে শুরু না করেন এবং টেলিভিশনগুলোর নৈশকালীন টক শো, মিষ্টি শোগুলোয় একটু কম কম যান। কিন্তু মন্ত্রীরা নিশ্চয়ই কলামলেখকদের তুলনায় বেশি জানেন আর বেশি বোঝেন। কাজেই তাঁরা কথা বলেই চলেছেন। কথা বললে স্লিপ অব টাং হবেই। আর যখন আপনি কার্যক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারবেন না, তখন আপনার অতিশয় মিষ্ট কথাও বড্ড তেতো বলে মনে হবে শ্রোতাদের কাছে।
কম খাওয়ার উপদেশটা যে বিজ্ঞজনোচিত ও স্বাস্থ্যকর, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কে বলছেন, কখন বলছেন, কাদের বলছেন এবং কথাটার আগে-পরে তিনি কী প্রেক্ষাপট তৈরি করে নিয়েছেন, এটা নিশ্চয়ই বিবেচ্য। গরিব মানুষকে তিনি কম খেতে বলেননি, অপুষ্টিতে ভোগা ৫৪ শতাংশ শিশুকে তিনি কম খাবার দিতে বলেননি—কম খেতে বলেছেন তাদের, যারা খাওয়ার চেয়ে ফেলে বেশি, অপচয় করে বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, টিসিবি কেন খেজুর আমদানি করতে গেল, আর চিনি ও তেলের সঙ্গে খেজুর কেনাটা কেন বাধ্যতামূলক করতে গেল। বাঙালিকে ডাল-ভাতের সঙ্গে খেজুর খাওয়ানোটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মসূচির কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অংশ, ঠিক বুঝতে পারলাম না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী যে বলেছেন, একদিন অন্তত বাজারে না গেলেই সবকিছুর দাম কমে যেতে বাধ্য, সেটাও ঠিক। কিন্তু সেটা কি একা করার মতো একটা কাজ, আর বলার মতো একটা কথা? এটা কি বাস্তবে হয় যে সবাই মিলে একদিন চিনি কেনা বন্ধ করে দেব?
যা হোক, কম খান, একদিন বাজার করা বন্ধ করুন—এসব কথা কেবল বড়লোকদেরই বলা যায়, আর বলা যায় ক্ষমতাসীন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের। অর্থা ৎ বলা যায়, নিজেদের। তাঁরা বলতে পারেন, আমি আজ সারা দিন এক ফোঁটা চিনিও খাব না। তাঁরা বলতে পারেন, আমরা সাংসদেরা ঠিক করেছি, আজকের দিনে আমরা বাজারমুখো হব না। সে ক্ষেত্রে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী, দুজনই আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও প্রিয়, আপনারা কি একটা কাজ করতে পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে কি বলবেন, ‘আপনারা ইফতার পার্টি দেওয়া বন্ধ করুন’? যখন আমরা দেশের মানুষকে কম খেতে ও কম বাজারে যেতে বলছি, তখন এ রকম ঘটা করে ইফতার পার্টির আয়োজন কি চরম পরিহাস নয়?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত ২ টাকার নোট আসছে

 বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত দুই টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে আসছে ১১ অগাস্ট।

সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে মতিঝিল অফিস থেকে নতুন নকশার এই নোট ইস্যু করবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকেও তা পাওয়া যাবে।

অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেকের স্বাক্ষর সম্বলিত ১০০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৬০ মিলিমিটার প্রস্থের এই নোটে ২ মিলিমিটার চওড়া 'সিকিউরিটি থ্রেড' থাকবে। নোটের সামনের অংশে বামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতি সৌধের ছবি এবং ডান পাশে জলছাপে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও সরকারের প্রতীক রয়েছে।

এছাড়া নোটের উপরের কোনায় জাতীয় প্রতীক শাপলা এবং উল্টোপিঠে ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি রয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন চালু করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

দুই টাকার নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত দুই টাকার কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রাও যথারীতি চালু থাকবে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

 ‘বিক্ষোভকারীরা ফাটকাবাজ’


শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীদের ‘ফাটকাবাজ’ বলে অভিহিত করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি তাঁদের বাজার থেকে চলে যেতেও বলেছেন। 
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) বলেছি এবং আজও বলছি, প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেন না। যারা বিক্ষোভ করছে, তারা বিনিয়োগকারীই না। তারা এখানে ফাটকাবাজি করতে এসেছে। কেন তারা আশা করছে যে প্রতিদিন শেয়ারের দাম বাড়বে? এরা বাজার থেকে বেরিয়ে গেলেই ভালো।’
এই বক্তব্যের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে তাঁদের শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। 
গতকাল রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ চা-সংসদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এই বৈঠকের আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে বাজার নিয়ে আলাদা একটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। 
বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকটি বিশেষ কোনো কারণে ডাকা হয়নি। কয়দিন দেশের বাইরে ছিলাম। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলাম যে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিটি যেন চূড়ান্ত করা হয়। সেটার কী হলো, আর হঠাৎ কেন শেয়ারের দামই বা পড়ে গেল—এসব খোঁজখবর নিতে এসইসির চেয়ারম্যানকে ডেকেছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছে, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগের ঘটনায় বাজারে প্রভাব পড়ছে। শুনেছি, আজও বিক্ষোভ হয়েছে।’ এ কথার বলার পরই তিনি বিক্ষোভকারীদের ফাটকাবাজ আখ্যা দিয়ে চলে যেতে বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান এসইসি একটি সম্পূর্ণ নতুন কমিশন। তার নিজের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছে, কিছু আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। 
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে।’ 
প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, তাঁরা শেয়ার ধরে রাখবেন। হঠাৎ করে দাম কমে গেলেই বিক্রি করে দেবেন না।’ গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক পতন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা কী? এখনো তো বাজারের সূচক ছয় হাজারেরও বেশি।’

Sunday, August 7, 2011

শেয়ারবাজারে দরপতনে বিক্ষোভ, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি


শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে আজ রোববারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেন। দুপুর ১২টার দিকে সূচক ১৬১ পয়েন্ট কমে গেলে তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা দুইটার দিকে বিক্ষোভ শেষ হয়। এ সময় শেয়ারবাজারে দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাঁরা এ বিক্ষোভ করেন। 
দেশের শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত ছিল। আজ ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৩৯.৭৪ পয়েন্ট কমে ৬,১২০.১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 
আজ হাতবদল হওয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের, কমেছে ২২০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ ডিএসইতে ৫৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো, এনবিএল, তিতাস গ্যাস, এমআই সিমেন্ট, কেয়া 

বনে বিরল তবে বাজারে বিকায়

ঢাকার কাপ্তানবাজারের পাখির দোকানে বিরল পাখি ধনেশ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে ।


চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের মূল ফটক দিয়ে কিছুদূর এগোলেই ডান দিকে ‘পাখির গলি’। গলির মুখেই রমজান চাচার দোকান। সেখানে সম্প্রতি একদিন গিয়ে দেখা গেল, চারটি খাঁচায় দুটি কাক, ছয়টি কবুতর ও তিনটি খরগোশ রাখা। নির্ভেজাল পোষা পশুপাখির কারবার। 
কিন্তু রমজান চাচার কাছে ‘নতুন পশুপাখি কী আছে?’ জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ‘আসল জিনিসের’ খবর। ক্রেতা ঠাউরে চাচার জবাব, ‘কী লাগবো কন। ভালুকের পিত্ত (গলব্লাডার) দেওয়া যাইবো ১০টা। দাম ৩০ হাজার টাকা কইরা। তাজা অজগর এক লাখ। দুই মাস টাইম দিলে বেঙ্গল বাঘের চামড়াও আইনা দিমু।’
রমজান চাচা আরও জানান, অজগর ও মেছোবাঘের চামড়াও দিতে পারবেন তিনি। পাঁচ হাজার টাকায় মিলবে জ্যান্ত কেউটে বা শঙ্খিনী সাপ।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এভাবেই অবৈধভাবে বাজারে ঠাঁই পাচ্ছে অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণী। চোরা শিকারিদের হাত ঘুরে তাদের জায়গা হচ্ছে খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন তথাকথিত ‘পাখির বাজারে’। দেশের গুরুতর ঝুঁকির মুখে থাকা জীববৈচিত্র্য ক্রমেই বিপন্নতর হচ্ছে। 

