Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Friday, July 29, 2011

সেই কাবো থেকে আবার উড়োজাহাজ ভাড়ার চেষ্টা

বাংলাদেশ বিমানের হজ-ফ্লাইটের জন্য নাইজেরিয়ার বিতর্কিত সেই কাবো এয়ারলাইনস থেকে আবারও উড়োজাহাজ ভাড়ার তৎপরতা চলছে।
বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অন্যান্য দরদাতার চেয়ে কাবোর উড়োজাহাজের ভাড়া অনেক বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। তার পরও কাবো থেকেই উড়োজাহাজ ভাড়া করতে চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এই অবস্থায় বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিমান সূত্র জানায়, আগামী হজ-ফ্লাইটের জন্য দুটি বোয়িং-৭৪৭ উড়োজাহাজ ভাড়া করার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তিন দফা দরপত্র আহ্বান (আরএফপি—রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) করে।
প্রথম দফায় চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাতে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল অস্ট্রেলিয়ার অজবান অ্যারোনটিক্যাল সার্ভিসেস। তারা হজ উপলক্ষে তিন মাসের জন্য উড়োজাহাজটির প্রতি উড্ডয়ন ঘণ্টা নয় হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করেছিল। আর এক বছরের জন্য অপরটির অবশ্য অনেক কম দর প্রস্তাব করেছিল। এ সময় কাবো এয়ারের প্রস্তাব ছিল তৃতীয় সর্বনিম্ন দর।
জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহম্মদ জাকিউল ইসলামও বলেন, অজবানের চেয়ে কাবোর দরপ্রস্তাব ছিল অনেক বেশি। অজবান সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও তারা শর্ত দেয় যে তাদের দুটি উড়োজাহাজই ভাড়া নিতে হবে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার আটলান্টা আইসল্যান্ডিকের কাছ থেকে একটি বোয়িং এক বছরের জন্য ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বিমান অজবান থেকে হজের জন্য একটি বোয়িং ভাড়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তাই আরও দুবার আরএফপি করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ৩ জুলাই তৃতীয় দফা দরপত্র বা আরএফপি করা হয়। তাতে কাবোসহ মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিদেশি একটি উড়োজাহাজ লিজিং কোম্পানির ঢাকার একজন প্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেন, বিমানের কার্যক্রমে মনে হয়েছে, তারা কাবো থেকেই উড়োজাহাজ ভাড়া করতে নানা কারসাজি করছে, তাই তাদের মতো অনেকে দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী হয়নি।
বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তারাও একই রকম অভিযোগ পেয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে কাবো থেকে উড়োজাহাজ ভাড়ার বিপক্ষে মত দেন পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য। তাঁদের মতে, কাবোর মতো বিতর্কিত এয়ারলাইনস থেকে আবার হজের জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া করলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
বিমানের এমডি স্বীকার করেন, কাবোর প্রস্তাব নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে সমালোচনা হয়েছে। তাই আরেক দফা প্রস্তাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেটা দরপত্র বা আরএফপি নয়, সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিমানের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে প্রস্তাব চাওয়া।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায়ও কাবো থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে বিমান কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমিটির সদস্য মইনউদ্দীন খান বাদল প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিমান এখন এক বছরের জন্য একটি বোয়িং-৭৪৭-৪০০ ভাড়া নিতে চায়। এখন দুটি এয়ারলাইনসের প্রস্তাব আছে। এর একটি এয়ার আটলান্টা আইসল্যান্ডিক, আরেকটি কাবো। এর মধ্যে ভালো প্রস্তাবটিই গ্রহণ করতে বলেছে কমিটি।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত বছর ব্যর্থ হয়ে এবার আরও আটঘাট বেঁধে কাবোর পক্ষে একটি মহল চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছে। এর আগে গত বছর হজ-ফ্লাইটের জন্য কাবো থেকে ২৬ বছরের পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল। এ নিয়ে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের রাজি না হওয়ায় সেটি ভাড়া করা হয়নি। তখন এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে স্থায়ী কমিটি ও বিমানের চেয়ারম্যানের বেশ টানাপোড়েন, এমনকি মন্ত্রীর পদত্যাগের মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল।
এ বছর উড়োজাহাজ ভাড়া প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত, এমন একজন পদস্থ কর্মকতা এ প্রতিনিধিকে বলেন, তাঁরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছেন, তাতে কাবো থেকে একটি ৫৮২ আসনের বোয়িং তিন মাসের জন্য ভাড়া করা হলে হজফ্লাইট নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা যাবে।
বিমানের হজযাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর। এবার বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা এক লাখ আট হাজার। এর মধ্যে ৪৪ হাজার বিমান পরিবহন করবে বলে জানিয়েছেন এমডি জাকিউল ইসলাম। বাকি ৬৬ হাজার সৌদিয়াসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থা পরিবহন করবে।

ছোলার বাজার এখনো চড়া

পবিত্র রমজানে অপরিহার্য পণ্য ছোলার দাম এখনো চড়া। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে চিনি ও ভোজ্যতেলের অস্থিরতা কাটলেও ছোলার বাজারে তার ছাপ নেই।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কমেছে, কিন্তু তার কোনো লক্ষণ খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ছোলার চড়া দাম দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর মিয়ানমারের অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ছোলার দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশই (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসেই ছোলার দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন থেকে সাড়ে তিন মাস আগেও ছোলার দাম ছিল মাত্র ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, এখন অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা সাধারণ মানের ছোলার আমদানি ব্যয় পড়ে কেজিতে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। মিয়ানমার থেকে আনা ছোলা সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ এবং ইথিওপিয়া থেকে আমদানি করা ছোলার খরচ পড়ছে ৪৯ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৩ টাকা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ছোলা চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। মিয়ানমারের ছোলা ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। আর ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৬৫ থেকে ৭০ এবং মিয়ানমারের ছোলা ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কেন ছোলার বাজারের এই অবস্থা, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে আমদানিকারকেরা বললেন সরবরাহের ঘাটতির কথা। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকেরা বলেন, শুধু রমজানেই দেশে ছোলার চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। কিন্তু গত পাঁচ মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৭ হাজার টন। এর বেশির ভাগই আবার বিক্রি হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে ছোলা আমদানি করা হয়েছিল ৪৫ হাজার টন। এ বছরের জুনে আমদানি হয়েছে মাত্র নয় হাজার টন। এর কারণ হিসেবে ওই সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ছোলা আমদানির প্রধান উৎস (৯৫ শতাংশ) অস্ট্রেলিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো মানের ছোলার অভাব দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে। এ কারণে দেশেও ছোলার দাম বেশ চড়া।
চলতি মাসে নয় হাজার ১৬৯ টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। তবে আগামী দুই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারিতে কমেছে: গতকাল রাজধানীর রহমতগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ডালপট্টিতে সাধারণ ছোলা পাইকারি ৫৮ থেকে ৬০ এবং উন্নতমানেরটি সর্বোচ্চ ৭১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই ধরনের ছোলাতেই কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দাম আরও কম। সেখানে সাধারণ ছোলা ৫৩ ও উন্নতমানের ছোলা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাধারণ মানের ছোলা ৫৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী এর চেয়েও কম দামে বিক্রি করছেন।
‘নারায়ণগঞ্জ জেলা ডাল ভুষা মাল ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপ’-এর নির্বাহী পরিচালক ও বেঙ্গল ট্রেডার্সের মালিক বিকাশ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে ডাল আমদানিকারকদের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ানোর কারণে ছোলার দাম কমে এসেছে।
বন্দরনগরে দাম কম হলেও খুচরা বাজারে তার প্রতিফলন নেই কেন জানতে চাইলে একজন আমদানিকারক বলেন, তাঁরা খুব বেশি লাভে ছোলা বিক্রি করছেন না। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পাইকারেরা বলছেন, ছোলার দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা দিচ্ছেন পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কেনার অজুহাত।
তবে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই একটি বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। তা হলো রোজার বাড়তি চাহিদা বুঝে অতিরিক্ত মুনাফা করার মানসিকতা থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে পণ্যটির।

ব্যবসায়ীরা তো দেখি বেশ বোকা!

