Feedjit Live

Monday, July 4, 2011

দুই দফা বেড়েছে বিভিন্ন মনিহারি পণ্যের দাম


চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আটার দাম বাড়লে মানুষের যেমন নাভিশ্বাস ওঠে; তেমনি সরকারি-বেরসকারি পর্যায়ে আলোচনাও কম হয় না। তবে এর বাইরেও কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য আছে, যেগুলোর দাম বাড়লেও থেকে যায় আলোচনার বাইরে। মনিহারি পণ্যগুলোই আছে এই তালিকায়। উপায় না দেখে বেশি দামেই মানুষ মনিহারি পণ্য কিনছে।
গত মাসে বাজেট ঘোষণার আগে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বাজার ঘুরে বিভিন্ন মনিহারি পণ্যের দাম সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। তখন এসব পণ্যের দাম ৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়ার তথ্য পাওয়া যায়। দাম বেড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে ছিল: গায়ে মাখার সাবান, কাপড় ধোয়ার সাবান ও গুঁড়ো, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, শেভিং ক্রিম, মুখে মাখার ক্রিম, ফেসওয়াশ। এমনকি বেড়েছে মোমের দামও।
বাজেট ঘোষণার পরও কয়েকটি মনিহারি পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে কিছু পণ্যের দামে এখনো বাজেটের ছোঁয়া লাগেনি। তাই আগের দামেই এসব বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, মনিহারি পণ্যের দাম প্রতিদিন বাড়ে না। কিন্তু যখন বাড়ে, তখন একটু বেশিই বেড়ে যায়। বাজেটের আগে পরিবেশকেরা বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। একই অবস্থা হয় বাজেটের পরও।
গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে গায়ে মাখার সাবানের দাম ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ১০০ ও ১৫০ গ্রাম লাক্স সাবানের দাম ছয় টাকা করে বেড়ে হয় ২৬ ও ৩৬ টাকা। ১৩০ গ্রাম ওজনের ডেটল সাবানের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টাকায়। তিব্বত, মেরিল ও কেয়া সাবানের দাম বাড়ে দুই টাকা করে। আর বাজেটের পর ডেটল, মেরিল ও তিব্বত সাবানের দাম এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
বাজেটের আগে কাপড় ধোয়ার সাবানের দাম বাড়ে চার থেকে ১২ টাকা। এক কেজির ‘পঁচা’ সাবানের প্যাকেটের দাম ১২ টাকা বেড়ে হয় ৪০ টাকা। হুইলের দাম পাঁচ, চাকা ও তিব্বত বল সাবানের দাম চার টাকা করে বাড়ে। তবে ৪০ টাকার ‘পঁচা’ সাবানের প্যাকেটের দাম এখন ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। বাকিগুলোর দাম তেমন বাড়েনি।
বাজেটের আগেই কাপড় ধোয়ার পাউডারের (ডিটারজেন্ট) দাম বেড়েছিল দুই থেকে ১০ টাকা। তিব্বত, হুইল ও হুইল পাওয়ার হোয়াইট, চাকা, কেয়া, সার্ফ এক্সেল সবগুলো পাউডারের দামই মোটামুটি একরকম। তখন হুইল পাউডারের ২০০, ৫০০ গ্রাম ও এক কেজির দাম ছিল ১৩, ২৭ ও ৫২ টাকা। জানুয়ারিতে এই পাউডারগুলোর দাম ছিল ১০, ২৪ ও ৪৪ টাকা। আর বাজেটের পর এগুলোর দাম হয়েছে ১৪, ২৮ ও ৫৪ টাকা।
বাজেটের আগে বিভিন্ন কোম্পানির শ্যাম্পুর দাম বাড়ে ১০ থেকে ৫০ টাকা। তখন সানসিল্কের ৪০০ মিলিলিটার বড় কৌটার দাম ২৩৫ থেকে বেড়ে হয় ২৬০ টাকা। আর মাঝারি ও ছোট কৌটার দাম ১০ টাকা বেড়ে হয় ১৪০ ও ৭০ টাকা। অল ক্লিয়ার ৪০০ এমএল কৌটার দাম ২০ টাকা বেড়ে হয় ২৯০ টাকা। মাঝারি ও ছোট কৌটার দাম ১০ টাকা করে বেড়ে ১৭০ ও ৯০ টাকা হয়। ডাভ বড় কৌটার দাম ৪০ টাকা বেড়ে ৩৭০, মাঝারি কৌটা ৩০ টাকা বেড়ে ২১০ ও ছোট কৌটা ২৫ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। ২০০ এমএল গার্নিয়ার শ্যাম্পুর দাম ৭০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকা হয়। গত দুদিনে দোকানিরা বলেছেন, এখনো এই দামেই শ্যাম্পু বিক্রি হচ্ছে।
টেলকম পাউডারের দামও বাড়ে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ২০০ গ্রাম ওজনের তিব্বত পাউডারের দাম গত ছয় মাসে ৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা। একই পরিমাণের জনসন পাউডারের দাম ৯৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৫ টাকা। তবে বাজেটের পর এই পাউডারের দাম আরও ১০ টাকা বেড়েছে।
তবে গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে নারকেল তেলের। গত তিন মাসে নারকেল তেলের দাম বাড়ে ৩০ টাকা। ২০০ গ্রাম জুঁই নারকেল তেলের দাম ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা। ৪০০ গ্রাম গন্ধরাজ তেলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬৫ টাকা। ৫০০ গ্রাম প্যারাসুটের কৌটার দাম ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। এখনো এই দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে টয়লেট পরিষ্কারকের দামও। হারপিকের ছোট, মাঝারি ও বড় কৌটার দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১৩ টাকা। শক্তি ও ভ্যানিশ ব্র্যান্ডের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা করে।
দাম বাড়ানোর হাত থেকে রেহাই পায়নি মোমও। ছয় মাস আগে যেখানে ৩০ টাকায় এক ডজন মোম কেনা যেত, বাজেটের আগে ক্রেতাদের তা ৪২ টাকায় কিনতে হয়েছে। আর এখন এক ডজন মোম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
শনির আখড়ার মিয়া গিফট কর্নারের মালিক মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘কোম্পানি যে দাম নির্ধারণ করে, সেই দামেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। আমরা চাইলেই কম দামে জিনিস বিক্রি করতে পারি না।’
গত ছয় মাসে ফেসওয়াশের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। পন্ডস ফেসওয়াশের বড় বোতলের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে বিক্রি হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। ছোট বোতলের দাম ৫০ থেকে হয় ৫৫ টাকা। তবে পন্ডস স্ক্রাবের বোতলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। ডাভ ফেসওয়াশের বড় ও ছোট বোতলের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। মুখে মাখার ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির দাম বাড়ে ৮ থেকে ১০ টাকা। তিব্বত ও পন্ডস স্নোর দাম পাঁচ টাকা করে বাড়ে।
শেভিং ফোমের দাম ছয় মাসে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ২০০ এমএল ফোমের কৌটার দাম ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮৫ টাকা। কোনো কোনো দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। ১০০ এমএল কৌটার দাম ১১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি কাজী ফারুক গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, নজরদারি না থাকায় এসব পণ্যের দাম সব সময়ই বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চাতুর্যপূর্ণ ব্যবসার কৌশল। এই কৌশলের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন পণ্যে একটু ওজন বাড়িয়ে এখন তা বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ ওজন বাড়ানো হচ্ছে, দাম নেওয়া হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More