Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Tuesday, September 20, 2011

 অর্থনীতি সামাল দিতে পারছে না সরকার

শওকত হোসেন ও মনজুর আহমেদ

মহা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না সরকার। বরং দাতাদের শর্ত মেনে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এতে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৈরি চাপ কিছু কমলেও সংকট বাড়বে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের। কারণ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতির চাপ আরেক দফা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতির একটি দুষ্টচক্রে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ। শিগগির এখান থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। এ পরিস্থিতিতে আগামী দিনে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থেকেই যাবে।
সম্পদ কোথা থেকে আসবে, তা বিবেচনা না করেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, কম দামে সেচসুবিধা ও সার প্রদান, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে বাঁচাতে কম মূল্যে চাল বিতরণ এবং বর্তমান মেয়াদেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। এতে ব্যয় বেড়েছে অনেক। কিন্তু এখন ব্যয় ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না সরকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতেই মূলত সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিয়েই ওই রাতেই অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ১৪ সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোসহ কয়েক দফা সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদন সরকারকে দিয়েছে। আর সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর।
এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ আবারও মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে। আইএমএফ মনে করে, এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে। তবে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে না চাহিদা বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তা আর এভাবে পৃথক করা যাবে না। কেননা, একটা পর্যায়ে উঠে গেলে এটা আর আলাদা করা যায় না। ফলে আমরা একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে ঢুকে পড়েছি বলা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী অর্ধবার্ষিক ভিত্তিতে বাজেট পর্যালোচনার কথা বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় পর্যালোচনার সময়টা আরও একটু এগিয়ে এনে ব্যয় সাশ্রয়ের সময় এসেছে।’
অর্থবছরের শুরুতেই সংকট: নতুন অর্থবছরের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন খাতে দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আয়-ব্যয়ে তৈরি হচ্ছিল ভারসাম্যহীনতা। রাজস্ব আদায় এবং রপ্তানি আয় বাড়লেও সে তুলনায় সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ বেশি। এতে এক দিকে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়াও বেড়েছে। সব মিলিয়ে চাপের মধ্যে আছে সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ তসলিম বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলাম যে, সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ঝামেলা আছে। কিন্তু সরকার এটা আমলে নেয়নি। উপরন্তু অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে নিয়েছে। এতে একটা লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে।’
রাজস্ব আয়ের চেষ্টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু ঘাটতি মেটাতে তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে সম্পদের জোগান পেতে ঋণ করার বিকল্প নেই। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ আগের অর্থবছরেই ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ করার আগেই দুর্নীতির অভিযোগসহ টানাপোড়েনের কারণে এবারও পর্যাপ্ত বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। ফলে ভরসা এখন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সরকারের ঋণ ততটা সফল হয়নি। ফলে সরকার ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। সরকার বেশি ঋণ করায় বেসরকারি খাতের ঋণের জোগান কমে সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক এম এ তসলিম বলেন, ‘অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা উঠলেই সরকার খালি বলে প্রবৃদ্ধি তো ভালো হচ্ছে। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধি একটা উপাদান মাত্র। আর এই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে হবে। এ জন্য পরিকল্পনা করে বছর ভিত্তিতে অর্জন ধরে রাখতে হবে। ঋণের টাকায় এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কতটা সম্ভব, তা সামনের দিনগুলোতে বোঝা যাবে।’
শুরুতেই ব্যাংকঋণ: বড় অঙ্কের ধার দিয়েই বছরটি শুরু হয়েছে সরকারের। সূত্র জানায়, গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ করেছে পাঁচ হাজার ২২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে দুই হাজার ৮৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে তুলে দিয়েছে দুই হাজার ৩৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
বলা হয়, তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ করলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে আসে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ করলে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী সময়ে তফসিলি ব্যাংকের কাছ থেকে তা তুলে নিতে না পারে তবে বাজারে নতুন টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়। আর এতে বাড়ে দ্রব্যমূল্য, চাপ বাড়ে মূল্যস্ফীতিতে।
২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ করেছিল প্রায় ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা একটি নতুন রেকর্ড। এই ঋণের প্রায় অর্ধেকটা নেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছেপে সরকারের এই চাহিদা মিটিয়েছে।
সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি: নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবমতে, গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত ৪৩ মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের সময়ে এটাই সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।
দুই বছর ধরেই মূল্যস্ফীতির চাপ রয়ে গেছে। সরকারও মূল্যস্ফীতির হার কমাতে ব্যর্থ হয়ে মূল্যস্ফীতিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অধ্যাপক এম এ তসলিম বলেন, এর ক্ষতিকারক দিকও আছে। ব্যবসায়ীরা যখন বুঝে নেবেন যে বছর বছর এটা চলবে, তখন তাঁরা তাঁদের পণ্যমূল্যের মধ্যে আগেভাগেই নতুন মূল্যস্ফীতিকে হিসাব করে নেবেন। এতে মূল্য পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
এদিকে, ভর্তুকি সমন্বয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাবে আরেক দফা বাড়বে মূল্যস্ফীতি। মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই ভোক্তা মূল্যসূচকে গিয়ে যুক্ত হচ্ছে। আবার এর প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে চাপ আরও বাড়াবে।
এম এ তসলিম বলেন, ‘এই অবস্থা কারও জন্যই ভালো হবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের যে অবস্থা তাতে রাজনৈতিক বিবেচনা উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্ত হাতে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা করে মূল্যস্তরকে সামাল দিতে পারবে, আমি তা মনে করি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো পথ আমি দেখছি না। ফলে আগামী দিনে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থেকেই যাবে।’
লেনদেনের ভারসাম্যেও চাপ: চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে ৯০ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমা শুরু হয়েছে। বর্তমান মজুদ দিয়ে মাত্র দুই মাসের কিছুদিন বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বাণিজ্য ঘাটতি থাকবেই। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ও প্রবাসী-আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন না। এ রকম বাস্তবতায় বিনিময় হারও বাড়বে। এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টাকা-ডলারের গড় বিনিময়মূল্য ছিল ৬৯ টাকা ৫৮ পয়সা। আর এখন তা ৭৪ টাকা ৫৫ পয়সা। অর্থাৎ এবারও বেশি দাম দিয়েই পণ্য আমদানি করতে হবে। আর এর চাপ পড়বে আবারও মূল্যস্ফীতিতে।

আয়কর মেলা চার দিনে ১২৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম )- সাত বিভাগীয় শহরে আয়কর মেলার প্রথম চার দিনে ১২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মেলায় এসে কর সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

আয়োজক কমিটির সভাপতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (আয়কর) এম এ কাদের সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভাগীয় শহরগুলো আয়োজিত এই মেলায় কেবল ঢাকাতেই চার দিনে ৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।

"মেলার এখনও দুদিন বাকি। এই মেলা থেকে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হবে বলেই আমরা আশা করছি", যোগ করেন কাদের।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এবারের মেলায় বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে উল্লেখ করে আয়োজক কমিটির সভাপতি বলেন, আগামীতে আয়কর মেলার আয়োজন করা হবে আরও বড় পরিসরে।

গত বছর কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই মেলার আয়োজন করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ওই মেলায় ৫২ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছিল। আর তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১১৩ কোটি টাকা।

ঢাকায় জমজমাট মেলা

বুধবার আয়কর মেলার চতুর্থ দিনে রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে মেলা প্রাঙ্গণে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই মেলায় এসে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। টিন নেওয়ার আবেদন করেছেন।