প্রতিবছর রমজান মাস আসার আগে যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে, তখন সবাই বলাবলি করতে থাকেন, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন। এর মানে হলো, ব্যবসায়ীরা চাইলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারেন এবং তাঁরা আর কোনো মাস নয়, শুধু রমজান মাসটাকেই বেছে নেন দাম বাড়ানোর জন্য। যদিও তাঁরা জানেন, এ মাসের অনেক আগে থেকেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার অনেক সতর্কতামূলক কথা বলতে থাকে, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ সময় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শোরগোল তোলে এবং এর পরও তাঁরা এই সংবেদনশীল সময়টাকেই বেছে নেন দাম বাড়ানোর জন্য।
ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করেন কোনো দ্রব্যের দাম ভবিষ্যতে বাড়বে, তাহলে দেখা যায়, সেটি এখন থেকেই বাড়া শুরু করে। কারণ, ব্যবসায়ী ওই মুহূর্ত থেকে দ্রব্যটির সরবরাহ কমিয়ে দেবে ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য। তাই রমজান মাসে যদি আশা করা হয় কোনো জিনিসের দাম বাড়বে, তাহলে এর দাম আগে থেকেই বাড়বে। তাহলে ব্যবসায়ীরা কেন প্রত্যাশা করেন, রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়বে? যদি আমরা ধরে নিই, ওই দ্রব্যের সরবরাহজনিত কোনো সমস্যা নেই, তাহলে দামটা বেড়েছে চাহিদা বাড়ায়। চাহিদা আর সরবরাহের বিশ্লেষণ একটু জটিল হওয়ায় অনেক বিশ্লেষক সেদিকে না গিয়ে সোজাসুজি ‘সিন্ডিকেট থিওরি’ প্রয়োগ করেন। তাঁরা বলতে চান, ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছেন।
সিন্ডিকেটকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয় কার্টেল। এ ধরনের কার্যকলাপ প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার পরিপন্থী হওয়ায় অনেক দেশে এটা আইনের চোখে নিষিদ্ধ। কিন্তু এই সিন্ডিকেট-তত্ত্ব বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিছু হলেই টিভি, মিডিয়া ও টকশোগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সিন্ডিকেট-তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়। বাস্তবে এই সিন্ডিকেট প্রমাণ করাটা বেশ কঠিন কাজ। সাধারণত সরবরাহ ও চাহিদার অনেক নিয়ামকের যেকোনো একটির পরিবর্তন দ্বারাই দ্রব্যের মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে। সেগুলোর যথাযথ বিশ্লেষণে না গিয়ে এ প্রসঙ্গ আসামাত্র সিন্ডিকেট-ব্যাখ্যায় চলে যাওয়া একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সিন্ডিকেট যদি এতই শক্তিশালী হবে, তাহলে তো জিনিসপত্রের দাম কখনোই কমার কথা নয়। যখন দাম কমে যাবে, তাহলে তখন কি আমরা ধরে নেব যে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘যাক বাবা, অনেক তো লাভ হলো; চলুন, আমরা এবার সবাই মিলে দাম কমিয়ে কিছু লোকসান করি। নয়তো ব্যাপারটা একটু খারাপ দেখা যায়।’
অনেকে বলেন, রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেন ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধির। ব্যবসায়ীরা অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলতে পারেন, রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগটা তাঁদের দেওয়া হয় বলেই তাঁরা এ সুবিধা নেন। আমরা সব সময় আশা করি, ব্যবসায়ীর কাজ হচ্ছে সর্বদা ন্যায্য দামে বিক্রি করা। ন্যায্য দাম বলতে আমরা অবশ্যম্ভাবীভাবেই আমাদের মনের মতো কম দামকেই মনে করি।
অর্থনীতিতে ন্যায্যমূল্য ব্যাপারটা সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন কাজ। চালের দাম কত হলে ন্যায্য হয়? বহুল আলোচিত আর বিতর্কিত ১০ টাকা কেজি? কেউ বলতে পারে, পাঁচ টাকা হলে ভালো হয়। কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে বলতে পারে, সবচেয়ে ন্যায্য দাম হবে বিনা পয়সায় চাল দেওয়া, বিশেষত গরিব মানুষকে। এদিকে, একজন চাষি বলতে পারেন, আমার তো এক কেজি চাল উৎপাদন করতে খরচই পড়ে যায় ২০ টাকার মতো। আমি তো কোনোমতেই এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারব না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ন্যায্য দামের দাবি চটজলদি করা যায়, কিন্তু ন্যায্য দামটা কত হবে জিজ্ঞেস করলে অনেকেই বিপদে পড়ে যাবেন।
অর্থনীতির পরিভাষায়, একটি বাজার যদি যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিযোগিতামূলক হয়, তাহলে কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনে মিলে একটি জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করেন। কখনোই একজন বিক্রেতার হাতে অসীম ক্ষমতা থাকে না মূল্য নির্ধারণের। সত্যি কথা বলতে কি, প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতিতে বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন ক্ষমতাই নেই।
আপনি যদি গত পাঁচ বছরের পেঁয়াজের খুচরা মূল্য লেখচিত্রে দেখেন, তাহলে দেখা যাবে, বছরের মাঝামাঝি বা তার পর থেকে (যা রমজানের আগের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়) দাম বাড়ছে এবং বছরের শেষ ভাগ পর্যন্ত দাম কমছে না (যেটি ঈদুল আজহা পর্যন্ত বিস্তৃত)। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো উৎসবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যে এই একই ধারা দেখা যেতে পারে। এর কারণ আর কিছুই নয়, উৎসবের সময়গুলোতে এসব পণ্যের বর্ধিত চাহিদা।
আমি কিন্তু মনে করছি না যে ব্যবসায়ীরা ধোয়া তুলসীপাতার মতো পবিত্র—তাঁরা কখনো কোনো অন্যায় করেন না। ব্যবসায়ীরা অবশ্যই কারসাজি করে দাম বাড়াতে পারেন, তাঁরা অনেক সময় এটা করেনও। বিশেষ করে, যেসব পণ্যের বিক্রেতার সংখ্যা অনেক কম, সেখানে এই কারসাজি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের অভিযুক্ত করতে হবে। অনেক দেশেই এ-সংক্রান্ত আইনে পরিষ্কার বলা আছে, ব্যবসায়ীদের কী ধরনের কৌশল (অবশ্যই প্রমাণ সাপেক্ষে) প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিপন্থী এবং এ জন্য কী ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত।
সবচেয়ে বড় কথা, রমজান মাসের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, রমজান মাসে টিভি-রেডিওতে যতই বয়ান করে সংযমের কথা বলা হোক না কেন, এ মাসটিতেই আমরা চরম অসংযমের পরিচয় দিই। এটাকে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, একটা খাদ্য-উৎসবের মাস। দিনের বেলায় অভুক্ত থেকে আমরা আমাদের যাবতীয় ক্ষুধা-পিপাসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি ইফতারের টেবিলে। বাজারমূল্য আমাদের এই আচরণের জ্বলন্ত সাক্ষী। কিন্তু আমরা তা বুঝি না বা বুঝতেও চাই না। আমরা নির্দ্বিধায় ব্যবসায়ীদের ওপর আমাদের এই অসংযমের দায়ভার চাপিয়ে থাকি। রমজান মাসে জিনিসপত্র অন্যান্য সময়ের মতো দামেই যদি আমরা পেতে চাই এবং যদি সরবরাহের তেমন কোনো ঘাটতি না থাকে, তাহলে আমাদের নিজেদের একটু সংযত করতে হবে। তাহলে বাজারে চাহিদার বৃদ্ধি ঘটবে না, ব্যবসায়ীদের মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হবে না এবং জিনিসপত্রের দাম রমজান মাসে বাড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে। মুখে সংযমের কথা বলে ইফতারের সময় ভূরিভোজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর যা-ই হোক, খাদ্যদ্রব্যের দাম কমিয়ে রাখা যাবে না।
ড. রুশাদ ফরিদী: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
rushad@econdu.ac.bd প্রথম আলো

Tuesday, July 26, 2011

সূচক কমলেও ৮৬২ কোটি টাকার লেনদেন

দ্বিতীয় ঘণ্টার লেনদেন শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮৬২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে সূচক কিছুটা কমলেও বেড়েছে শতাধিক শেয়ারের দাম।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আজ ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। বেলা ১১টা পাঁচ মিনিটে সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। প্রথম ঘণ্টা শেষে ডিএসইতে সূচক কিছুটা বাড়লেও বেলা একটায় সূচক ১৪.৭৪ পয়েন্ট কমে ৬,৬৮১.৬৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
এ সময় লেনদেন হওয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ১২১টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
এখন পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে তিতাস গ্যাস, আরএন স্পিনিং, এনবিএল, গ্রামীণফোন, কেয়া কসমেটিকস, সামিট পাওয়ার, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, এমআই সিমেন্ট, ওয়ান ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
অন্যদিকে বেলা একটায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৩৬.৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ১২,৩২৬.৩৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময় লেনদেন হওয়া ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ১১২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৮৯ কোটি টাকার।প্রথম আলো

 চায়ের নিলাম বাজার প্রথমবার ক্রেতাশূন্য

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো ‘চায়ের নিলাম বাজার’ আজ মঙ্গলবার ছিল ক্রেতাশূন্য। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এ বাজারে প্রথমবারের মতো কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। সরকার নিলাম মূল্যের ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর আরোপ করার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা চা কেনা বন্ধ রাখেন। এতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
নিলাম বাজার সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সারা দেশের চায়ের নিলাম হয় চট্টগ্রামে। প্রতি নিলামে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়।
জানা গেছে, আগের নিয়মে ক্রেতাদের ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ২ শতাংশ পাইকারি মূল্য কর দিতে হতো। সে হিসেবে প্রতি নিলাম মূল্যে চা কেনার পর ক্রেতাদের ১৭ শতাংশ কর দিতে হয়। নতুন করে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর আরোপের ফলে এ কর দাঁড়াবে ২২ শতাংশে। আগের নিয়মে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার চা বিক্রি হলে সরকার প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেত। আজকে নিলাম বন্ধ থাকায় সরকার এ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো।
বাংলাদেশে চা বাগান আছে ১৬৪টি। এসব বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ছয় কোটি কেজি চা উত্পাদন হয়। বাগান মালিকেরা তাঁদের নির্ধারিত প্রতিনিধির (ব্রোকার হাউস) মাধ্যমে নিলাম বাজারে চা বিক্রি করে থাকেন।
নিলাম বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এভাবে নিলাম বাজারে ক্রেতা পাওয়া না গেলে প্রত্যক্ষভাবে চা বাগান মালিক এবং পরোক্ষভাবে দেশের চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউছুফ নিলাম বাজারে কোনো চা বিক্রি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই চট্টগ্রামের নিলাম বাজারে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার চা বিক্রি হয়ে আসছে। সরকারের অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে আজ নিলাম বাজারে চা কেনাবেচা হয়নি। প্রথম আলো

