Feedjit Live

Wednesday, July 6, 2011

২০১৩ সালের জুনের আগে তোলা যাবে না


সদ্য সমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৭৮ হাজার ৬৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সমপরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি আগের ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
শুধু তা-ই নয়, বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৯১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় আরও জানানো হয়, শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ করলে ২০১৩ সালের জুন মাসের আগে তোলা যাবে না। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করে আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে, মুনাফাও তোলা যাবে, কিন্তু সমপরিমাণ টাকা সব সময় বেনিফিশিয়ারি ওনার্সে (বিও) রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (বোর্ড প্রশাসন) জাহান আরা সিদ্দিকী, সদস্য (কাস্টমস প্রশাসন) ফরিদ উদ্দিন, সদস্য (কর প্রশাসন) বশিরউদ্দিন আহমেদ, প্রথম সচিব অপূর্বকান্তি দাস প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চলতি ১ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুবিধা কার্যকর হয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে কেউ এনবিআরের একটি নির্দিষ্ট ছক পূরণ করে এই সুবিধা নিতে পারবে। মেয়াদ শেষে ওই ব্যক্তি প্রদত্ত বার্ষিক আয়কর বিবরণী মিলিয়ে দেখা হবে।
এ ছাড়া কেউ যাতে কালোটাকা বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্থ তুলে নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখবে এনবিআর। শর্ত ভঙ্গ করলে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতে আরও জানানো হয়, শেয়ারবাজারে বৈধ অর্থ বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন। শুধু প্রাথমিক শেয়ারে বিনিয়োগ করলেই কর রেয়াত সুবিধা মিলবে। সেকেন্ডারি মার্কেটে বা দ্বিতীয় স্তরের বাজারে বিনিয়োগ করা হলে এই সুবিধা দেওয়া হবে না। 
এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো কোনো সরকারি সংস্থা কালোটাকা সাদাকারীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যমান আইনানুযায়ী তা দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি সংস্থা কোনো করদাতার তথ্য জানতে চাইলে এনবিআর তা দিতে বাধ্য।
জানা গেছে, এখনো কালোটাকা সাদা করা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেনি এনবিআর। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়ে গেছে। বিজি প্রেসে প্রজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি: সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ খাতে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) মিলিয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৮৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধির হার ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই খাতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
স্থানীয় পর্যায়ে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, টার্নওভার ট্যাক্সসহ মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৬০২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। আর প্রবৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক আদায় হয়েছিল ২১ হাজার ৭৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১০-১১ অর্থবছরে আয়কর ও ভ্রমণ করসহ মোট প্রত্যক্ষ কর আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আয়কর আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৮১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আয়করে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আয়কর আদায় হয়েছিল ১৭ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পর্কে নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত এটা এনবিআরের প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভালো কাজ করেছেন। এনবিআর থেকেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ নজরদারি ছিল। রাজস্ব আদায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরে ৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটীয় পদক্ষেপ দিয়ে এর বড় অংশ আদায় করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া করদাতাদের কর প্রদানে সচেতনতা বাড়াতে আয়কর ও মূসক মেলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমেও রাজস্ব আদায় বাড়বে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটা সম্ভব—এমন প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের চেয়ারম্যান জানান, ‘আশা করি রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে। এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বলে আশা করি। সবক্ষেত্রেই ঝুঁকি রয়েছে। এনবিআর এ ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি-ব্যবস্থা সম্পর্কে ফরিদ উদ্দিন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার মডেল অনুসরণ করে রাজস্বসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সরকারের বাড়তি অর্থ খরচ হবে না। এই নিষ্পত্তি ব্যবস্থার আওতায় পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করা হবে। এতে করদাতা ও কর আদায়কারীর মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More