মিরপুর থেকে মেলায় আসা ব্যাবসায়ী ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে যতোটা ভেবেছিলাম ততোটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।"

একই রকম কথা বললেন খিলগাঁও থেকে আসা ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমও।

অবশ্য জেড আই খান নামের আরেক দর্শনার্থী বললেন, নতুন টিআইএন দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না এই মেলা।

ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক সেবার মান 'ভালো নয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অনেক রাশ হয়ে গেছে। সেবার মান আরো ভাল হলে এটা এড়ানো যেত।"

কর দেওয়ার নিয়ম-কানুন সহজ করে এই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবার পরিধি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলেও মত প্রকাশ করেন এই করদাতা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

Thursday, August 11, 2011

ঘুরে দাঁড়াল বিশ্ব শেয়ারবাজার


বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সিউল স্টক এক্সচেঞ্জে একজন ব্রোকারের প্রতিক্রিয়া
বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সিউল স্টক এক্সচেঞ্জে একজন ব্রোকারের প্রতিক্রিয়া
এপি
প্রথম ইতিবাচক সংবাদটা এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা সুদের হার (ফেডারেল ফান্ড রেট) অন্তত ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিচু পর্যায়ে ধরে রাখবে।
সুদের হার নিচু পর্যায়ে রাখার মানে হলো, ফেডারেল রিজার্ভ খুব স্বল্প সুদে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া। বর্তমানে এই হার শূন্য থেকে দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। 
মঙ্গলবারের ঘোষণায় নিচু পর্যায়ে ধরে রাখা বলতে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার উল্লিখিত সীমার বাইরে নিয়ে যাবে বলে বোঝাতে চেয়েছে। 
মঙ্গলবার যখন এই ঘোষণাটি আসে, তখন আটলান্টিকের এপারে ইউরোপ ও প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারে এশিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। 
আর তাই ফেডারেল রিজার্ভের এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রভাবটা পড়েছে তাদেরই আর্থিক বাজারে বিশেষত ওয়ালস্ট্রিটে। মঙ্গলবার ওয়ালস্ট্রিটে ডাও জোনস সূচক প্রায় চার শতাংশ বা ৪২৯ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষ করেছে। ফলে ডাও জোনস আবার ১১ হাজার পয়েন্টের ওপরে উঠে যায়।
এর জের ধরে গতকাল বুধবার প্রথমে এশিয়া, তারপর ইউরোপের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক নিক্কি এক দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্টের ওপরে গিয়ে শেষ হয়েছে। 
হংকং ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বাজারগুলো গড়ে সোয়া দুই শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। এ ছাড়া সাংহাই, সিউল, জাকার্তা ও মুম্বাই ঊর্ধ্বমুখী ধারা নিয়ে দিন শেষ করেছে। 
এশিয়ায় যখন মধ্য দুপুর, তখন ইউরোপের বাজার দিনের যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছে একটা ইতিবাচক সংবাদ সঙ্গী করে। আর তাই ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক বাজারদর বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ। পাশাপাশি লন্ডনের এফটিএসই-১০০ সূচক প্রায় দেড় শতাংশ আর প্যারিসের ক্যাক সূচক সোয়া এক শতাংশ বেড়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, সুদের হারে কোনো পরিবর্তন না আনার ঘোষণার মধ্য দিযে পুঁজিবাজারে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে যে এখান থেকে তহবিল অন্যত্র স্থানান্তর করে খুব একটা লাভ হবে না। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকই বলছেন যে এটা নেহাতই খণ্ডিত ধারণা। কেননা, সুদের হার নিম্নতম পর্যায়ে অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমেরিকা স্বীকার করে নিল যে তাদের অর্থনীতির মন্দাদশা কার্যত অব্যাহত রয়েছে। দেশটির আবাসন খাতে স্থবিরতা চলছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারও খুব শ্লথ আর মানুষের খরচও কমেছে।
বরং গত কয়েক দিনে অব্যাহত দরপতনের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। ফেডারেল রিজার্ভের ঘোষণা সেই প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন দিয়ে সাময়িক স্বস্তি এনেছে। 
অবশ্য গতকালই খবর আসে যে জুলাই মাসে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে তিন হাজার ১৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। জুন মাসে এই উদ্বৃত্ত ছিল দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে ৪১ শতাংশেরও বেশি।
এর মধ্য দিয়ে এ রকম একটা আভাসও মিলল যে বিশ্ব অর্থনীতি যতটা নাজুক হয়ে গেছে বলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন, বাস্তবে ততটা নাজুক হয়নি। 
তবে উচ্চ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর ঊর্ধ্বমুখী পুনর্মূল্যায়নের চাপ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। [সূত্র: বিবিসি ও এফটি]