বাজারে ফিরে এসেছে চিনি

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া ব্যবসায়ীদের আশ্বাসের পর বাজারে ফিরে এসেছে চিনি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দর ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে কিছু দোকানে এখনো ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে ছোলা, খেজুর, মুড়ি ও গুড়ের বাজার এখনো চড়া। তবে চাল, ডাল, মটরের (ডাবলি) দাম তেমন একটা বাড়েনি। কয়েক দিন ধরে এ পণ্যগুলোর দাম ব্যবসায়ীরা এতটাই বাড়িয়েছেন যে এখন নতুন করে আর বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। তার চেয়ে বর্তমান দামটিই ধরে রাখার কৌশল নিচ্ছেন তাঁরা।
এ ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়ো দুধের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মুরগির দাম কিছু কমেছে। আর গরু ও খাসির মাংসের দর বেঁধে দিলেও এখনো তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সরকার-নির্ধারিত দরে চিনি: গত বুধবার চিনির দর বেঁধে দেওয়ার পর বাজার থেকে উধাও ছিল চিনি। সেই চিনির দেখা মিলেছে গতকাল সোমবার। যেসব দোকানে চিনি ছিল, গতকাল সেগুলোয় বিক্রি হয়েছে সরকার-নির্ধারিত ৬৫ টাকা দরে।
সকালে পলাশী বাজারে গিয়ে বেশির ভাগ দোকানে চিনির দেখা মেলে। কয়েকজন দোকানি জানান, পাইকারি বাজার থেকে ঠিকমতো সরবরাহ করায় তাঁরা এখন চিনি আনতে পারছেন। এ কারণে ৬৫ টাকায় বিক্রিও করতে পারছেন।
তবে পলাশী বাজারেরই কয়েকটি দোকানে ৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারণ জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, এ কয়দিন ৭০ টাকায় পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনেছেন। এ দামে বিক্রি করেই তাঁদের লোকসান হচ্ছে। ৬৫ টাকায় এ চিনি বিক্রি করা সম্ভব নয়। তবে দু-এক দিনের মধ্যেই ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করবেন বলে তাঁরা জানান।
হাতিরপুল বাজারের ভেতর ও বাইরে, পূর্ব তেজতুরী বাজার এবং পল্টনের বিভিন্ন দোকানেও ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গতকাল দুপুরে নয়াবাজারের অধিকাংশ দোকানে চিনি পাওয়া যায়নি। তিনটি দোকানে চিনি থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দাম চাওয়া হয়। এক দোকানি এইমাত্র চিনি এসেছে বলে জানান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, এখন থেকে ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করবেন।
গত কয়েক দিনের চিনিশূন্য কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতেও গতকাল দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রায় সব দোকানেই চিনি বিক্রি হচ্ছে। দোকানি মাসুদ রানা বলেন, ‘এত দিন বাজারে চিনি ছিল না। আমরা কিনতে গিয়েও পাইনি। গতকাল (রোববার) বাজারে দু-তিন হাজার বস্তা চিনি এসেছে। এ কারণে সব দোকানে এখন চিনি আছে।’
খোলা সয়াবিন এখনো কম: নয়াবাজারের বেশির ভাগ দোকান ঘুরে খোলা সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি। একই অবস্থা পলাশী ও হাতিরপুল বাজারেও। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত। তবে কারওয়ান বাজারে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে এবং বিক্রিও হচ্ছে সরকার-নির্ধারিত দাম ১০৯ টাকায়।
খুচরা দোকানগুলোয় বেশি বিক্রি হচ্ছে বোতল ও প্যাকেটজাত তেল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।
চালের দর খুচরায় বেশি: পাইকারি বাজারে গত কয়েক দিনে চালের দাম বাড়েনি। তবে খুচরা বিক্রেতারা চাল বিক্রি করছেন বেশি দামে। এক সপ্তাহে কোনো কোনো চালের দাম দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে মোটা চালের দাম গতকাল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা দেখানো হলেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। নয়াবাজার কাঁচাবাজারে বিআর-২৮ চাল ৩৮ থেকে ৪০, নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজার ও পলাশী বাজারে দর ছিল নাজিরশাইল ৫২, মিনিকেট ৪৪ থেকে ৪৬, পারিজা ৪০ ও পাইজাম ৩৮ থেকে ৪২ টাকা।
ছোলার দাম চড়ছেই: সাধারণ মানুষ যে ছোলাটা কেনে, রাজধানীর খুচরা দোকানগুলোয় তা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর উন্নত মানের ছোলার দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, ছোলার দাম কমেছে। রাজধানীর রহমতগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে সাধারণ ছোলা ৫৮ থেকে ৬০ এবং উন্নত মানের ছোলা সর্বোচ্চ ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই ধরনের ছোলাতেই দাম কমেছে দুই টাকা।
এ ছাড়া খুচরা দোকানে দেশি মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫, বিদেশি ডাল ৭৫ থেকে ৮০ এবং মুগ ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খেজুরের বাজার গরম: রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও দোকানে চড়া দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। বাংলা খেজুর ৬০, মরিচা ১০০ থেকে ১২০, নাগা ১১০ থেকে ১২০, বড়ই ১৭০ থেকে ১৮০ ও মরিয়ম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত খেজুরের দাম আরও চড়া।
বেড়েছে গুঁড়ো দুধের দাম: গত এক সপ্তাহে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। দোকানিরা জানান, এক কেজির প্যাকেটের মার্কস দুধের দাম ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৪০, ফ্রেশ ৪১৫ থেকে ৪২৫, ডিপ্লোমা ৪৯০ থেকে ৫১০ টাকা হয়েছে।
মাংস ও মুরগি: ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংস ২৭০ এবং বিদেশি গরুর মাংস ২৫০, মহিষের মাংস ২৪০, খাসির মাংস ৪০০, বকরি ও ভেড়ার মাংস ৩৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে গতকাল গরুর মাংস ২৭০ ও খাসির মাংস ৪২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম ছিল ২৭০ ও ৪০০ টাকা।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। কারওয়ান বাজারে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। নয়াবাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজিতে। আর দুই বাজারেই দেশি মুরগির দর ছিল যথাক্রমে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
ডিসিসিকে চিঠি: রাজধানীর সব দোকানে দৃশ্যমান স্থানে নিত্যপণ্যের মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশ দিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) গতকাল চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে খুচরা দোকানিরা ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা করতে পারবেন না।
আমাদের চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে গতকাল চিনির সরবরাহ বেড়েছে। এস আলম গ্রুপ উৎ পাদন শুরুর পর ২৪০ জন পরিবেশকের মাধ্যমে চিনি সরবরাহ করছে। গতকাল থেকে ব্যবসায়ী গ্রুপটি পাঁচটি স্থানে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি শুরু করেছে। এ পাঁচ স্থানে ৬৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে। তবে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সরকারি দরের চেয়ে লিটারপ্রতি দুই টাকা কমে অর্থাৎ ১০৭ টাকায়।
এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মীর মইনুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে ন্যায্যমূল্যের কেন্দ্রের সংখ্যা ২০-২৫টিতে উন্নীত করা হবে।
এ ছাড়া বিএসএম গ্রুপ ১৪ জন পরিবেশকের মাধ্যমে গতকাল থেকে ছয় টন করে চিনি সরবরাহ করছে। পরিবেশকদের কাছে এই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়। পরিবেশকেরা খুচরা বিক্রেতাদের কেজিপ্রতি ৬৩ টাকায় চিনি সরবরাহ করবেন। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার থেকে ৫৫ টাকায় ছোলাও বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাজারে এখন আগের চেয়ে চিনির সরবরাহ বেশি। এ কারণে চিনির দামে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে চিনি কিনতে পারায় চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজারের নির্দিষ্ট কয়েকটি দোকানে সরকার-নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে। কাজীর দেউড়ি বাজারের খান ডিপার্টমেন্ট স্টোর গতকাল ৬৪ টাকায় তিন বস্তা চিনি কিনে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।
আবার বেশি দামে কেনা খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনো ৬৮-৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন। কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের রাকিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরের পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো সরকারি দামে চিনি কিনতে পারিনি। এ কারণে এই বাজারে ৬৮-৭০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে।’

Monday, July 25, 2011

 ডিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় ৬০৭ কোটি টাকার লেনদেন

প্রথম ঘণ্টা শেষে আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে সূচক বেড়েছে, বেড়েছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম আলো
আজ দুপুর ১২টার দিকে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ২৭.৯৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬৭৩৮.৪৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময় লেনদেন হওয়া ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৫৫টির, কমেছে ৭৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে লেনদেনের ছয় মিনিটের দিকে সূচক ৪৭ পয়েন্ট বাড়ে। এরপর সূচক বাড়ার হার কমতে থাকে। ২২ মিনিটের দিকে সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। তবে প্রথম ঘণ্টায় সূচক গতকালের চেয়ে কমেনি।
এ সময় লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে—আরএন স্পিনিং, পিএলএফএসএল, বেক্সিমকো, বেক্সটেক্স, মালেক স্পিনিং, তিতাস গ্যাস, ম্যাকসন স্পিনিং, গ্রামীণফোন, আফতাব অটো ও কেয়া কসমেটিকস।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিএসইতে সিএসসিএক্স সূচক ২১.১০ পয়েন্ট বেড়ে ১২,৩৫৯.৫৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময়ে লেনদেন হওয়া ১৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৮৫টির, কমেছে ৭২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে আবার আশ্বাস

বাজার থেকে চিনি উধাও করার চার দিন পর ব্যবসায়ীরা জানালেন, এখন থেকে চিনি পাওয়া যাবে। এমনকি প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়ানোর পর ব্যবসায়ীরা আরও আশ্বাস দিলেন, রমজান মাসে বাজারদর স্থিতিশীল থাকবে।
চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার চরম অস্থির থাকার পর গতকাল রোববার ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সকালে বৈঠক করেছে ট্যারিফ কমিশন। বিকেলে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া হাইকোর্ট গতকাল চিনি ও সয়াবিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে সাতজন ডিও ব্যবসায়ীর নামে মামলা করার সুপারিশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘আপনারা তো এক মাস আগেই কথা দিয়ে গেলেন যে রমজানে পণ্যমূল্য বাড়াবেন না। হঠা ৎ চিনির দাম বাড়িয়ে দিলেন কেন?’ জবাবে ব্যবসায়ীরা কারখানা বন্ধ থাকাসহ তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, কিছু সমস্যার কারণে চিনির ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হলেও তা কেটে গেছে। রমজানেও পণ্যমূল্য আর বাড়বে না।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চিনি ও ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা মালিকদের পাশাপাশি চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ‘ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল ও চিনির কোনো সংকট নেই, আগামী দিনেও কোনো সংকট থাকবে না। শুধু ঢাকায় চিনির ক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহের একটু সমস্যা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ রকম হবে না।’
ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ডিলার ও পরিবেশক পদ্ধতির মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। যে এলাকায় পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য এলাকায় পণ্য বিতরণ করা যায় না। এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবেশকেরা নিজ এলাকায় পণ্য সরবরাহ করে উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য এলাকায়ও সরবরাহ করতে পারবেন।’
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে চারটি চিনি পরিশোধন কারখানা বন্ধ থাকা, হরতাল ইত্যাদি কারণ তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এখনো চান না পরিবেশক পদ্ধতিটি হোক। কিন্তু এটি করা হবেই।
আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, চিনির দর কাল থেকেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মিলগেটে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরেই চিনি সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানিয়ে এসেছেন তাঁরা।
ডিও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল অত্যাবশ্যকীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে সাতজন ডিও ব্যবসায়ীর নামে মামলা করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া দেশের সব ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধন কারখানা মালিকদের পরিবেশক পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে চালুর জন্য আবারও নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নির্দেশে বলা হয়েছে, পণ্য বিপণন আদেশ ২০১১ অনুযায়ী ডিও প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চিনি ও ভোজ্যতেল বর্তমানে শুধু পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমেই বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। তিন মাসের সময় দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০ জুন। ডিও প্রথা বিলুপ্তির আগে অনেকে যেসব ডিও ইস্যু করেছিল, সে পণ্যও পরিবেশকের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে চিনির মজুদ রয়েছে এক লাখ দুই হাজার টন। আরও দুই লাখ ৩৭ হাজার টন চিনি দেশে এসে পৌঁছাবে রমজানের মধ্যে। অন্যদিকে, ভোজ্যতেলের মজুদ এক লাখ ৩১ হাজার টন। আর, দেশে এসে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও তিন লাখ ৩৭ হাজার টন।
ট্যারিফ কমিশনে বৈঠক: চিনির দর, সরবরাহের সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশক পদ্ধতি চালুর বিষয়ে পরিশোধন কারখানা মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন।
বৈঠক শেষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সরকার-নির্ধারিত ৬৫ টাকা কেজি দরেই চিনি বিক্রি করতে হবে। গত কয়েক দিন কারখানার মালিকেরা রাজধানীতে কম সরবরাহ করে বেশি সরবরাহ করেছেন রাজধানীর বাইরে। তাই চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, চালান প্রথা (ডিও) থেকে পরিবেশক পদ্ধতিতে উত্তরণের প্রক্রিয়াতে কিছু সময় লাগছে। এ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে কোনো কোনো ব্যবসায়ীর অনীহা রয়েছে। ফলে এক ধরনের অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। দর বাড়ার পেছনে এটাও একটা কারণ বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, পরিশোধন কারখানা থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। এখন সরবরাহ ঠিক হয়েছে। সোমবার থেকেই পাইকারি বাজারে তাঁরা নির্ধারিত দর অর্থা ৎ ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করবেন।
সরবরাহের নানা আশ্বাস: এদিকে, দেশে চিনির মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।
গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএফআইসির পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংস্থার গুদামে বর্তমানে ৫০ হাজার টন চিনি মজুদ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিএসএফআইসির নির্ধারিত ডিলারদের মধ্যে ১০ হাজার টন চিনি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, চলতি মাসে দেওয়া হবে আরও ১০ হাজার টন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ২০ হাজার টন চিনি জাহাজীকরণের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগির এ চিনি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজার থেকেও কেনা হবে ২০ হাজার টন চিনি। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে কেনা পাঁচ হাজার ৮১৩ টন চিনি এরই মধ্যে বিএসএফআইসির গুদামে গুদামজাত করা হয়েছে।
এদিকে, দেশবন্ধু চিনিকল কর্তৃপক্ষ গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুলভ মূল্যে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে তারা। প্রতি কেজি ৬৫ টাকা করে পরিবেশকদের মাধ্যমে মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরায় চিনি বিক্রি করা হবে।
চার কর্মকর্তা তলব: চিনি ও সয়াবিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভূমিকা জানাতে টিসিবির চেয়ারম্যানসহ চার কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে।
গতকাল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্পূরক এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন ও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন। এরপর ওই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নিষ্ক্রিয়তা ও আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল না করায় এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গতকাল সম্পূরক আবেদনটি করা হয়।
আদালতের নির্দেশনায় সরকার-নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে কেউ যেন সয়াবিন তেল ও চিনি বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য সাধারণ ও পাইকারি বাজারগুলো তদারক করতে বাণিজ্য ও খাদ্যসচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা ৎ ক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিতের কথাও রয়েছে নির্দেশনায়। অবৈধভাবে মজুদ করে কেউ যেন বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন, এ বিষয়টি তদারক করতেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক (আমদানি-রপ্তানি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৯ আগস্ট হাজির হতে বলা হয়।  প্রথম আলো

