Feedjit Live

Tuesday, July 5, 2011

 কাজ না করেই ১৩ প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ



বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের এসব প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে। তাঁরা কোথাও কোথাও নামে মাত্র এবং বেশ কয়েকটি স্থানে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-১ নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক গৌরনদী উপজেলার জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরে কাবিটার ১৩টি প্রকল্পে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণ শুরু হয় মে মাসে। গত ৩০ জুন প্রকল্পের সভাপতিরা টাকা তুলে নেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে চলছে হরিলুট। প্রকল্পের সভাপতিরা সড়ক সংস্কারের নামে তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। রাস্তার মাটি রাস্তায় ফেলে পথচারীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছেন।
বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী রাস্তার ওপরের অংশে প্রস্থ ১২ ফুট, দুই পাশে ঢাল ২৪ ফুট, উচ্চতা চার ফুট থাকার কথা। সরেজমিনে কয়েকটি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ওই পরিমাপে কোনো রাস্তা পাওয়া যায়নি।
মাহিলাড়া ইউনিয়নের বেজহার কুব্বত সরদারের বাড়ির ব্রিজ থেকে গুয়াবাড়িয়া হয়ে কেবলারভিটা পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় (প্রকল্প নম্বর ৩)। মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম মৃধা এ প্রকল্পের সভাপতি। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা রাস্তার উঁচু স্থানের মাটি অপসারণ করে নিচু স্থানে দিচ্ছেন।
প্রকল্প এলাকার বেজহার গ্রামের আবদুর রহমান ও শরীফাবাদ গ্রামের গফুরসহ কয়েকজন জানান, প্রকল্পের প্রায় এক কিলোমিটারে কোনো কাজ করা হয়নি। রাস্তায় মাঝেমধ্যে উঁচু স্থানের মাটি কেটে নিচু স্থানে ফেলে সমান করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সামান্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এ রাস্তায় এক লাখ টাকাও ব্যয় করা হয়নি।
প্রকল্পের সভাপতি মো. আবুল কালাম মৃধা বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি সঠিকভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।’
বাটাজোর ইউনিয়নের জয়শুরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঘেয়াঘাট হয়ে শাহী মসজিদের পাশ দিয়ে সিঅ্যান্ডবি পর্যন্ত রাস্তা এবং বাটাজোর সিঅ্যান্ডবি থেকে আনন্দ সমাদ্দারের বাড়ি হয়ে মোল্লাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন এ কাজ বাস্তবায়নে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব হাওলাদার। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, রাস্তা চাঁচা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। নামে মাত্র কাজ করে পুরো প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আবদুর রব হাওলাদার বলেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। প্রকল্পের ডিজাইন অনুসরণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বার্থী ইউনিয়নের মহব্বত আলী মেম্বারের বাড়ি থেকে উত্তর মাদ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার (প্রকল্প নম্বর ১০) প্রকল্পের সভাপতি ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ হাওলাদার। রাজাপুর ব্রিজের গোড়া থেকে মৈস্তারকান্দি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার (প্রকল্প নম্বর ৮) করেন বার্থী ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিতাই মণ্ডল। এ দুটি প্রকল্পে সাড়ে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ রাস্তায় তেমন কোনো কাজ হয়নি। রাস্তার মাটি এক স্থান থেকে কেটে অন্য স্থানে ফেলা হয়েছে। সোহাগ ও নিতাই মণ্ডল রাস্তায় সংস্কারের কাজে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন।
গৌরনদীর পিআইও মো. কবির উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে কাজের মান কিছুটা খারাপ ছিল, পরে তা সংশোধন করা হয়। বর্তমানে তেমন কোনো সমস্যা নেই।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More