Monday, August 8, 2011

খাওয়া কম, কথা বেশি


সৃষ্টির রহস্য অপার। একই অঙ্গ দিয়ে আমরা একাধিক কাজ করে থাকি। যেমন ধরুন, কান দিয়ে আমরা শুনি, আবার কানে চশমাও গুঁজি। নাক দিয়ে আমরা শ্বাস নিই, গন্ধ শুঁকি, আবার নাক দিয়ে নাক ডাকি। চোখ দিয়ে দেখি, আবার চোখ দিয়ে অশ্রুপাত করি। মাথা দিয়ে আমরা দেহটাকে চালাই, মাথা খাটাই, আবার মাথাব্যথায় ভুগি। জিভ দিয়েও আমরা একাধিক কাজ করি। জিভের দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে আছে খাওয়া আর কথা বলা।
বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান আমাদের কম খেতে বলেছেন। কথাটার মধ্যে ন্যায্যতা আছে। ধনী বিশ্বের মানুষ, আমাদের দেশেরও ধনবানেরা না খাওয়ার জন্য যত মরে, বেশি খাওয়ার জন্য মরে তার চেয়ে অনেক বেশি। বেশি খেলে হূদরোগ হয়, রক্তেচাপ বাড়ে। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে ১০১টা অসুখের মূলে বেশি খাওয়া, ওজন বাড়িয়ে ফেলা, পরিশ্রম না করা। কাজেই বড়লোকেরা যদি কম খায়, তাতে তাদেরই মঙ্গল। কিন্তু গরিবদের জন্য এই কথাটা উপহাসের মতো শোনায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পৃথিবীতে যেসব দেশে পুষ্টিহীনতার সমস্যা সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এই দেশে পুষ্টিহীনতার কারণে ৫৪ শতাংশ স্কুল-পূর্ব শিশুর বৃদ্ধি থেমে আছে। এই শিশুর সংখ্যা ৯৫ লাখ। এ দেশে ৫৬ শতাংশ শিশুর ওজন কম। নারীর ক্ষেত্রেও পুষ্টিহীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ তালিকায়। ৫০ শতাংশের বেশি নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন, এফএওর ভাষায়, ভুগছেন ক্রনিক এনার্জি ডেফিসিয়েন্সিতে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী যখন কম খাওয়ার কথা বলেন, তখন মনে হয়, তিনি কাকে বলছেন এবং কখন বলছেন?
প্রথম আলোতেই খবর বেরিয়েছে, কেবল পুষ্টিহীনতায় ভোগা দরিদ্র নয়, সীমিত আয়ের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে পারছে না। তাই খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। জিনিসপাতির দাম খুবই বেড়ে গেছে। অসম্ভব হারে বেড়ে গেছে বাসাভাড়া আর রিকশাভাড়া। ১০ টাকার নিচে ঢাকায় রিকশাভাড়া নেই বললেই চলে। আমি মাঝেমধ্যে ধানমন্ডি থেকে গ্রিনরোড হয়ে পূর্ণিমা সিনেমা হলের গলি পর্যন্ত যাই। আগে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। গত ছয় মাসে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়। সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়া চাওয়ার কোনো নির্দিষ্টতা নেই—যখন যেমন, যার কাছ থেকে যত খুশি তাঁরা ভাড়া আদায় করেন। রোজার আগেভাগে বহু তরিতরকারির দাম বেড়েছে অর্ধশত থেকে শতভাগ পর্যন্ত। কেবল আলুর দামটা এখনো কম আছে বলেই মনে হয়। তবু রোজার আগে আলু ছিল ১২ টাকা কেজি, এখন ১৬ থেকে ১৮ টাকা। শতকরা হিসাবে আলুর দামও বেড়েছে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ। এখন চিন্তা করুন, যে সরকারি কর্মচারী মাসে বেতন পেতেন ১৫ হাজার টাকা, তাঁর আয় তো ছয় মাসে ৫০ শতাংশ বেড়ে ২২ হাজার টাকা হবে না। সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন স্কেল বেসিক ৪১০০ টাকা, সব মিলিয়ে তাঁরা সাত হাজার ২০০ টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকেন। বছরের শেষে তাঁদের বেতন ১৯০ টাকার মতো বাড়ে। ঢাকা শহরে একটা লোক যদি এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় রোজ একবার যাতায়াত করেন, তাহলে তাঁর ২০০ টাকা এমনিতেই বেরিয়ে যাবে। এর মধ্যে তাঁরা বাসাভাড়া কী দেবেন, আর পেটে কী দেবেন, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। তাঁরা কেবল কম খান তা-ই নয়, তাঁরা দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন, অফিস থেকে বেরিয়ে তাঁদের দ্বিতীয় কোনো কাজে লেগে পড়তে হয়, তাঁরা তাঁদের মোমবাতির দুই প্রান্তেই আগুন লাগিয়ে দেন, ক্ষয়ে যেতে থাকেন দ্রুত। ‘নিমঅন্নপূর্ণা’ নামে কমল কুমার মজুমদারের গল্প আছে, আর আছে তা অবলম্বনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমা। সেই ছবি শুরুই হয় এ কথা বলে যে পরিবারটি ভদ্রলোকদের, কারণ তারা খবরের কাগজ পড়ে থাকে। সেই খবরের কাগজ পড়া ভদ্রলোক-পরিবারের বধূটি বাড়ির সামনের রাস্তার ভিক্ষুককে মেরে তার চাল ও টাকা কেড়ে নিয়ে এসে পরিজনদের ভাত খেতে দিয়েছিল। আমাদের মধ্যবিত্তরা কীভাবে তাদের দিন গুজরান করছে, সেই হিসাব কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মেলাতে পারবেন না।
শুধু খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে তা নয়—চুলায় গ্যাস নেই, আর ট্যাপে পানি নেই। রামপুরায় মিছিল হয়েছে, কিন্তু উত্তরা থেকে মিরপুর, গুলশান থেকে সেন্ট্রাল রোড, রামপুরা থেকে কলাবাগান, বাড্ডা থেকে মগবাজার—বহু স্থানে বহু বাড়িতে পানি নেই। পত্রিকান্তরে পড়লাম, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, না, সমস্যা অত তীব্র নয়, যতটা বলা হচ্ছে। ২৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা, ২২০ কোটি লিটার উ ৎ পাদিত হচ্ছে। ৩০ কোটি লিটার কম মানে, কত বাড়িতে পানি নেই—একটু হিসাব করলেই বোঝা যাবে। আর যার বাড়িতে পানি নেই, সে যে হিসাব ধুয়ে পানি খাবে, সেই উপায়ও তো তার থাকবে না। এই পানির সংকট দূর করা, দ্রুত ও অস্থায়ীভাবে, সবচেয়ে সোজা। গরমের সময় পানির সংকট হয়। কারণ বিদ্যুতের সংকট হয়, ওয়াসার পাম্পগুলো চলতে পারে না। কারণ সব কটিতে জেনারেটর নেই। ৫৯০টি পাম্পের ২৯৩টিতে জেনারেটর আছে, আর আছে কয়েকটা ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর। ২০০ জেনারেটর কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে। এ বাবদ ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, কিন্তু তা আজও কেনা হয়নি। এই দেশ চলবে কেমন করে?
কিছু নতুন গভীর নলকূপ আর জেনারেটর চালু হলে সমস্যার আপাতত সমাধান হয়ে যায়। যদিও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদের ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের দিকে যেতেই হবে। ঢাকার মাটির নিচের পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ১০ বছর পরে গভীর থেকে গভীরতর নলকূপেও আর পানি উঠবে কি না, সন্দেহ আছে।
তো কথাটা দাঁড়াচ্ছে, আপাতত বহু বাড়ির ট্যাপে পানি পড়ে না। ট্যাংক খালি। কাজেই এই উপদেশও আমরা দিতে পারি, পানিও কম খান। এক কোটি ঢাকাবাসী প্রতিদিন যদি ৩০ লিটার করে পানি কম খায়, তাহলে ৩০ কোটি লিটার পানি বেঁচে যাবে। তাহলে আমাদের প্রতিদিন যে ৩০ কোটি লিটার পানির ঘাটতি, তা আর থাকবে না।
তো আমরা কম খাব, কম পান করব—এ কাজটা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, বেশি কথা বলা। আমাদের বাগ্যন্ত্র, যথা—ওষ্ঠ, জিহ্বা, কণ্ঠ, নাসিকা, দন্ত, তালু আমরা কেবল কথা বলার জন্যই ব্যবহার করি না, খাদ্য গ্রহণ ও পানীয় পান করার জন্যও ব্যবহার করে থাকি। (নাক দিয়ে কীভাবে খাই, প্রশ্ন করতে পারেন। নাক দিয়ে আমরা খাদ্যের ঘ্রাণ নিই। ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন হয়ে যায়।) তো আমরা যদি দাঁত দিয়ে খাদ্যবস্তু না চিবিয়ে দন্ত্য বর্ণগুলো উচ্চারণ করি, যথা—ত, থ, দ, ধ, ন; ওষ্ঠ দিয়ে খাদ্যবস্তু না চেটে ওষ্ঠ্য বর্ণ যথা—প, ফ, ব, ভ, ম উচ্চারণ করি, তাহলে আমাদের এই অঙ্গগুলো ব্যস্ত থাকে, আমাদের আর খেতে হয় না। আমাদের আর পানও করতে হয় না।
আমাদের মন্ত্রীরা নিজেরা কিন্তু তা-ই করছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই কম খান। কমই যদি তাঁরা না খাবেন, তাহলে তাঁরা এত কথা কখন বলেন, কেমন করে বলেন? এই ক্ষুদ্র কলামলেখক, এই কলামে বহুবার, এমনকি এই মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পরপরই প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় লিখে এই আবেদন জানিয়েছেন যে মন্ত্রীরা যেন দয়া করে কথা কম বলেন। যেন তাঁরা টেলিভিশনের চোঙাটা দেখামাত্র দাঁড়িয়ে পড়ে চুলটা আঁচড়ে নিয়েই কথা বলতে শুরু না করেন এবং টেলিভিশনগুলোর নৈশকালীন টক শো, মিষ্টি শোগুলোয় একটু কম কম যান। কিন্তু মন্ত্রীরা নিশ্চয়ই কলামলেখকদের তুলনায় বেশি জানেন আর বেশি বোঝেন। কাজেই তাঁরা কথা বলেই চলেছেন। কথা বললে স্লিপ অব টাং হবেই। আর যখন আপনি কার্যক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারবেন না, তখন আপনার অতিশয় মিষ্ট কথাও বড্ড তেতো বলে মনে হবে শ্রোতাদের কাছে।
কম খাওয়ার উপদেশটা যে বিজ্ঞজনোচিত ও স্বাস্থ্যকর, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কে বলছেন, কখন বলছেন, কাদের বলছেন এবং কথাটার আগে-পরে তিনি কী প্রেক্ষাপট তৈরি করে নিয়েছেন, এটা নিশ্চয়ই বিবেচ্য। গরিব মানুষকে তিনি কম খেতে বলেননি, অপুষ্টিতে ভোগা ৫৪ শতাংশ শিশুকে তিনি কম খাবার দিতে বলেননি—কম খেতে বলেছেন তাদের, যারা খাওয়ার চেয়ে ফেলে বেশি, অপচয় করে বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, টিসিবি কেন খেজুর আমদানি করতে গেল, আর চিনি ও তেলের সঙ্গে খেজুর কেনাটা কেন বাধ্যতামূলক করতে গেল। বাঙালিকে ডাল-ভাতের সঙ্গে খেজুর খাওয়ানোটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মসূচির কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অংশ, ঠিক বুঝতে পারলাম না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী যে বলেছেন, একদিন অন্তত বাজারে না গেলেই সবকিছুর দাম কমে যেতে বাধ্য, সেটাও ঠিক। কিন্তু সেটা কি একা করার মতো একটা কাজ, আর বলার মতো একটা কথা? এটা কি বাস্তবে হয় যে সবাই মিলে একদিন চিনি কেনা বন্ধ করে দেব?
যা হোক, কম খান, একদিন বাজার করা বন্ধ করুন—এসব কথা কেবল বড়লোকদেরই বলা যায়, আর বলা যায় ক্ষমতাসীন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের। অর্থা ৎ বলা যায়, নিজেদের। তাঁরা বলতে পারেন, আমি আজ সারা দিন এক ফোঁটা চিনিও খাব না। তাঁরা বলতে পারেন, আমরা সাংসদেরা ঠিক করেছি, আজকের দিনে আমরা বাজারমুখো হব না। সে ক্ষেত্রে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী, দুজনই আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও প্রিয়, আপনারা কি একটা কাজ করতে পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে কি বলবেন, ‘আপনারা ইফতার পার্টি দেওয়া বন্ধ করুন’? যখন আমরা দেশের মানুষকে কম খেতে ও কম বাজারে যেতে বলছি, তখন এ রকম ঘটা করে ইফতার পার্টির আয়োজন কি চরম পরিহাস নয়?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত ২ টাকার নোট আসছে

 বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত দুই টাকা মূল্যমানের নতুন নোট বাজারে আসছে ১১ অগাস্ট।

সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে মতিঝিল অফিস থেকে নতুন নকশার এই নোট ইস্যু করবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকেও তা পাওয়া যাবে।

অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেকের স্বাক্ষর সম্বলিত ১০০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৬০ মিলিমিটার প্রস্থের এই নোটে ২ মিলিমিটার চওড়া 'সিকিউরিটি থ্রেড' থাকবে। নোটের সামনের অংশে বামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতি সৌধের ছবি এবং ডান পাশে জলছাপে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও সরকারের প্রতীক রয়েছে।

এছাড়া নোটের উপরের কোনায় জাতীয় প্রতীক শাপলা এবং উল্টোপিঠে ভাষা আন্দোলনের শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি রয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ১০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপে। আর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন চালু করে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

দুই টাকার নতুন নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত দুই টাকার কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রাও যথারীতি চালু থাকবে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

 ‘বিক্ষোভকারীরা ফাটকাবাজ’


শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীদের ‘ফাটকাবাজ’ বলে অভিহিত করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি তাঁদের বাজার থেকে চলে যেতেও বলেছেন। 
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতকাল (শনিবার) বলেছি এবং আজও বলছি, প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেন না। যারা বিক্ষোভ করছে, তারা বিনিয়োগকারীই না। তারা এখানে ফাটকাবাজি করতে এসেছে। কেন তারা আশা করছে যে প্রতিদিন শেয়ারের দাম বাড়বে? এরা বাজার থেকে বেরিয়ে গেলেই ভালো।’
এই বক্তব্যের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে তাঁদের শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। 
গতকাল রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ চা-সংসদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এই বৈঠকের আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সঙ্গে বাজার নিয়ে আলাদা একটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। 
বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকটি বিশেষ কোনো কারণে ডাকা হয়নি। কয়দিন দেশের বাইরে ছিলাম। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলাম যে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিটি যেন চূড়ান্ত করা হয়। সেটার কী হলো, আর হঠাৎ কেন শেয়ারের দামই বা পড়ে গেল—এসব খোঁজখবর নিতে এসইসির চেয়ারম্যানকে ডেকেছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছে, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগের ঘটনায় বাজারে প্রভাব পড়ছে। শুনেছি, আজও বিক্ষোভ হয়েছে।’ এ কথার বলার পরই তিনি বিক্ষোভকারীদের ফাটকাবাজ আখ্যা দিয়ে চলে যেতে বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান এসইসি একটি সম্পূর্ণ নতুন কমিশন। তার নিজের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছে, কিছু আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। 
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব পুঁজিবাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে।’ 
প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, তাঁরা শেয়ার ধরে রাখবেন। হঠাৎ করে দাম কমে গেলেই বিক্রি করে দেবেন না।’ গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক পতন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা কী? এখনো তো বাজারের সূচক ছয় হাজারেরও বেশি।’

Sunday, August 7, 2011

শেয়ারবাজারে দরপতনে বিক্ষোভ, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি


শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে আজ রোববারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেন। দুপুর ১২টার দিকে সূচক ১৬১ পয়েন্ট কমে গেলে তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা দুইটার দিকে বিক্ষোভ শেষ হয়। এ সময় শেয়ারবাজারে দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাঁরা এ বিক্ষোভ করেন। 
দেশের শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যাহত ছিল। আজ ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৩৯.৭৪ পয়েন্ট কমে ৬,১২০.১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 
আজ হাতবদল হওয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের, কমেছে ২২০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আজ ডিএসইতে ৫৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো, এনবিএল, তিতাস গ্যাস, এমআই সিমেন্ট, কেয়া 

বনে বিরল তবে বাজারে বিকায়

ঢাকার কাপ্তানবাজারের পাখির দোকানে বিরল পাখি ধনেশ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে ।


চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের মূল ফটক দিয়ে কিছুদূর এগোলেই ডান দিকে ‘পাখির গলি’। গলির মুখেই রমজান চাচার দোকান। সেখানে সম্প্রতি একদিন গিয়ে দেখা গেল, চারটি খাঁচায় দুটি কাক, ছয়টি কবুতর ও তিনটি খরগোশ রাখা। নির্ভেজাল পোষা পশুপাখির কারবার। 
কিন্তু রমজান চাচার কাছে ‘নতুন পশুপাখি কী আছে?’ জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল ‘আসল জিনিসের’ খবর। ক্রেতা ঠাউরে চাচার জবাব, ‘কী লাগবো কন। ভালুকের পিত্ত (গলব্লাডার) দেওয়া যাইবো ১০টা। দাম ৩০ হাজার টাকা কইরা। তাজা অজগর এক লাখ। দুই মাস টাইম দিলে বেঙ্গল বাঘের চামড়াও আইনা দিমু।’
রমজান চাচা আরও জানান, অজগর ও মেছোবাঘের চামড়াও দিতে পারবেন তিনি। পাঁচ হাজার টাকায় মিলবে জ্যান্ত কেউটে বা শঙ্খিনী সাপ।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এভাবেই অবৈধভাবে বাজারে ঠাঁই পাচ্ছে অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণী। চোরা শিকারিদের হাত ঘুরে তাদের জায়গা হচ্ছে খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন তথাকথিত ‘পাখির বাজারে’। দেশের গুরুতর ঝুঁকির মুখে থাকা জীববৈচিত্র্য ক্রমেই বিপন্নতর হচ্ছে। 

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা থেকে উদ্ধার করা বাঘের চামড়া, হাড় ও চারটি মাথা।
কবুতর-খরগোশ ও বাহারি পাখির আড়ালে বিক্রি হচ্ছে বিপন্ন বাঘ, ভালুুক, উল্লুক, হনুমান এবং ধনেশ ও মদনটাকের মতো বিরল পাখি। অভ্যন্তরীণ চোরাবাজার থাকার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী পাচারেরও অন্যতম নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। বন্য প্রাণী ব্যবসার ওপর নজরদারি করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ট্রাফিক’-এর ২০১০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ বন্য প্রাণীর ব্যবসা হয়ে থাকে।
রাজধানীর কাঁটাবনে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণি কেন্দ্রটির পোষা পশুপাখির দোকানের অনেকগুলোতেই অবৈধভাবে বন্য প্রাণী বিক্রি হয়ে থাকে। সেখানে রংবেরঙের পোষা পাখি, খরগোশ ও কুকুরের পাশাপাশি প্রায়ই ঈগল ও কালিমসহ বিভিন্ন পাখি এবং ছোটখাটো বন্য প্রাণী এক রকম প্রকাশ্যেই বিক্রি হয়। সম্প্রতি এক দিন গিয়ে চুপিচুপি অজগর ও কুমির আছে কি না জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন দোকানি টেলিফোন নম্বর দিয়ে জানালেন, কী লাগবে তা ওই ফোনে জানাতে। মাঝেমধ্যে কর্তৃপক্ষের অভিযানের পরও এ বাজারে বছরের পর বছর ধরে বন্য প্রাণীর ব্যবসা চলছে। 
রাজধানীর কাপ্তানবাজারের মুরগিপট্টির বিপরীতে নতুন গড়ে ওঠা পাখির দোকানগুলোতে তেমন রাখঢাক ছাড়াই বন্য প্রাণীর ব্যবসা চলে। ‘বিসমিল্লাহ বার্ডস’ নামের দোকানে গিয়ে বন্য প্রাণী কিনতে চাইলে দোকানি ক্যাটালগ বের করে বললেন, ‘কোনটা লাগবো, অরজিনাল জঙ্গল থিক্যা আনা।’ 
এখানকার আরেক দোকান ‘বার্ডস হাউস’-এ পাওয়া গেল হাওরের বিরল চারটি কালিম পাখি। এর পরের খাঁচায়ই দেশে বিলুপ্তপ্রায় পাখি বিশাল ঠোঁটের ধনেশ। দোকানি ইমরান জানালেন, প্রতিটি ধনেশ ৩০ হাজার টাকা। ১২টি দেওয়া যাবে। সুন্দরবন থেকে আনা ছয়টি মদনটাক পাখি গুদামে আছে। এ পাখিটিও অতিবিপন্ন। 
টঙ্গী ব্রিজের শেষ মাথায় রোববারে বসে বিশাল কবুতরের হাট। ২০০ থেকে ৩০০ দোকান বসে এই হাটে। সপ্তাহ দুয়েক আগের এক রোববারে সেখানে গিয়ে দেখা যায় নানা প্রজাতির কবুতরের সঙ্গে ঘুঘু, কালিম ও বেজি বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ বিক্রেতাই টিয়া, ময়না, বক, কোকিলসহ নানা জাতের বন্য পাখি নিয়ে বসেছেন। বিকেলে নৌপথে এখানে অজগরসহ নানা প্রজাতির সাপ আনা হয় বলে জানালেন কয়েকজন বিক্রেতা।
উত্তর-পূর্বের জেলা নেত্রকোনার ভারত-সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দায়ও বসে বনবিড়াল, গন্ধগোকুল, লামচিতা, সাপসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর হাট।
কোথা থেকে কোথায় যায়: অনুসন্ধানে জানা গেছে, চোরা শিকারিরা সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বন্যপ্রাণী ধরে বাজারে চালান দেয়। ভারতীয় সীমান্ত দিয়েও চোরাপথে আসে বেশ কিছু বন্য প্রাণী। চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মিয়ানমার সীমান্ত পথে অনেক বন্য প্রাণী বাইরেও পাচার হচ্ছে। থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ এগুলোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক পোষা পশুপাখির ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, দেশের দুই প্রধান দলের দুজন সাবেক সাংসদ এ ব্যবসার অন্যতম ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী বর্তমান সাংসদ তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বন্য প্রাণী পাচার করে থাকেন বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।