 ডিএসইতে লেনদেন বেড়েই চলছে

আগের দিনগুলোর ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববারও দেশের শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার।
অন্যান্য খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের দর কমলেও ব্যাংকিং খাতের চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত এ খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে লেনদেনের ওপরে। ডিএসইতে গতকাল এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি সময়কালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ধসের পর বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে প্রবল তারল্য-সংকট বিরাজ করছিল। ইতিমধ্যে এই সংকট অনেকাংশে কমেছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় লেনদেন বেড়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগও লেনদেন বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
শাকিল রিজভী বলেন, বাজার বাড়তে থাকলে সবাই আসে। আবার কমতে থাকলে সবাই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত ছিল। তাহলে বাজারও স্বাভাবিক আচরণ করত।
ডিএসইর সভাপতি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন শেয়ার সরবরাহ দরকার। আর এ জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গতকাল দিন শেষে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭১০ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ১৮৭ পয়েন্ট হয়েছে। সিএসইতে হাতবদল হয়েছে ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর মধ্যে বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল ১৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো, আফতাব অটোমোবাইলস, আরএন স্পিনিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা ও এমজেএল বিডি। প্রথম আলো

Sunday, July 24, 2011

এত চিনি গেল কোথায়?

চট্টগ্রাম বন্দরে এক সপ্তাহ আগে এমভি পিলিয়ন জাহাজ থেকে খালাস হয়েছে সিটি গ্রুপের ৫২ হাজার ৪০০ টন অপরিশোধিত চিনি।
দেশবন্ধু ও আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের আমদানি করা ৫৩ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি খালাস করে নেওয়া হচ্ছে পরিশোধন কারখানায়।
রোজার আগ মুহূর্তে এই তিন কোম্পানিই এনেছে এক লাখ পাঁচ হাজার টন চিনি।
অন্যদিকে ক্ষমতা বাড়ানোর পর দুই দিন আগে থেকে উৎপাদন শুরু করেছে এস আলম রিফাইনারিও। এই কোম্পানির আগের ছয় থেকে সাত হাজার টনের অপরিশোধিত চিনির মজুদ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হাতে আছে ৫৩ হাজার টন।
অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এখন এক লাখ ৬৩ হাজার টন চিনির মজুদ আছে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, এত চিনি কোথায় গেল?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রিফাইনারির ক্ষমতা বাড়ানোর কারণে এতদিন চিনি উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে দুই দিন আগে থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। পাইপলাইনে চিনি বন্দরে আসার পথে রয়েছে। ফলে রোজার সময় চিনির সংকট হবে না।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের শুরুতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চিনি আমদানি হয় সবচেয়ে কম। পরিশোধন কারখানার মালিকেরা এ সময় চিনি আমদানি করেননি।
এর আগে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বেশি চিনি আমদানি হওয়ায় সংকট প্রকট হয়নি। গত মার্চ মাস থেকে চিনি আমদানি শুরু হয়। গত চার মাসে (মার্চ থেকে জুন) চিনি আমদানি হয় চার লাখ ৪৫ হাজার ৪২৭ টন। এ মাসে এসেছে এক লাখ পাঁচ হাজার টন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সিটি গ্রুপের ৫২ হাজার ৪০০ টন চিনি খালাস করা হয়েছে। এসব চিনি এখন পরিশোধন করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
দেশবন্ধু সুগার রিফাইনারির আমদানি করা ২৭ হাজার টন চিনির মধ্যে খালাস হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫০ টন।
এ ছাড়া আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডেরও ২৬ হাজার টন চিনির মধ্যে ৪৫০ টন খালাস হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে এই দুটি জাহাজ থেকে কয়েক দিন চিনি খালাস করা যায়নি। তবে গতকাল শনিবার থেকে দুটি জাহাজ থেকে আবার চিনি খালাস শুরু হয়েছে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
কাস্টম হাউসের নথিপত্রে দেখা গেছে, সর্বশেষ চালানের এসব অপরিশোধিত চিনির দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫১ টাকায়।
যেমন, ব্রাজিল থেকে আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ২৬ হাজার টন চিনি আমদানি করেছে। এই চিনির কেজিপ্রতি দাম পড়েছে ৫০ টাকা ৮৬ পয়সা।
এই দামের সঙ্গে চিনি খালাসের নানা প্রক্রিয়ার খরচ এবং পরিশোধন খরচ মিলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা ধরা হলে খরচসহ প্রতি কেজি চিনির মূল্য পড়ে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা। খুচরা বাজারে এই চিনিই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭১ টাকায়।
চিনি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছয়টি চিনি পরিশোধন কারখানার মধ্যে চারটি বন্ধ থাকায় চিনির সরবরাহ কমে যায়। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে কম সরবরাহকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বন্ধ কারখানাগুলো চালু হচ্ছে। এতে অন্তত রোজার সময় সংকট হবে না বলে ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেছেন।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার চিনির দর ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৮ টাকা। এই দরে চিনি এনে ৬৫ টাকায় বিক্রি না করলে আবার তদারকি দলের মুখে পড়তে হবে। এ কারণে অনেকে চিনি কিনলেও ভয়ে বিক্রি করছেন না।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হাতে থাকা ৫৩ হাজার টন চিনি এখনই খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত। এতে চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে।প্রথম আলো

 ৪৫ টাকায় আমদানি করা ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের প্রতি কেজি ছোলার দাম পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। এই ছোলা চার হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি ছোলায় আমদানি মূল্যের চেয়ে খুচরা মূল্য ২৩-২৫ টাকা বেশি। মিয়ানমার থেকে ৫৮-৫৯ টাকায় কেনা ছোলাও বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকায়।
রোজার বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি স্তরেই বেশি মুনাফার কারণে ছোলার দামে এই অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নথিপত্রে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়া—এই তিন দেশ থেকেই ছোলা আমদানি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের ছোলার দাম পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ছোলার দাম সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ টাকা। ইথিওপিয়া থেকে আমদানি করা ছোলার দাম পড়ছে ৪৯ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৩ টাকা।
১৭ জুলাই আমদানিকারক চিটাগাং স্টোর ৪৫ টাকা ১৬ পয়সা দরে ৪৬৯ দশমিক ৩ টন ছোলা আমদানি করে অস্ট্রেলিয়া থেকে। প্রতি কেজি ছোলা খালাসে সব ধরনের খরচ তিন টাকা ধরা হলে আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৪৮ টাকা ১৬ পয়সা।
চিটাগাং স্টোরের আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ছোলা মণপ্রতি দুই হাজার ১০ টাকায় বিক্রি করেছি ডিও ব্যবসায়ী ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে।’ এই হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৫৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে আমদানিকারক লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ টাকা।
এই ছোলা ডিও ব্যবসায়ী ও ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও কর্ণফুলী মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা এই ছোলা বিক্রি করছেন ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়।
মিয়ানমার থেকে সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ টাকায় ছোলা কিনছেন আমদানিকারকেরা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা এই ছোলা কিনছেন কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ২২ পয়সায়।
কর্ণফুলী মার্কেটের খোকন স্টোরের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান মিয়ানমারের ছোলা কেজিপ্রতি বিক্রি করছেন ৭৮ টাকায়। দাম এত বেশি কেন, জানতে চাইলে তিনি রসিদ দেখিয়ে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে গত বুধবার মণপ্রতি দুই হাজার ৭৭০ টাকায় (কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ২২ পয়সা) এই ছোলা কিনেছি। দোকানে আনার খরচসহ কেজিপ্রতি দাম পড়েছে প্রায় ৭৬ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স তৈয়বীয়া স্টোরের মো. সোলায়মান জানান, গুদাম থেকে মালামাল পরিবহন ও খালাসের খরচ বেড়েছে। এসব খরচ যোগ করে প্রতি মণে ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করছি। দাম বাড়লে সব সময় আমরাই বিপদে পড়ি। অথচ আমদানিকারক থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে যাঁরা পণ্য কেনেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি মুনাফা করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে ছোলার চাহিদা ধরা হয় ন্যূনতম ৬০ হাজার টন। এই মাসের প্রথম ২০ দিনে ছোলা আমদানি হয়েছে নয় হাজার ১৬৯ টন। এর আগের তিন মাসে ছোলা আমদানি হয় ৩৯ হাজার টন। আগামী দুই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমার থেকেও বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