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা থেকে উদ্ধার করা বাঘের চামড়া, হাড় ও চারটি মাথা।
কবুতর-খরগোশ ও বাহারি পাখির আড়ালে বিক্রি হচ্ছে বিপন্ন বাঘ, ভালুুক, উল্লুক, হনুমান এবং ধনেশ ও মদনটাকের মতো বিরল পাখি। অভ্যন্তরীণ চোরাবাজার থাকার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী পাচারেরও অন্যতম নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। বন্য প্রাণী ব্যবসার ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ট্রাফিক’-এর ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ বন্য প্রাণীর ব্যবসা হয়ে থাকে।
রাজধানীর কাঁটাবনে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণি কেন্দ্রটির পোষা পশুপাখির দোকানের অনেকগুলোতেই অবৈধভাবে বন্য প্রাণী বিক্রি হয়ে থাকে। সেখানে রংবেরঙের পোষা পাখি, খরগোশ ও কুকুরের পাশাপাশি প্রায়ই ঈগল ও কালিমসহ বিভিন্ন পাখি এবং ছোটখাটো বন্য প্রাণী এক রকম প্রকাশ্যেই বিক্রি হয়। সম্প্রতি এক দিন গিয়ে চুপিচুপি অজগর ও কুমির আছে কি না জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন দোকানি টেলিফোন নম্বর দিয়ে জানালেন, কী লাগবে তা ওই ফোনে জানাতে। মাঝেমধ্যে কর্তৃপক্ষের অভিযানের পরও এ বাজারে বছরের পর বছর ধরে বন্য প্রাণীর ব্যবসা চলছে। 
রাজধানীর কাপ্তানবাজারের মুরগিপট্টির বিপরীতে নতুন গড়ে ওঠা পাখির দোকানগুলোতে তেমন রাখঢাক ছাড়াই বন্য প্রাণীর ব্যবসা চলে। ‘বিসমিল্লাহ বার্ডস’ নামের দোকানে গিয়ে বন্য প্রাণী কিনতে চাইলে দোকানি ক্যাটালগ বের করে বললেন, ‘কোনটা লাগবো, অরজিনাল জঙ্গল থিক্যা আনা।’ 
এখানকার আরেক দোকান ‘বার্ডস হাউস’-এ পাওয়া গেল হাওরের বিরল চারটি কালিম পাখি। এর পরের খাঁচায়ই দেশে বিলুপ্তপ্রায় পাখি বিশাল ঠোঁটের ধনেশ। দোকানি ইমরান জানালেন, প্রতিটি ধনেশ ৩০ হাজার টাকা। ১২টি দেওয়া যাবে। সুন্দরবন থেকে আনা ছয়টি মদনটাক পাখি গুদামে আছে। এ পাখিটিও অতিবিপন্ন। 
টঙ্গী ব্রিজের শেষ মাথায় রোববারে বসে বিশাল কবুতরের হাট। ২০০ থেকে ৩০০ দোকান বসে এই হাটে। সপ্তাহ দুয়েক আগের এক রোববারে সেখানে গিয়ে দেখা যায় নানা প্রজাতির কবুতরের সঙ্গে ঘুঘু, কালিম ও বেজি বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ বিক্রেতাই টিয়া, ময়না, বক, কোকিলসহ নানা জাতের বন্য পাখি নিয়ে বসেছেন। বিকেলে নৌপথে এখানে অজগরসহ নানা প্রজাতির সাপ আনা হয় বলে জানালেন কয়েকজন বিক্রেতা।
উত্তর-পূর্বের জেলা নেত্রকোনার ভারত-সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দায়ও বসে বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, লামচিতা, সাপসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর হাট।
কোথা থেকে কোথায় যায়: অনুসন্ধানে জানা গেছে, চোরা শিকারিরা সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বন্যপ্রাণী ধরে বাজারে চালান দেয়। ভারতীয় সীমান্ত দিয়েও চোরাপথে আসে বেশ কিছু বন্য প্রাণী। চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মিয়ানমার সীমান্ত পথে অনেক বন্য প্রাণী বাইরেও পাচার হচ্ছে। থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ এগুলোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক পোষা পশুপাখির ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দেশের দুই প্রধান দলের দুজন সাবেক সাংসদ এ ব্যবসার অন্যতম ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী বর্তমান সাংসদ তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বন্য প্রাণী পাচার করে থাকেন বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।