ভালুকের পিত্ত হাতে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানি রমজান
বাঘ-হাঙরের চামড়া পাচার: ‘প্রজেক্ট অন টাইগার’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে দুই থেকে তিনটি বাঘ চোরা শিকারিদের হাতে মারা পড়ে। এ ছাড়া কমপক্ষে দুটি বাঘ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের (ডব্লিউটিবি) হিসাবে শিকারিদের হাতে বছরে ১০ হাজার হরিণ মারা পড়ছে। দেশে মাঝেমধ্যেই বাঘের চামড়া বা দেহাবশেষ আটকের ঘটনা ঘটে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলায় বেঙ্গল টাইগারের তিনটি চামড়া, চারটি খুলি ও ৩০ কেজি হাড়সহ একজন ধরা পড়ে। ৬ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির জঙ্গল থেকে বেঙ্গল টাইগার মেরে এর চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয় স্থানীয় বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু মানুষ।
নদী ও সাগর থেকেও হাঙর, কুমির, ঘড়িয়াল ও কচ্ছপ দেদার ফাঁদ ও বিভিন্ন কায়দায় ধরা হচ্ছে। দেশের ১২টি প্রতিষ্ঠান ‘বৈধ’ অনুমোদন নিয়ে রপ্তানি করছে হাঙর, শাপলাপাতা মাছ (স্টিংরে) ও কচ্ছপের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আর অবৈধ পথে যাচ্ছে সাপ, কুমির ও অতিবিরল ঘড়িয়াল। বিরল পাখিও আছে পাচারের তালিকায়। বাঘ ও ভাল্লুকের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ওষুধ, গহনা ও গৃহসজ্জাসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেঙ্গল টাইগারের চামড়ার দাম ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। মেছোবাঘ ও লামচিতার চামড়া মিলবে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। জ্যান্ত মেছোবাঘ বা লামচিতা এক থেকে দুই লাখ টাকায় পাওয়া যাবে বলে জানান একজন ব্যবসায়ী। তিনি জানান, জ্যান্ত ভালুক, উল্লুক ও হনুমানও মোটা দামে বিক্রি হচ্ছে। 
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনে বাঘ, সমুদ্রে হাঙর ও নদীতে কুমির প্রাণচক্রের সর্বোচ্চ স্থানে থাকা প্রাণী। এরা অন্য প্রাণীদের খেয়ে বাস্তুসংস্থান ঠিক রাখে। এদের এ হারে মেরে ফেলতে থাকলে একসময় বন-জলাভূমির প্রাণচক্র ভেঙে পড়বে। বন্য প্রাণী একবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে তাদের আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’
দেশের একমাত্র বৈধ কুমিরের খামার রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, পরিচয় গোপন করে অনেকে তাঁদের কাছে আন্তর্জাতিক বাজারের তিনগুণ বেশি দামে কুমির কেনার প্রস্তাব দিচ্ছে। বিনিময়ে কুমিরের চালানের সঙ্গে অন্য বন্য প্রাণীও পাচারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
বায়ো-কেমিক্যাল অ্যান্ড সি ফুড এক্সপোর্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল ইসলাম জানান, গত অর্থবছরে তাঁর প্রতিষ্ঠানসহ ১২ জন মিলে মোট প্রায় ৬০ কোটি টাকার হাঙরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কচ্ছপের খোল ও মাংস এবং শাপলাপাতা মাছ রপ্তানি করেছেন। 
চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বিভাগের কমিশনার জামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাঙর নিষিদ্ধ হলে তা রপ্তানি হওয়ার কথা না। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই।’ 
বিপন্ন বিরল প্রাণী ভালুক: ভালুকের পিত্ত বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার চট্টগ্রাম। এ দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ভালুকের পিত্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। ওই অঞ্চলের চোরা শিকারিরা ফাঁদ পেতে ভালুক ধরে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাশাপাশি জ্যান্ত প্রাণীটিও বিক্রি হয়ে থাকে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়মিতভাবে জীবিত ভালুক ও এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার হয়ে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের মানুষ এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ১৯৯১ সালের ১৯ জুন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে অপেক্ষমাণ কোরীয় জাহাজ ‘সিইয়াং’-এ অভিযান চালিয়ে বন বিভাগ ছয়টি জীবিত ভালুক ও ২৪টি বানর উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়। ওই জাহাজের মালিকদের জরিমানা করা হয়েছিল। 
বিশেষজ্ঞের উদ্বেগ: পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তালিকায় অতিবিপন্ন প্রাণী হিসেবে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (সুন্দরবনের বাঘ), মেছোবাঘ, লামচিতা ও কালো ভালুকের নাম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে গন্ডার, জলার কুমির, হায়েনা, নেকড়েসহ মোট ১৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী। 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুল আলম খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঘ-ভালুকের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে বন্য প্রাণী চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক মনিরুল আলম খান বন্দরগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বন্য প্রাণী চিহ্নিত করা ও পাচার রোধে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন। তাঁর মতে, একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে হবে।
প্রধান বন্য প্রাণী সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা না পেলে এই অনৈতিক ও অবৈধ ব্যবসা থামানো যাবে না।’ কাঁটাবন মার্কেটে অবৈধ বন্য প্রাণীর ব্যবসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজারে কিছুদিন পরপর অভিযান চালিয়ে বন্য প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটি বন্ধ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

Friday, July 29, 2011

সেই কাবো থেকে আবার উড়োজাহাজ ভাড়ার চেষ্টা

বাংলাদেশ বিমানের হজ-ফ্লাইটের জন্য নাইজেরিয়ার বিতর্কিত সেই কাবো এয়ারলাইনস থেকে আবারও উড়োজাহাজ ভাড়ার তৎপরতা চলছে।
বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অন্যান্য দরদাতার চেয়ে কাবোর উড়োজাহাজের ভাড়া অনেক বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। তার পরও কাবো থেকেই উড়োজাহাজ ভাড়া করতে চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এই অবস্থায় বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিমান সূত্র জানায়, আগামী হজ-ফ্লাইটের জন্য দুটি বোয়িং-৭৪৭ উড়োজাহাজ ভাড়া করার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তিন দফা দরপত্র আহ্বান (আরএফপি—রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) করে।
প্রথম দফায় চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাতে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল অস্ট্রেলিয়ার অজবান অ্যারোনটিক্যাল সার্ভিসেস। তারা হজ উপলক্ষে তিন মাসের জন্য উড়োজাহাজটির প্রতি উড্ডয়ন ঘণ্টা নয় হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করেছিল। আর এক বছরের জন্য অপরটির অবশ্য অনেক কম দর প্রস্তাব করেছিল। এ সময় কাবো এয়ারের প্রস্তাব ছিল তৃতীয় সর্বনিম্ন দর।
জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহম্মদ জাকিউল ইসলামও বলেন, অজবানের চেয়ে কাবোর দরপ্রস্তাব ছিল অনেক বেশি। অজবান সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও তারা শর্ত দেয় যে তাদের দুটি উড়োজাহাজই ভাড়া নিতে হবে। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার আটলান্টা আইসল্যান্ডিকের কাছ থেকে একটি বোয়িং এক বছরের জন্য ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বিমান অজবান থেকে হজের জন্য একটি বোয়িং ভাড়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তাই আরও দুবার আরএফপি করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ৩ জুলাই তৃতীয় দফা দরপত্র বা আরএফপি করা হয়। তাতে কাবোসহ মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিদেশি একটি উড়োজাহাজ লিজিং কোম্পানির ঢাকার একজন প্রতিনিধি প্রথম আলোকে বলেন, বিমানের কার্যক্রমে মনে হয়েছে, তারা কাবো থেকেই উড়োজাহাজ ভাড়া করতে নানা কারসাজি করছে, তাই তাদের মতো অনেকে দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী হয়নি।
বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তারাও একই রকম অভিযোগ পেয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে কাবো থেকে উড়োজাহাজ ভাড়ার বিপক্ষে মত দেন পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য। তাঁদের মতে, কাবোর মতো বিতর্কিত এয়ারলাইনস থেকে আবার হজের জন্য উড়োজাহাজ ভাড়া করলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।
বিমানের এমডি স্বীকার করেন, কাবোর প্রস্তাব নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে সমালোচনা হয়েছে। তাই আরেক দফা প্রস্তাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেটা দরপত্র বা আরএফপি নয়, সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিমানের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে প্রস্তাব চাওয়া।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায়ও কাবো থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে বিমান কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কমিটির সদস্য মইনউদ্দীন খান বাদল প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বিমান এখন এক বছরের জন্য একটি বোয়িং-৭৪৭-৪০০ ভাড়া নিতে চায়। এখন দুটি এয়ারলাইনসের প্রস্তাব আছে। এর একটি এয়ার আটলান্টা আইসল্যান্ডিক, আরেকটি কাবো। এর মধ্যে ভালো প্রস্তাবটিই গ্রহণ করতে বলেছে কমিটি।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত বছর ব্যর্থ হয়ে এবার আরও আটঘাট বেঁধে কাবোর পক্ষে একটি মহল চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছে। এর আগে গত বছর হজ-ফ্লাইটের জন্য কাবো থেকে ২৬ বছরের পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বেশ চাপ সৃষ্টি করেছিল। এ নিয়ে বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের রাজি না হওয়ায় সেটি ভাড়া করা হয়নি। তখন এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে স্থায়ী কমিটি ও বিমানের চেয়ারম্যানের বেশ টানাপোড়েন, এমনকি মন্ত্রীর পদত্যাগের মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল।
এ বছর উড়োজাহাজ ভাড়া প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত, এমন একজন পদস্থ কর্মকতা এ প্রতিনিধিকে বলেন, তাঁরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছেন, তাতে কাবো থেকে একটি ৫৮২ আসনের বোয়িং তিন মাসের জন্য ভাড়া করা হলে হজফ্লাইট নির্বিঘ্নে পরিচালনা করা যাবে।
বিমানের হজযাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর। এবার বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা এক লাখ আট হাজার। এর মধ্যে ৪৪ হাজার বিমান পরিবহন করবে বলে জানিয়েছেন এমডি জাকিউল ইসলাম। বাকি ৬৬ হাজার সৌদিয়াসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থা পরিবহন করবে।