 চিনি নেই, গুড়ের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা

সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খোলাবাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খোলাবাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাদের প্রশ্নের জবাব এড়াতে দোকানি ‘চিনি নাই’ লিখে রেখেন। গতকাল ছবিটি রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো
বাজার থেকে চিনি এখনো উধাও। চিনির বিকল্প হিসেবে আছে গুড়। কিন্তু এখানেও ব্যবসায়ীদের কারসাজি। রাতারাতি গুড়ের দাম কেজিপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা। আর চিনি ও গুড়ের এই বাজারে সংকটে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
তিন দিন হয়ে গেলেও চিনির সংকট মেটেনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল শনিবার বাজারে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ভরসা এখন আজ রোববারের একটি বৈঠক। চিনিসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের বিকেলে বৈঠকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, চিনির মতোই অবস্থা খোলা সয়াবিন তেলের। বাজারে এটিও খুব একটা মিলছে না। তবে যেসব দোকানে খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, খুচরা দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০৯, পাম তেল ৯৯ ও চিনি ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়ার কথা। গত বুধবার সরকারি পর্যায়ে এই দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকেই চরম অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার।
গুড়ের দামও চড়া: বাজারে চিনির সংকট চলায় অনেক ক্রেতারই নজর ছিল গুড়ের দিকে। এই সুযোগে গুড়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারে গতকাল আখের গুড় ৭০ থেকে ৮০ ও খেজুরের গুড় ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাঁচ-ছয় দিন আগেও তাঁরা আখের গুড় ৬০ আর খেজুরের গুড় ৬৫ টাকায় বিক্রি করতেন।
হঠাৎ গুড়ের দাম কেন বাড়ল—জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. ছালেহ বলেন, ‘রাজশাহী ও নাটোরের পাইকারি বাজার থেকেই আমাদের গুড় কিনতে হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে আমাদের কী করার আছে।’ তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ, চিনির দাম বাড়ার কারণে সুযোগ বুঝে পাইকারি ব্যবসায়ীরা গুড়ের দাম বাড়িয়েছেন।
চিনির দেখা মেলা ভার: রাজধানীর পূর্ব তেজতুরী বাজারের চারটি দোকান ঘুরে গতকাল একটিতে চিনির দেখা মেলে। ক্রেতা সেজে দাম জানতে চাইলে দোকানি বললেন, কেজি ৭৫ টাকা। এত বেশি কেন? জবাবে তাঁর উত্তর, ‘যান, দেখেন এর কম দামে চিনি পান কি না।’
গতকালও কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকানগুলোতে চিনি দেখা যায়নি। দোকানিরা জানান, ক্রেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে নতুন করে চিনি আনেননি তাঁরা।
তবে কারওয়ান বাজার ঘুরে দুটি দোকানে দেশি চিনি দেখা গেছে। দেশি হলেও এই চিনির দাম কিন্তু কম নয়, পাক্কা ৭৫ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ীদের আশ্বাস: যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আশপাশে ৮০ হাজার টন চিনি রয়েছে। আরও সাড়ে তিন লাখ টন চিনি আসছে। শিগগিরই চিনির সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের ২৯০ জন পরিবেশককে ৬০ টাকা করে চিনি দিচ্ছি, যেন তারা সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করতে পারে। কাল থেকে সবাই হাতের নাগালে চিনি পাবেন।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশবন্ধু গতকাল মন্ত্রণালয়কে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি গতকাল রাজধানীতে তাদের নয়জন পরিবেশককে ১৬০ মেট্রিক টন চিনি সরবরাহ করেছে। চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ মন্ত্রণালয়কে বলেছে, তাদের ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি দেশে আসার অপেক্ষায় আছে। আরেক পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম বলেছে, চট্টগ্রামে তারা লালসালু টাঙিয়ে সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করবে।
চিনির অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকেই মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এর জন্য পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে আসছেন। তবে গোলাম মোস্তফা বলেন, মিলগেট থেকে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে কেন ওই চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি করা হবে? পরিবেশক-প্রথা যেন কার্যকর হতে না পারে সে জন্যই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ কাজ করছেন।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি দল গতকালও মৌলভীবাজারে অভিযান চালান। অভিযান শেষে আদালত পরিচালনাকারীরা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মুর্তজা রেজা চৌধুরীর কাছে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীরা আদালতকে বলেছেন, তাঁরা এখন থেকে সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করবেন। আর যেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা না হয়।
খোলা সয়াবিনও মিলছে না: রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। হাতিরপুল বাজারের দু-তিনটি দোকানে খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১১২ টাকা লিটারে। তবে কারওয়ান বাজারের অনেক দোকানেই খোলা সয়াবিন বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১২ টাকায়।
তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৫ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা: রাজধানীর মিরপুর, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জন খুচরা ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দুটি দল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তাঁরা ক্রেতাদের কাছে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছিলেন। পাশাপাশি কয়েকটি রেস্টুরেন্ট নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও বিতরণ করছিল।
অধিদপ্তরের দুই উপপরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ ও মো. মনিরুজ্জামান অভিযান পরিচালনাকারী দল দুটির নেতৃত্ব দেন।

দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রাথমিকভাবে আদমশুমারিতে যে সংখ্যাটি পাওয়া গেছে, তা থেকে সাধারণত প্রতি আদমশুমারিতেই পাঁচ-ছয় শতাংশ বেশি হয়। সে হিসেবে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২০-২৫ লাখ। তবে দেশের বাইরে আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি হবে।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাজেট বাস্তবায়ন’ সম্পর্কিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া রাজনৈতিক ইচ্ছার বিষয়। তবে আমার মনে হয়, নতুন ব্যাংক হলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে।’
পুঁজিবাজার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন বিধিবিধান হচ্ছে। শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোম্পানির শেয়ার আসার ব্যাপারে আমলাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বর্তমানে ডলারের যে দাম তা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেই আমদানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

ডিএসইতে ১৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ রোববারও লেনদেন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। গত বৃহস্পতিবারের মতো আজও লেনদেন বেড়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে। গত ডিসেম্বরে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস নামার পর আজকের লেনদেন সর্বোচ্চ। এ ছাড়া দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই সারা দিন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে ভয়াবহ ধসের পর বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে ভুগছিলেন। চলতি অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাজারে তারল্যসংকটও অনেকাংশে কমে গেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে ভয়াবহ ধসের পর বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে প্রবল তারল্যসংকট বিরাজ করছিল। এই সংকট অনেকাংশে কমেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় লেনদেনও বেড়েছে।
শাকিল রিজভী আরও বলেন, বাজার বাড়তে থাকলে সবাই আসে। আবার কমতে থাকলে সবাই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত ছিল। তাহলে বাজারও স্বাভাবিক আচরণ করত। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগও লেনদেন বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
এ অবস্থায় নতুন শেয়ার সরবরাহ করা দরকার বলে মনে করছেন ডিএসইর সভাপতি। নতুন শেয়ারবাজারে আনার ব্যাপারে ডিএসইর পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান শাকিল রিজভী।
আজ ডিএসইতে এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই হিসাবে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার এক হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা লেনদেন হয় ডিএসইতে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আজ দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৪৯.৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬৭১০.৫৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আজ ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের ১০ মিনিটের দিকে সূচক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। প্রথম ঘণ্টা শেষে সূচক কিছুটা কমলেও দ্বিতীয় ঘণ্টা শেষে আবার বাড়তে শুরু করে। বেলা একটায় দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ পয়েন্ট বেড়েছিল, যা দিন শেষে কিছুটা কমে যায়।
আজ লেনদেন হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে আজ লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো, আফতাব অটো, আরএন স্পিনিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা ও এমজেএল বিডি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক ৭১.৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯১৮৬.৭০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে আজ ১৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।প্রথম আলো

Wednesday, July 13, 2011

মুদ্রানীতির রাজনৈতিক অর্থনীতি

কটা ইংরেজি দৈনিকের সাম্প্রতিক সংখ্যার একটা প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পাশাপাশি একটা রক্ষণশীল রাজস্বনীতি অনুসরণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ সংকুচিত হয়ে প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়ে যেতে পারে বলেও সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। এই সতর্কবাণীর দুটো তাৎপর্য আছে: প্রথমত, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থবাজার, মুদ্রানীতি ইত্যকার বিষয়ে সরকারকে সুপরামর্শ দেওয়ার দায়িত্বটি পালন করছে; দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের অত্যধিক ঋণ গ্রহণ দেশের অর্থনীতিতে যে অনর্থ ঘটাতে পারে, সেই সত্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবাণীর মাধ্যমে পত্রিকা মারফত সাধারণ জনগণও জানতে পারছে।
সরকারের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবাণী কিংবা সুপরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমেরিকান অর্থনীতিবিদ মিলটন ফ্রিডম্যান (১৯১২-২০০৬) যথার্থই বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা বলতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সরকারের যে সম্পর্ক বোঝায়, তাকে তুলনা করা চলে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যকার সম্পর্কের সঙ্গে। ফ্রিডম্যান অবশ্য ব্যঙ্গ করে এ কথাও বলেছেন যে সুদূরতম সম্ভাবনায় স্বাধীন এমন কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি থেকেও থাকে, সেটি স্বাধীন থাকবে যদি সরকারের অন্য কোনো শাখার সঙ্গে তার বিরোধ না থাকে। যদি তেমন বিরোধ থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে রাজস্ব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপস করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কিংবা স্বায়ত্তশাসন নিয়ে এই গুরুগম্ভীর রচনায় সরকারের ঋণ গ্রহণসম্পর্কিত বিষয়টি সাধারণ পাঠকদের কাছে ব্যাখ্যা করা উচিত; কারণ সাধারণ মানুষের ধারণা, ঋণ গ্রহণ করে কেবল দরিদ্র মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। তাই সরকারের ঋণ গ্রহণের বিষয়টি অনেকের কাছে প্রশ্নসাপেক্ষ মনে হতে পারে। এর সঙ্গে ঘাটতি বাজেট প্রসঙ্গটিও সংগতভাবেই চলে আসবে এবং এই শব্দগুচ্ছও পত্রপত্রিকার কল্যাণে সাধারণ মানুষের কাছে খুব পরিচিত হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
ঘাটতি বাজেট বলতে কী বোঝায়, আমরা নিশ্চয়ই অনেকে জানি। যে বাজেটে সরকারের আয় থেকে ব্যয় বেশি ধরা হয়, তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। অন্যদিকে, যে বাজেটে সরকারি ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি ধরা হয়, সেটা হচ্ছে উদ্বৃত্ত বাজেট। সাধারণত অর্থনীতিতে মন্দাভাব থাকলে ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হয়, যাতে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়। বাজেটের এই ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারকে অভ্যন্তরীণ ঋণ, বিদেশি সাহায্য, বিদেশি ঋণ ইত্যাদি গ্রহণ করতে হয়। অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যাংক থেকে নেওয়া যেতে পারে, আবার জনগণের কাছ থেকেও নেওয়া হতে পারে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রচলিত পন্থা হচ্ছে ট্রেজারি বিল ইস্যু করে এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া। সরকারের পক্ষ হয়ে কাজটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে একেবারে সরাসরি স্বাভাবিক পন্থায়ও ঋণ নিতে পারে সরকার। যেমন সরকারের একটা খুব বড় খরচ যায় জ্বালানি তেল আমদানিতে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে তেল আমদানি করে আমদানি-উত্তর ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। আবার জনগণের কাছ থেকেও সরকার ঋণ নিতে পারে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে। আমাদের দেশে যে কয়েক ধরনের সরকারি সঞ্চয়পত্র চালু আছে, সেসব জনসাধারণের কাছে সঞ্চয়পত্র হলেও সরকারের জন্য একধরনের ঋণপত্র। এসব সঞ্চয়পত্র মানুষের কাছে বিভিন্ন মেয়াদে বিক্রি করে জনসাধারণের কাছ থেকে সরকার ঋণ গ্রহণ করে।
ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে, অর্থাৎ সরকারের অর্থের চাহিদা বেশি হলে বিভিন্ন সরকারি বন্ড বা সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার বাড়িয়ে দিতে হয়, যাতে ক্রেতারা বেশি পরিমাণে এসব কাগজ কিনতে উৎসাহী হয়। অতি সম্প্রতি এই সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এতে করে সরকারের সুদের খরচ বেড়ে যায়, আর এই সুদের খরচ মেটাতে গিয়ে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়ে, আর তার জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারকে কর ও শুল্কের হার বাড়াতে হয়। এতে করে আবার মানুষের সঞ্চয় ও ব্যয়সক্ষমতার ওপর চাপ পড়ে।
তবে চূড়ান্ত বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ ঋণের অর্থে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে বেগবান করতে পারে, যদি এই ব্যয় শিল্প ও অবকাঠামো স্থাপনের জন্য নির্বাহ করা হয়। যেমন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করলে অর্থনীতিতে সরবরাহব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে, প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির আরও একটা অর্থনৈতিক সুফল হচ্ছে, এর মাধ্যমে চাহিদার অভাবে মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতে মোট চাহিদা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিকে দ্রুততর করে, বেকারত্ব হ্রাস করে।
ঘাটতি বাজেটের আপাতত সুফলের বিপরীত চিত্রও আছে। সরকারের ঋণের বোঝা যত বাড়বে, তত বাড়বে তার সুদ বাবদ খরচ। অথচ এই সুদ বাবদ খরচটি যদি সরকারকে করতে না হয়, তাহলে সেই অর্থ ব্যয় করা যায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে। ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির আরেকটা নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে যে এসব ব্যয়ে সরকারের সহজাত অদক্ষতা ও অপচয়। এ কথা স্বীকৃত সত্য যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত সরকারি খাতের চেয়ে অনেক দক্ষ ও সাশ্রয়ী। তাই ঋণ নিয়ে সরকারি বিনিয়োগে এই খাতের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে বিশাল অঙ্কের অর্থ প্রকৃত বিনিয়োগের বাইরে থেকে যায়।
ঘাটতি বাজেটে সরকারের ব্যয় বেশি হয় বলে একটা মুদ্রাস্ফীতিপ্রবণ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাত্ত্বিকভাবেও মন্দাকালীন নিদান হচ্ছে, ঘাটতি বাজেট আর মুদ্রাস্ফীতির সময়ের জন্য দরকার উদ্বৃত্ত বাজেট।
এখানে একটা বিষয়ে মানুষের মনে কৌতূহল জাগতে পারে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে রাখার জন্য এত সমালোচনার মুখোমুখি হয়েও মুদ্রা সংকোচননীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে, তখন সরকার বিশাল ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিপরীত কাজ করছে কেন?
ঠিক এই প্রশ্নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি উঠে আসে। প্রথম আলোয় অতিসম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায় যে রাজনৈতিক চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনেকাংশে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অথচ অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এত গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এ কে এন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের বহু পরিমাপ আছে, যথা: এটি সরকারকে ঋণ দিতে অস্বীকার করতে পারে কি না, সরকারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে এটি নিজস্ব ব্যয় নির্বাহ করতে পারে কি না, এটির পরিচালনা পর্ষদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কি না, গভর্নর স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি অনুসরণ করে চলতে পারে কি না ইত্যাদি। এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হচ্ছে, এটি সরকারকে ঋণ দিতে অস্বীকার করতে পারে কি না। শুরুতেই ইংরেজি দৈনিকের বরাত দিয়ে যা বলা হয়েছিল, তার পরবর্তী প্রতিবেদনে প্রকাশিত খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা সম্পর্কে সেই আশাবাদ আর অবশিষ্ট থাকে না। কারণ সরকারি ব্যয় এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো স্বাধীন ভূমিকা না থাকে, তাহলে দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা হয়ে পড়বে অদক্ষ এবং ভেঙে পড়বে মূল্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। মূল্যস্তর স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে যে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়, সেটি একদিকে যেমন টেকনিক্যাল, অন্যদিকে স্পর্শকাতরও বটে। তাই এটিকে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া নিরাপদ। এবং সরকারের উচিত এই বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করা। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দক্ষতা ও বিচক্ষণতা শেষাবধি সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থানকেই সুদৃঢ় করে।
কিছুদিন আগে পত্রিকার আরেকটি খবরে জানা যায় যে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার কিছুদিনের মধ্যে নতুন ব্যাংকের জন্য দরখাস্ত গ্রহণ করবে। অথচ আইন অনুযায়ী নতুন ব্যাংক স্থাপনের জন্য অনুমতি দেওয়ার কাজটি একান্তভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারাধীন, এখানে সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই। আমাদের দেশের মতো একটা ছোট অর্থনীতিতে অর্ধশতাধিক ব্যাংকের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও আরও নতুন ব্যাংক খোলার যৌক্তিকতা আছে কি না, সেটা বিচারের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই থাকা উচিত। এটিকে রাজনৈতিকভাবে চালনা করা বাঞ্ছনীয় নয়। 
এ কে এন আহমেদ লেখেন, ১৯৭৫-এর আগের সরকারের সময় তাঁর সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ আস্থা নিয়ে কাজ করার। সেই আস্থা এবং স্বাধীনতার কারণে ছয় থেকে আট মাস সময়ের মধ্যে টাকার বিনিময় মূল্য পরিবর্তন, ৫০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা, ঋণ সংকোচন, সরকারকে সীমাহীন ঋণদানে অস্বীকার, লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ বন্ধ করা—এগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই বোঝা যায় যে রাজনৈতিক বা সরকারের উচ্চতম পর্যায়ের সমর্থন না পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে দেশের ওয়ার‌্যান্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরের অবস্থান কোথায়। নেহরুর জবাব ছিল, রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর। তাঁর এই জবাবেই বলে দেওয়া হয়েছিল, গভর্নরের অবস্থানটি কত স্বতন্ত্র এবং অনন্যসাধারণ।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা যে মূল্যস্তর বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র নিয়ামক—এটাকে স্বতঃসিদ্ধ মনে করার কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির আইনগত স্বাধীনতার ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও অগ্রহণযোগ্য। আমাদের মতো রাজনীতিপ্রবণ দেশে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্তিত্ব হয়তো অবাস্তব, কিন্তু একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান প্রত্যাশা করা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক নয়। 
ফারুক মঈনউদ্দীন: লেখক ও ব্যাংকার।