ভালুকের পিত্ত হাতে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানি রমজান
বাঘ-হাঙরের চামড়া পাচার: ‘প্রজেক্ট অন টাইগার’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে দুই থেকে তিনটি বাঘ চোরা শিকারিদের হাতে মারা পড়ে। এ ছাড়া কমপক্ষে দুটি বাঘ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের (ডব্লিউটিবি) হিসাবে শিকারিদের হাতে বছরে ১০ হাজার হরিণ মারা পড়ছে। দেশে মাঝেমধ্যেই বাঘের চামড়া বা দেহাবশেষ আটকের ঘটনা ঘটে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলায় বেঙ্গল টাইগারের তিনটি চামড়া, চারটি খুলি ও ৩০ কেজি হাড়সহ একজন ধরা পড়ে। ৬ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির জঙ্গল থেকে বেঙ্গল টাইগার মেরে এর চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয় স্থানীয় বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু মানুষ।
নদী ও সাগর থেকেও হাঙর, কুমির, ঘড়িয়াল ও কচ্ছপ দেদার ফাঁদ ও বিভিন্ন কায়দায় ধরা হচ্ছে। দেশের ১২টি প্রতিষ্ঠান ‘বৈধ’ অনুমোদন নিয়ে রপ্তানি করছে হাঙর, শাপলাপাতা মাছ (স্টিংরে) ও কচ্ছপের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আর অবৈধ পথে যাচ্ছে সাপ, কুমির ও অতিবিরল ঘড়িয়াল। বিরল পাখিও আছে পাচারের তালিকায়। বাঘ ও ভাল্লুকের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওষুধ, গহনা ও গৃহসজ্জাসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেঙ্গল টাইগারের চামড়ার দাম ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। মেছোবাঘ ও লামচিতার চামড়া মিলবে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। জ্যান্ত মেছোবাঘ বা লামচিতা এক থেকে দুই লাখ টাকায় পাওয়া যাবে বলে জানান একজন ব্যবসায়ী। তিনি জানান, জ্যান্ত ভালুক, উল্লুক ও হনুমানও মোটা দামে বিক্রি হচ্ছে। 
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনে বাঘ, সমুদ্রে হাঙর ও নদীতে কুমির প্রাণচক্রের সর্বোচ্চ স্থানে থাকা প্রাণী। এরা অন্য প্রাণীদের খেয়ে বাস্তুসংস্থান ঠিক রাখে। এদের এ হারে মেরে ফেলতে থাকলে একসময় বন-জলাভূমির প্রাণচক্র ভেঙে পড়বে। বন্য প্রাণী একবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে তাদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’
দেশের একমাত্র বৈধ কুমিরের খামার রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, পরিচয় গোপন করে অনেকে তাঁদের কাছে আন্তর্জাতিক বাজারের তিনগুণ বেশি দামে কুমির কেনার প্রস্তাব দিচ্ছে। বিনিময়ে কুমিরের চালানের সঙ্গে অন্য বন্য প্রাণীও পাচারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
বায়ো-কেমিক্যাল অ্যান্ড সি ফুড এক্সপোর্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল ইসলাম জানান, গত অর্থবছরে তাঁর প্রতিষ্ঠানসহ ১২ জন মিলে মোট প্রায় ৬০ কোটি টাকার হাঙরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কচ্ছপের খোল ও মাংস এবং শাপলাপাতা মাছ রপ্তানি করেছেন। 
চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বিভাগের কমিশনার জামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাঙর নিষিদ্ধ হলে তা রপ্তানি হওয়ার কথা না। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই।’ 
বিপন্ন বিরল প্রাণী ভালুক: ভালুকের পিত্ত বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার চট্টগ্রাম। এ দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ভালুকের পিত্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। ওই অঞ্চলের চোরা শিকারিরা ফাঁদ পেতে ভালুক ধরে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাশাপাশি জ্যান্ত প্রাণীটিও বিক্রি হয়ে থাকে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়মিতভাবে জীবিত ভালুক ও এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার হয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের মানুষ এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ১৯৯১ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে অপেক্ষমাণ কোরীয় জাহাজ ‘সিইয়াং’-এ অভিযান চালিয়ে বন বিভাগ ছয়টি জীবিত ভালুক ও ২৪টি বানর উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়। ওই জাহাজের মালিকদের জরিমানা করা হয়েছিল। 
বিশেষজ্ঞের উদ্বেগ: পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তালিকায় অতিবিপন্ন প্রাণী হিসেবে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (সুন্দরবনের বাঘ), মেছোবাঘ, লামচিতা ও কালো ভালুকের নাম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে গন্ডার, জলার কুমির, হায়েনা, নেকড়েসহ মোট ১৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুল আলম খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঘ-ভালুকের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে বন্য প্রাণী চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক মনিরুল আলম খান বন্দরগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বন্য প্রাণী চিহ্নিত করা ও পাচার রোধে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন। তাঁর মতে, একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে হবে।
প্রধান বন্য প্রাণী সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা না পেলে এই অনৈতিক ও অবৈধ ব্যবসা থামানো যাবে না।’ কাঁটাবন মার্কেটে অবৈধ বন্য প্রাণীর ব্যবসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজারে কিছুদিন পরপর অভিযান চালিয়ে বন্য প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটি বন্ধ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More