ছোলার বাজার এখনো চড়া

পবিত্র রমজানে অপরিহার্য পণ্য ছোলার দাম এখনো চড়া। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে চিনি ও ভোজ্যতেলের অস্থিরতা কাটলেও ছোলার বাজারে তার ছাপ নেই।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কমেছে, কিন্তু তার কোনো লক্ষণ খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ছোলার চড়া দাম দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর মিয়ানমারের অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ছোলার দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশই (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসেই ছোলার দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন থেকে সাড়ে তিন মাস আগেও ছোলার দাম ছিল মাত্র ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, এখন অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা সাধারণ মানের ছোলার আমদানি ব্যয় পড়ে কেজিতে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। মিয়ানমার থেকে আনা ছোলা সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ এবং ইথিওপিয়া থেকে আমদানি করা ছোলার খরচ পড়ছে ৪৯ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৩ টাকা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ছোলা চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। মিয়ানমারের ছোলা ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। আর ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ছোলা ৬৫ থেকে ৭০ এবং মিয়ানমারের ছোলা ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কেন ছোলার বাজারের এই অবস্থা, সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে আমদানিকারকেরা বললেন সরবরাহের ঘাটতির কথা। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকেরা বলেন, শুধু রমজানেই দেশে ছোলার চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। কিন্তু গত পাঁচ মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৭ হাজার টন। এর বেশির ভাগই আবার বিক্রি হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে ছোলা আমদানি করা হয়েছিল ৪৫ হাজার টন। এ বছরের জুনে আমদানি হয়েছে মাত্র নয় হাজার টন। এর কারণ হিসেবে ওই সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ছোলা আমদানির প্রধান উৎস (৯৫ শতাংশ) অস্ট্রেলিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো মানের ছোলার অভাব দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে। এ কারণে দেশেও ছোলার দাম বেশ চড়া।
চলতি মাসে নয় হাজার ১৬৯ টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। তবে আগামী দুই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারিতে কমেছে: গতকাল রাজধানীর রহমতগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ডালপট্টিতে সাধারণ ছোলা পাইকারি ৫৮ থেকে ৬০ এবং উন্নতমানেরটি সর্বোচ্চ ৭১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই ধরনের ছোলাতেই কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দাম আরও কম। সেখানে সাধারণ ছোলা ৫৩ ও উন্নতমানের ছোলা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাধারণ মানের ছোলা ৫৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী এর চেয়েও কম দামে বিক্রি করছেন।
‘নারায়ণগঞ্জ জেলা ডাল ভুষা মাল ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপ’-এর নির্বাহী পরিচালক ও বেঙ্গল ট্রেডার্সের মালিক বিকাশ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে ডাল আমদানিকারকদের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ানোর কারণে ছোলার দাম কমে এসেছে।
বন্দরনগরে দাম কম হলেও খুচরা বাজারে তার প্রতিফলন নেই কেন জানতে চাইলে একজন আমদানিকারক বলেন, তাঁরা খুব বেশি লাভে ছোলা বিক্রি করছেন না। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পাইকারেরা বলছেন, ছোলার দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা দিচ্ছেন পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কেনার অজুহাত।
তবে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই একটি বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। তা হলো রোজার বাড়তি চাহিদা বুঝে অতিরিক্ত মুনাফা করার মানসিকতা থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে পণ্যটির।

ব্যবসায়ীরা তো দেখি বেশ বোকা!