ফারুক মঈনউদ্দীন, প্রথম আলো

Tuesday, July 12, 2011

সবজিবাজারে আগুন

রাজধানীর কাঁচাবাজারে সত্যিই যে আগুন লেগেছে: তরিতরকারি ও শাকসবজির দাম এতটাই বেড়েছে যে নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। প্রথম আলোয় রোববার প্রকাশিত এক সরেজমিন প্রতিবেদন বলছে, কোনো কোনো সবজির দাম গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি বেড়েছে কুড়ি টাকা পর্যন্ত। এক কেজিতেই কুড়ি টাকা দাম বাড়লে বাজার ঠিক কী নিয়মে চলছে, এই প্রশ্নে দিশেহারা হতে হয়।
আলু, পটোল, বেগুন, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, টমেটো, পেঁয়াজ, শসা, গাজর, কাঁচামরিচ—এমন কোনো সবজি নেই, যার দাম বাড়েনি। সবজিভেদে দাম বৃদ্ধির পরিমাণ কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে কুড়ি টাকা পর্যন্ত। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই মূল্যবৃদ্ধি ভীষণ অস্বাভাবিক। তবে নিশ্চয়ই রহস্যময় নয়। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির খুচরা ব্যবসায়ীদের মুখে দাম বাড়ার ব্যাখ্যাগুলো এ রকম: (এক) কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে খেতের সবজি নষ্ট হয়েছে, অর্থাৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে; (দুই) বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ ছিল, ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় সবজি আসতে পারেনি; (৩) এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছিল, কিন্তু মজুদ অবস্থায় পচে নষ্ট হয়েছে অনেক সবজি। অর্থাৎ, চাহিদা স্বাভাবিক রয়েছে, কিন্তু উৎপাদন সরবরাহ কমে গেছে, ব্যাহত হয়েছে ভীষণভাবে। এ রকম অবস্থায় যা ঘটে, ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে ঠিক তা-ই ঘটেছে।
টানা বৃষ্টি ও টানা হরতাল—উভয় কারণই বোধগম্য বটে। কিন্তু তার মানে কি এই যে করলার মতো সবজির দাম এক সপ্তাহে এক কেজিতে কুড়ি টাকা বেড়ে যাবে? মূল্যবৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক উচ্চহার নিয়েই প্রশ্ন, বৃদ্ধির প্রকৃত হার কত, আর বৃষ্টি-হরতালের অজুহাত দেখিয়ে বাড়ানো হয়েছে কত? অভিন্ন কারণে যদি দাম বেড়ে থাকে, তাহলে এই রাজধানীতেই একেকটি কাঁচাবাজারে একই সবজির দামের হেরফের এত বেশি কেন? খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা উচিত।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি সংগ্রহের সময় সংঘবদ্ধভাবে কৃষকদের ঠকান, কৃষকেরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না। আবার রাজধানীর খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এসে সবজির দাম এতটাই বেড়ে যায় যে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কষ্ট হয়। উৎপাদক থেকে ভোক্তার মাঝখানে কৃষিপণ্যের দামের এই বিরাট ব্যবধান—এটা কী উপায়ে ঘটছে, সরকারের তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকারের আদৌ কোনো দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। কৃষকদের তরফ থেকে ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার নিরন্তর অভিযোগ, অন্যদিকে ভোক্তাদের দিক থেকে খাদ্যদ্রব্যের দাম ক্রমাগত বাড়ার অভিযোগের মাঝখানে যে মধ্যস্বত্বভোগীরা অনৈতিক পন্থায় অতিরিক্ত মুনাফা করছে, তাদের দমন করা দরকার।

ছয় বছরে দেশের পণ্য রপ্তানি আয় দ্বিগুণ

দেশে পণ্য রপ্তানি আয় ছয় বছরের মাথায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৯২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে রপ্তানি আয়ের মোট পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫২ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
আবার গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয় তার আগের ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৪১ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬২০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রাকেও উল্লেখযোগ্য হারে ছাড়িয়ে গেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য যেখানে বার্ষিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেখানে প্রকৃত রপ্তানি আয় তার চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি হয়েছে।
ইপিবির পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায়, আলোচ্য বছর রপ্তানি আয়ের শীর্ষে আছে নিট পোশাক রপ্তানি। এ সময় নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৪৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এ আয় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) অন্যতম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বিশ্বমন্দার সময় বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকেরা অনেক ক্ষেত্রে লোকসান দিয়ে হলেও নিয়মিত ক্রেতাদের ধরে রেখেছিলেন। মন্দা কাটিয়ে উন্নত বিশ্বে চাহিদা জোরদার হওয়ায় ক্রেতারা তাই বড় আকারে কার্যাদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হওয়ায় সেখানে শ্রমের মজুরি বেড়েছে। ফলে চীন থেকেও কিছু কার্যাদেশ বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হয়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘রপ্তানির এই গতিময়তা ধরে রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। তাই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকে।’
বিকেএমইএর সহসভাপতি এও বলেন, সরকারের কাছে তাঁদের প্রধান দাবি গ্যাস-বিদ্যুৎ তথা জ্বালানি সমস্যার উত্তরণ ঘটানো। না হলে উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে আর রপ্তানির গতিময়তা ধরে রাখা যাবে না।
রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় স্থানে আছে ওভেন পোশাক। ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮৪৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ বেশি।
পাট ও পাটজাত পণ্য দেশের রপ্তানি আয়ের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। আলোচ্য বছর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ১১১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪১ শতাংশ বেশি। তবে মোট আয় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১১১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার থেকে সামান্য নিচে রয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্যের মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, পাট-সুতা ও টোয়াইন থেকে ৫০ কোটি ডলার এবং পাটের থলে-ছালা থেকে ২০ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
এ ছাড়া ১০ কোটি ডলারের ওপরে কিন্তু ১০০ কোটি ডলারের নিচে রপ্তানি আয়—এমন পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হোম টেক্সটাইল (৭৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার), হিমায়িত খাদ্য (৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার) এবং পাদুকাসামগ্রী ও চামড়া (উভয়ই ২৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার)।

Sunday, July 10, 2011

ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী

Details
বাজারে ডলার সংকটে ডলারের দাম অস্থির হয়ে উঠছে। হঠাত্ করেই খোলা বাজারে চড়ে গেছে ডলারের দাম। বাজারে ডলারের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত সরবরাহ না করায় ডলার সংকট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি দামও অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাস্ফীতি ও কার্যকারিতা হারাবে। তবে বাজারে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং সূত্র জানায়, গেল সপ্তাহে ৭৪ টাকা ৫৬ পয়সা পর্যন্ত ডলারের দাম উঠে। তবে ব্যাংক ও গ্রাহকভেদে এর কিছুটা হেরফের হয়েছে। ডলারের দাম বাড়তে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেলিফোনে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও কখনো কখনো নিষ্ক্রীয় ভূমিকা পালন করে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার ফলে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৭৮ টাকা পর্যন্ত কার্ব মার্কেটে ডলারের লেনদেন হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ ৭১ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত ডলারের কেনাবেচা হয়। ডিসেম্বরেও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম ছিল কমবেশি ৭০ টাকা। এ সময়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭২ টাকা। ডলারের এ মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে তারল্য সংকটের মতই ডলার সংকট রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী ডলার বাজারে সরবরাহ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তানুযায়ী ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাধ্যতামূলক ভাবে রাখতে হচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতেও ডলারের জমা রাখা জরুরী। ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনাও কিনেছে। ফলে, অফিসিয়াল চ্যানেলে ডলারের সরবরাহ কিছুটা কম। এদিকে, রেমিটেন্স প্রবাহ আগামী দিনগুলোতে কমে আসার আশংকাও করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসুযোগ নষ্ট হওয়ায় এ আশংকা করা হচ্ছে। আবার ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণেও কেউ কেউ ডলারে বিনিয়োগ করেছে এমনটিও বলেছে কোন কোন সূত্র।
স্বাভাবিকভাবে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গত কয়েক মাস ধরেই চাহিদামত ডলার না পাওয়ায় ব্যাংকগুলোকে তৃতীয় মুদ্রায় এলসি খুলতে হচ্ছে। থার্ড কারেন্সি (ডলারের পরিবর্তে ইউরো বা পাউন্ড) কিনতেও বেশি দাম দিতে হয়। তাতে গড়ে ডলারের দাম বেড়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে অনেকেই নেতিবাচক দিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এর ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেশি হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভাসমান মুদ্রা বিনিময় হার চালু করলেও এখনো ডলারের মান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রেমিটেন্স ও রফতানিতে উত্সাহ যোগাতে অনেকটা পরিকল্পিতভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়ে রাখা হচ্ছে। যা আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন করতো। এখন সেটি অঘোষিতভাবেই করা হচ্ছে। প্রকৃত বিনিময় হার কার্যকর করা হলে টাকার মান বৃদ্ধি পেত। টাকার বিপরীতে ডলার দুর্বল হত। তাতে আমদানি পণ্যের দামও কম হতো।
ফিনান্সিয়াল ইকনোমিস্ট ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, এখন যেহেতু ডলার ছাড়াও অন্য মুদ্রায় আমদানি ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে, তাই ডলারের বাড়তি দাম ধরে রাখার কোন যুক্তি নেই। বরং টাকা ও ডলারের মূল্যমান প্রকৃত বাজারভিত্তিক করে দেয়াই উত্তম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৩ সালে মুদ্রার ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট বা ভাসমান বিনিময় হার বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে এটি করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আশংকা করছে, কার্যকর বিনিময় হার চালু থাকলে ডলারের দাম ৪/৫ টাকা কমে আসবে। কিন্তুু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতির কারণে ডলারের বাড়তি দাম অব্যাহত থাকলে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়ে যাবে। তাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাবে না। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিও কার্যকারিতা হারাবে।

 নতুন-পুরোনো বরাদ্দের চক্রে এডিপি

রেলওয়ে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হতে পারে এডিপির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রেলওয়ে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হতে পারে এডিপির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নিয়ে নানা ধরনের ফাঁকফোকর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বছর বছর এডিপির আকার বাড়ানো হয়। বড় আকারের এডিপি গ্রহণ করে ক্ষমতাসীনেরা বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আর আমলারা বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বেড়েছে।
আবার প্রতিবছর রাজনৈতিক বিবেচনায় বছরের শেষদিকে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। এতে পরবর্তী বছরের এডিপিতে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে হিমশিম খেতে হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ কমে আসে।
আবার বরাদ্দ কম দিয়ে নতুন প্রকল্প নিতে হয় বিভিন্ন পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে। এতে করে চলমান পুরোনো প্রকল্পেও পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া যায় না। ফলে বছর শেষে সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা কমে যায়, মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও বরাদ্দ দেওয়া সেসব প্রকল্পে। এভাবে প্রকল্প চলে বছরের বছরের পর। এক ধরনের চক্রের মধ্যে পড়ে যায় পুরো এডিপি ব্যবস্থাপনা।
এ নিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
সদ্য বিদায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার কমিয়ে ৩৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু বছরের মাঝখানে নতুন প্রকল্প ঢুকেছে ২৭০টি। আর এসব নতুন প্রকল্প পুরোনো চলমান প্রকল্প হিসেবে দেখিয়ে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৪৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা ১০৩৯। এর মধ্যে ‘নতুন’ প্রকল্প মাত্র ৭৭টি।
এভাবে প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করাকে ‘চালাকি’ ও ‘অর্থের অপচয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিচালক জায়েদ বখত। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রকল্পগুলো মূলত মন্ত্রী-এমপিদের চাপে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়। বছরের শেষদিকে এসে নেওয়া এসব প্রকল্পে তাড়াহুড়া করে অর্থ খরচ করতে গিয়ে কাজের গুণগত মান থাকে না, এটা অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।’
এভাবে বছরের পর বছর নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা তুলনামূলক কমছে। এসব ‘নতুন’ প্রকল্পে প্রতিবছর বরাদ্দ দিতে গিয়ে পুরোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ করা যাচ্ছে না। মেয়াদ বাড়িয়ে পুরোনো প্রকল্পগুলোতে আবার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের একটি চক্রের মধ্যে পড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।
আবার ঢাউস আকারের এডিপির বাস্তবতা হলো, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে মূল্য সমন্বয়। এই মূল্য সমন্বয় করতে গিয়ে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তাতে গুণগত কোনো পরিবর্তন হয় না।
এডিপির এই বিশৃঙ্খল অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল্য সংশোধনের বা সমন্বয়ের কারণে এডিপির আকার বাড়ে এটা সত্য। তবে প্রকৃত মূল্যেও এডিপির আকার বাড়ছে। এখানে সমস্যা হলো, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এডিপির আকার কমে এসেছে। এর মানে হলো, প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি ব্যয় হ্রাস পাচ্ছে। আর সরকারি ব্যয় কম হলে বেসরকারি বিনিয়োগও তুলনামূলক কম আকৃষ্ট হবে।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের ২৯ মে পর্যন্ত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী সেগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা চলতি অর্থবছরের এডিপির জন্য ৬৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু অর্থসংকটে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে জানান, প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফলে স্বভাবতই প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে।
ব্যয় বৃদ্ধির নমুনা: টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার পর্যন্ত ডবল রেলপথ নির্মাণে খরচ করা হবে দুই হাজার ৩৭ কোটি টাকা। আর ২০০৬ সালে একই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৭২০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শুরু করতে না পারায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। গত ২০ জুন ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প আবারও অনুমোদন দেওয়া হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)।
অনুমোদনের পর এ বিষয়ে পরিকল্পনাসচিব মনজুর হোসেন বলেছেন, ‘যখন প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়, তখন জিনিসপত্রের দাম অনেক কম ছিল। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগেছে। ততক্ষণে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়েছে। জমি অধিগ্রহণেও আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।’ প্রকল্পটির মেয়াদকাল বাড়িয়ে ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
এমন আরেকটি প্রকল্প হলো খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান নির্মাণ প্রকল্প। গত ২২ মার্চ একনেকে এক হাজার ৫৪২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে যখন প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন করা হয়, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮০৩ কোটি টাকা।
সমস্যা হলো, দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক অনুমোদন পেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির জন্য আনুষঙ্গিক সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। ফলে ২০১১ সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন নতুন করে ব্যয় নির্ধারণ করতে হয়েছে।
দুটি প্রকল্পই ২০০৬ সালে বাস্তবায়ন শুরু হলে ব্যয় বর্তমানের অর্ধেকেরও কম হতো। কিন্তু ২০১১ সালে এসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হচ্ছে। দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নেই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে।
এদিকে গত পাঁচ বছরে এডিপির আকারও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা, পরে সংশোধন করে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০০১১-১২ অর্থবছরে মূল এডিপির আয়তন ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে এডিপির আকার কমবেশি দ্বিগুণ হয়েছে।
মূলত এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার এক ধরনের কেনাকাটা করে। পাঁচ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ করে পূর্ত কাজের মূল উপাদান ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। বর্তমানে এক ট্রাক ইটের দাম ১৮-২০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে এক ট্রাক ইটের দাম ছিল ১২-১৩ হাজার টাকা। রডের দাম আলোচ্য সময়ে ওঠানামা করেছে। খুচরা পর্যায়ে এখন ভালোমানের এক টন রডের দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। উল্লেখযোগ্য হারে সিমেন্টের দামও বেড়েছে।
অথচ বিভিন্ন আমলের সরকার প্রতিবারই বড় এডিপি করে বাহবা নেয়। মন্ত্রী-এমপিরা চিৎকার করে গলা ফাটান উন্নয়নের জোয়ারে দেশকে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য। আর আমলারা দাবি করেন, ব্যয়ের সক্ষমতা বেড়েছে।
বাস্তবতা হলো, মূল্য সমন্বয়ের জন্যই এডিপির আকার বড় করতে হয়। পাঁচ বছর আগে সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকার এডিপিভুক্ত একই প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন করতে ৪৫-৪৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। ঠিকাদারও বর্ধিত মূল্য ধরেই দরপত্র জমা দেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণেও নানা জটিলতা রয়েছে। প্রকল্পের জন্য কোনো এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেই সেখানে জমির দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। এমনকি রাতারাতি কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসতভিটা দেখানো হয়। ভূমি অধিগ্রহণকালে ক্ষতিপূরণ বাবদ অনেক বেশি অর্থ প্রাক্কলন করতে হয়।
এ সম্পর্কে মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘একটি প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবনা তৈরির সময় ভূমির যে দাম নির্ধারণ করা হয়, অধিগ্রহণকালে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর অন্যতম উদাহরণ হলো, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প।’
জিডিপি-এডিপি অনুপাত: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এডিপির আকার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে না। চলতি মূল্যে হিসাব করে পাঁচ বছর আগে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে জিডিপির ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশই সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই অনুপাত ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
এভাবে সরকারি বিনিয়োগ কম হলে সরকার যে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়, তাও সেভাবে বাড়বে না। অথচ এই অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়েই বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা উৎপাদন বাড়ান, যা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে।

Thursday, July 7, 2011

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস

এস এম কৃষ্ণা এস এম কৃষ্ণা
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় ভারত। এরই অংশ হিসেবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে এ আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন। আর অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলেছেন। এদিকে সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও এস এম কৃষ্ণা জানিয়েছেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার হতে চায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য গতকাল দুপুরে ঢাকায় এসেছেন এস এম কৃষ্ণা। তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বিদ্যুৎ, বিনিয়োগ ও শুল্কবিষয়ক তিনটি চুক্তি সই হতে পারে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি অধিকতর সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। গতকাল বেলা একটায় ভারতীয় বিমান-বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে এস এম কৃষ্ণাকে অভ্যর্থনা জানান দীপু মনি। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। সন্ধ্যায় তিনি সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনা কমিশনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত ২০টি প্রকল্প ভারতের কাছে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ১২টি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। আমরা কথা বলেছি ট্রানজিট নিয়ে। আলোচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিও এসেছে।’
এস এম কৃষ্ণা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাঁকে জানিয়েছি, ঋণচুক্তির আওতায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ট্রানজিটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিণত করার যে বিষয়টি তোলেন, তাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপের অনুরোধ জানানো হলে তাতেও ইতিবাচক সাড়া দেয় ভারত। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে অসম বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে সহায়ক হয়, সেই ক্ষেত্রগুলোতে যেন ভারত বিনিয়োগ করে। বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে ভারতকে অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি ভারতের বাজারে আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুরোধে ভারত ইতিবাচক সাড়া দেয়।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রজিত মিত্তার ও দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক এ করিম উপস্থিত ছিলেন।
আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ সকাল ১০টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করবেন। এক ঘণ্টার আলোচনায় ২০১০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণা পর্যালোচনা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়।
সেপ্টেম্বরে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে সইয়ের জন্য বেশ কিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল চূড়ান্ত করতে দুই দেশের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এসব চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন এবং ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তর ও সীমানা চিহ্নিতকরণ। এ ছাড়া সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হচ্ছে ট্রানজিটের আওতায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার, যৌথ বিনিয়োগে খুলনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ভারতে বাংলাদেশের ৬১ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সুন্দরবনের বাঘ সুরক্ষাসংক্রান্ত চুক্তি ও প্রটোকল।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ও শুল্ক বন্দরসংক্রান্ত তিনটি চুক্তি ও প্রটোকল সই হতে পারে।
বিমানবন্দরে: ঢাকা নেমেই এস এম কৃষ্ণা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ সফরে আসতে পেরে তিনি বেশ সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও গভীর অংশীদারি চায়।
কৃষ্ণা বলেন, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের নেতৃত্ব বেশ কয়েকটি নতুন ও ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে উষ্ণতম সময় পার করছে।
দীপু মনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছি।’
সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সম্পাদকদের বলেছেন, তাঁর এ সফর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতির অংশ। তিনি জানান, ঢাকায় আসার আগে গত মঙ্গলবার তিনি মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি তাঁর আস্থা ও সহমর্মিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। কারণ, অনেক বিষয়েই বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে, মতপার্থক্য নেই। এস এম কৃষ্ণা গত বছরের জানুয়ারির পর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
সম্পাদকদের পক্ষ থেকে অভিমত দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যদি দ্রুত বাস্তবায়িত না হয়, তবে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরির অবকাশ থাকে। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে কেন? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০টি প্রকল্প তৈরি করেছে। এর মধ্যে দুই দেশের সম্মতিতে ১২টি অনুমোদিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আমলাতন্ত্র বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এস এম কৃষ্ণা বলেন, যেটাই হোক না কেন, ভারতের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে বদ্ধপরিকর। দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের পর অনেক কাজ হয়েছে। কারিগরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব কাজ হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগে।
শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে এস এম কৃষ্ণা বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইদানীং সীমান্তের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আমরা আরও উন্নত করতে চাই।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন মাহবুবুল আলম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মাহফুজ আনাম, গোলাম সারওয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন, আবেদ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী ও মতিউর রহমান।

Wednesday, July 6, 2011

২০১৩ সালের জুনের আগে তোলা যাবে না


সদ্য সমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৭৮ হাজার ৬৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সমপরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি আগের ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
শুধু তা-ই নয়, বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৯১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় আরও জানানো হয়, শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ করলে ২০১৩ সালের জুন মাসের আগে তোলা যাবে না। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করে আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে, মুনাফাও তোলা যাবে, কিন্তু সমপরিমাণ টাকা সব সময় বেনিফিশিয়ারি ওনার্সে (বিও) রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (বোর্ড প্রশাসন) জাহান আরা সিদ্দিকী, সদস্য (কাস্টমস প্রশাসন) ফরিদ উদ্দিন, সদস্য (কর প্রশাসন) বশিরউদ্দিন আহমেদ, প্রথম সচিব অপূর্বকান্তি দাস প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চলতি ১ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুবিধা কার্যকর হয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে কেউ এনবিআরের একটি নির্দিষ্ট ছক পূরণ করে এই সুবিধা নিতে পারবে। মেয়াদ শেষে ওই ব্যক্তি প্রদত্ত বার্ষিক আয়কর বিবরণী মিলিয়ে দেখা হবে।
এ ছাড়া কেউ যাতে কালোটাকা বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্থ তুলে নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখবে এনবিআর। শর্ত ভঙ্গ করলে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতে আরও জানানো হয়, শেয়ারবাজারে বৈধ অর্থ বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন। শুধু প্রাথমিক শেয়ারে বিনিয়োগ করলেই কর রেয়াত সুবিধা মিলবে। সেকেন্ডারি মার্কেটে বা দ্বিতীয় স্তরের বাজারে বিনিয়োগ করা হলে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। 
এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো কোনো সরকারি সংস্থা কালোটাকা সাদাকারীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যমান আইনানুযায়ী তা দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি সংস্থা কোনো করদাতার তথ্য জানতে চাইলে এনবিআর তা দিতে বাধ্য।
জানা গেছে, এখনো কালোটাকা সাদা করা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেনি এনবিআর। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়ে গেছে। বিজি প্রেসে প্রজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি: সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ খাতে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) মিলিয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৮৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধির হার ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই খাতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
স্থানীয় পর্যায়ে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, টার্নওভার ট্যাক্সসহ মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৬০২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। আর প্রবৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৭৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আয়কর ও ভ্রমণ করসহ মোট প্রত্যক্ষ কর আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আয়কর আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৮১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আয়করে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আয়কর আদায় হয়েছিল ১৭ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পর্কে নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত এটা এনবিআরের প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভালো কাজ করেছেন। এনবিআর থেকেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ নজরদারি ছিল। রাজস্ব আদায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরে ৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটীয় পদক্ষেপ দিয়ে এর বড় অংশ আদায় করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া করদাতাদের কর প্রদানে সচেতনতা বাড়াতে আয়কর ও মূসক মেলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমেও রাজস্ব আদায় বাড়বে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটা সম্ভব—এমন প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের চেয়ারম্যান জানান, ‘আশা করি রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে। এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বলে আশা করি। সবক্ষেত্রেই ঝুঁকি রয়েছে। এনবিআর এ ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি-ব্যবস্থা সম্পর্কে ফরিদ উদ্দিন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার মডেল অনুসরণ করে রাজস্বসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সরকারের বাড়তি অর্থ খরচ হবে না। এই নিষ্পত্তি ব্যবস্থার আওতায় পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করা হবে। এতে করদাতা ও কর আদায়কারীর মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে।

Tuesday, July 5, 2011

 কালো টাকা শেয়ারবাজারে দুই বছর রাখতে হবে



১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনিয়োগকৃত কালো টাকা শেয়ারবাজারে কমপক্ষে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত রাখতে হবে। এ দুই বছরের আগে শেয়ারবাজার থেকে এই অর্থ তুলে নেওয়া যাবে না। আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বৈধ টাকা প্রাথমিক শেয়ারে বিনিয়োগ করলেই শুধু ১০ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানানো হয়।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ জানান, সরকারি যেকোনো সংস্থা কালো টাকা সাদাকারীদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে আইন অনুযায়ী তা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 কাজ না করেই ১৩ প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ



বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের এসব প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে। তাঁরা কোথাও কোথাও নামে মাত্র এবং বেশ কয়েকটি স্থানে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-১ নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক গৌরনদী উপজেলার জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে কাবিটার ১৩টি প্রকল্পে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণ শুরু হয় মে মাসে। গত ৩০ জুন প্রকল্পের সভাপতিরা টাকা তুলে নেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে চলছে হরিলুট। প্রকল্পের সভাপতিরা সড়ক সংস্কারের নামে তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। রাস্তার মাটি রাস্তায় ফেলে পথচারীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছেন।
বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী রাস্তার ওপরের অংশে প্রস্থ ১২ ফুট, দুই পাশে ঢাল ২৪ ফুট, উচ্চতা চার ফুট থাকার কথা। সরেজমিনে কয়েকটি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ওই পরিমাপে কোনো রাস্তা পাওয়া যায়নি।
মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার কুব্বত সরদারের বাড়ির ব্রিজ থেকে গুয়াবাড়িয়া হয়ে কেবলারভিটা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় (প্রকল্প নম্বর ৩)। মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম মৃধা এ প্রকল্পের সভাপতি। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা রাস্তার উঁচু স্থানের মাটি অপসারণ করে নিচু স্থানে দিচ্ছেন।
প্রকল্প এলাকার বেজহার গ্রামের আবদুর রহমান ও শরীফাবাদ গ্রামের গফুরসহ কয়েকজন জানান, প্রকল্পের প্রায় এক কিলোমিটারে কোনো কাজ করা হয়নি। রাস্তায় মাঝেমধ্যে উঁচু স্থানের মাটি কেটে নিচু স্থানে ফেলে সমান করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সামান্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এ রাস্তায় এক লাখ টাকাও ব্যয় করা হয়নি।
প্রকল্পের সভাপতি মো. আবুল কালাম মৃধা বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি সঠিকভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।’
বাটাজোর ইউনিয়নের জয়শুরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঘেয়াঘাট হয়ে শাহী মসজিদের পাশ দিয়ে সিঅ্যান্ডবি পর্যন্ত রাস্তা এবং বাটাজোর সিঅ্যান্ডবি থেকে আনন্দ সমাদ্দারের বাড়ি হয়ে মোল্লাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন এ কাজ বাস্তবায়নে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব হাওলাদার। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, রাস্তা চাঁচা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। নামে মাত্র কাজ করে পুরো প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আবদুর রব হাওলাদার বলেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। প্রকল্পের ডিজাইন অনুসরণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বার্থী ইউনিয়নের মহব্বত আলী মেম্বারের বাড়ি থেকে উত্তর মাদ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার (প্রকল্প নম্বর ১০) প্রকল্পের সভাপতি ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ হাওলাদার। রাজাপুর ব্রিজের গোড়া থেকে মৈস্তারকান্দি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার (প্রকল্প নম্বর ৮) করেন বার্থী ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিতাই মণ্ডল। এ দুটি প্রকল্পে সাড়ে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ রাস্তায় তেমন কোনো কাজ হয়নি। রাস্তার মাটি এক স্থান থেকে কেটে অন্য স্থানে ফেলা হয়েছে। সোহাগ ও নিতাই মণ্ডল রাস্তায় সংস্কারের কাজে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন।
গৌরনদীর পিআইও মো. কবির উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে কাজের মান কিছুটা খারাপ ছিল, পরে তা সংশোধন করা হয়। বর্তমানে তেমন কোনো সমস্যা নেই।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More