প্রতিবছর রমজান মাস আসার আগে যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে, তখন সবাই বলাবলি করতে থাকেন, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন। এর মানে হলো, ব্যবসায়ীরা চাইলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারেন এবং তাঁরা আর কোনো মাস নয়, শুধু রমজান মাসটাকেই বেছে নেন দাম বাড়ানোর জন্য। যদিও তাঁরা জানেন, এ মাসের অনেক আগে থেকেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার অনেক সতর্কতামূলক কথা বলতে থাকে, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ সময় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শোরগোল তোলে এবং এর পরও তাঁরা এই সংবেদনশীল সময়টাকেই বেছে নেন দাম বাড়ানোর জন্য।
ব্যবসায়ীরা যদি ইচ্ছা করেন কোনো দ্রব্যের দাম ভবিষ্যতে বাড়বে, তাহলে দেখা যায়, সেটি এখন থেকেই বাড়া শুরু করে। কারণ, ব্যবসায়ী ওই মুহূর্ত থেকে দ্রব্যটির সরবরাহ কমিয়ে দেবে ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য। তাই রমজান মাসে যদি আশা করা হয় কোনো জিনিসের দাম বাড়বে, তাহলে এর দাম আগে থেকেই বাড়বে। তাহলে ব্যবসায়ীরা কেন প্রত্যাশা করেন, রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়বে? যদি আমরা ধরে নিই, ওই দ্রব্যের সরবরাহজনিত কোনো সমস্যা নেই, তাহলে দামটা বেড়েছে চাহিদা বাড়ায়। চাহিদা আর সরবরাহের বিশ্লেষণ একটু জটিল হওয়ায় অনেক বিশ্লেষক সেদিকে না গিয়ে সোজাসুজি ‘সিন্ডিকেট থিওরি’ প্রয়োগ করেন। তাঁরা বলতে চান, ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরবরাহ কমিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছেন।
সিন্ডিকেটকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয় কার্টেল। এ ধরনের কার্যকলাপ প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার পরিপন্থী হওয়ায় অনেক দেশে এটা আইনের চোখে নিষিদ্ধ। কিন্তু এই সিন্ডিকেট-তত্ত্ব বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কিছু হলেই টিভি, মিডিয়া ও টকশোগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সিন্ডিকেট-তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়। বাস্তবে এই সিন্ডিকেট প্রমাণ করাটা বেশ কঠিন কাজ। সাধারণত সরবরাহ ও চাহিদার অনেক নিয়ামকের যেকোনো একটির পরিবর্তন দ্বারাই দ্রব্যের মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে। সেগুলোর যথাযথ বিশ্লেষণে না গিয়ে এ প্রসঙ্গ আসামাত্র সিন্ডিকেট-ব্যাখ্যায় চলে যাওয়া একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সিন্ডিকেট যদি এতই শক্তিশালী হবে, তাহলে তো জিনিসপত্রের দাম কখনোই কমার কথা নয়। যখন দাম কমে যাবে, তাহলে তখন কি আমরা ধরে নেব যে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ‘যাক বাবা, অনেক তো লাভ হলো; চলুন, আমরা এবার সবাই মিলে দাম কমিয়ে কিছু লোকসান করি। নয়তো ব্যাপারটা একটু খারাপ দেখা যায়।’
অনেকে বলেন, রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেন ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধির। ব্যবসায়ীরা অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলতে পারেন, রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগটা তাঁদের দেওয়া হয় বলেই তাঁরা এ সুবিধা নেন। আমরা সব সময় আশা করি, ব্যবসায়ীর কাজ হচ্ছে সর্বদা ন্যায্য দামে বিক্রি করা। ন্যায্য দাম বলতে আমরা অবশ্যম্ভাবীভাবেই আমাদের মনের মতো কম দামকেই মনে করি।
অর্থনীতিতে ন্যায্যমূল্য ব্যাপারটা সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন কাজ। চালের দাম কত হলে ন্যায্য হয়? বহুল আলোচিত আর বিতর্কিত ১০ টাকা কেজি? কেউ বলতে পারে, পাঁচ টাকা হলে ভালো হয়। কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে বলতে পারে, সবচেয়ে ন্যায্য দাম হবে বিনা পয়সায় চাল দেওয়া, বিশেষত গরিব মানুষকে। এদিকে, একজন চাষি বলতে পারেন, আমার তো এক কেজি চাল উৎপাদন করতে খরচই পড়ে যায় ২০ টাকার মতো। আমি তো কোনোমতেই এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারব না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ন্যায্য দামের দাবি চটজলদি করা যায়, কিন্তু ন্যায্য দামটা কত হবে জিজ্ঞেস করলে অনেকেই বিপদে পড়ে যাবেন।
অর্থনীতির পরিভাষায়, একটি বাজার যদি যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিযোগিতামূলক হয়, তাহলে কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনে মিলে একটি জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করেন। কখনোই একজন বিক্রেতার হাতে অসীম ক্ষমতা থাকে না মূল্য নির্ধারণের। সত্যি কথা বলতে কি, প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতিতে বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন ক্ষমতাই নেই।
আপনি যদি গত পাঁচ বছরের পেঁয়াজের খুচরা মূল্য লেখচিত্রে দেখেন, তাহলে দেখা যাবে, বছরের মাঝামাঝি বা তার পর থেকে (যা রমজানের আগের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়) দাম বাড়ছে এবং বছরের শেষ ভাগ পর্যন্ত দাম কমছে না (যেটি ঈদুল আজহা পর্যন্ত বিস্তৃত)। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো উৎসবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যে এই একই ধারা দেখা যেতে পারে। এর কারণ আর কিছুই নয়, উৎসবের সময়গুলোতে এসব পণ্যের বর্ধিত চাহিদা।
আমি কিন্তু মনে করছি না যে ব্যবসায়ীরা ধোয়া তুলসীপাতার মতো পবিত্র—তাঁরা কখনো কোনো অন্যায় করেন না। ব্যবসায়ীরা অবশ্যই কারসাজি করে দাম বাড়াতে পারেন, তাঁরা অনেক সময় এটা করেনও। বিশেষ করে, যেসব পণ্যের বিক্রেতার সংখ্যা অনেক কম, সেখানে এই কারসাজি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের অভিযুক্ত করতে হবে। অনেক দেশেই এ-সংক্রান্ত আইনে পরিষ্কার বলা আছে, ব্যবসায়ীদের কী ধরনের কৌশল (অবশ্যই প্রমাণ সাপেক্ষে) প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিপন্থী এবং এ জন্য কী ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত।
সবচেয়ে বড় কথা, রমজান মাসের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, রমজান মাসে টিভি-রেডিওতে যতই বয়ান করে সংযমের কথা বলা হোক না কেন, এ মাসটিতেই আমরা চরম অসংযমের পরিচয় দিই। এটাকে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, একটা খাদ্য-উৎসবের মাস। দিনের বেলায় অভুক্ত থেকে আমরা আমাদের যাবতীয় ক্ষুধা-পিপাসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি ইফতারের টেবিলে। বাজারমূল্য আমাদের এই আচরণের জ্বলন্ত সাক্ষী। কিন্তু আমরা তা বুঝি না বা বুঝতেও চাই না। আমরা নির্দ্বিধায় ব্যবসায়ীদের ওপর আমাদের এই অসংযমের দায়ভার চাপিয়ে থাকি। রমজান মাসে জিনিসপত্র অন্যান্য সময়ের মতো দামেই যদি আমরা পেতে চাই এবং যদি সরবরাহের তেমন কোনো ঘাটতি না থাকে, তাহলে আমাদের নিজেদের একটু সংযত করতে হবে। তাহলে বাজারে চাহিদার বৃদ্ধি ঘটবে না, ব্যবসায়ীদের মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হবে না এবং জিনিসপত্রের দাম রমজান মাসে বাড়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে। মুখে সংযমের কথা বলে ইফতারের সময় ভূরিভোজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর যা-ই হোক, খাদ্যদ্রব্যের দাম কমিয়ে রাখা যাবে না।
ড. রুশাদ ফরিদী: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
rushad@econdu.ac.bd প্রথম আলো

Tuesday, July 26, 2011

সূচক কমলেও ৮৬২ কোটি টাকার লেনদেন

দ্বিতীয় ঘণ্টার লেনদেন শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮৬২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে সূচক কিছুটা কমলেও বেড়েছে শতাধিক শেয়ারের দাম।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আজ ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। বেলা ১১টা পাঁচ মিনিটে সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। প্রথম ঘণ্টা শেষে ডিএসইতে সূচক কিছুটা বাড়লেও বেলা একটায় সূচক ১৪.৭৪ পয়েন্ট কমে ৬,৬৮১.৬৪ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
এ সময় লেনদেন হওয়া ২৫৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১১৮টির, কমেছে ১২১টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
এখন পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে তিতাস গ্যাস, আরএন স্পিনিং, এনবিএল, গ্রামীণফোন, কেয়া কসমেটিকস, সামিট পাওয়ার, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, এমআই সিমেন্ট, ওয়ান ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
অন্যদিকে বেলা একটায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৩৬.৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ১২,৩২৬.৩৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময় লেনদেন হওয়া ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ১১২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৮৯ কোটি টাকার।প্রথম আলো

 চায়ের নিলাম বাজার প্রথমবার ক্রেতাশূন্য

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো ‘চায়ের নিলাম বাজার’ আজ মঙ্গলবার ছিল ক্রেতাশূন্য। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এ বাজারে প্রথমবারের মতো কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। সরকার নিলাম মূল্যের ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর আরোপ করার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা চা কেনা বন্ধ রাখেন। এতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
নিলাম বাজার সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সারা দেশের চায়ের নিলাম হয় চট্টগ্রামে। প্রতি নিলামে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার চা বিক্রি হয়।
জানা গেছে, আগের নিয়মে ক্রেতাদের ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং ২ শতাংশ পাইকারি মূল্য কর দিতে হতো। সে হিসেবে প্রতি নিলাম মূল্যে চা কেনার পর ক্রেতাদের ১৭ শতাংশ কর দিতে হয়। নতুন করে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর আরোপের ফলে এ কর দাঁড়াবে ২২ শতাংশে। আগের নিয়মে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার চা বিক্রি হলে সরকার প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেত। আজকে নিলাম বন্ধ থাকায় সরকার এ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো।
বাংলাদেশে চা বাগান আছে ১৬৪টি। এসব বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ছয় কোটি কেজি চা উত্পাদন হয়। বাগান মালিকেরা তাঁদের নির্ধারিত প্রতিনিধির (ব্রোকার হাউস) মাধ্যমে নিলাম বাজারে চা বিক্রি করে থাকেন।
নিলাম বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এভাবে নিলাম বাজারে ক্রেতা পাওয়া না গেলে প্রত্যক্ষভাবে চা বাগান মালিক এবং পরোক্ষভাবে দেশের চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউছুফ নিলাম বাজারে কোনো চা বিক্রি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই চট্টগ্রামের নিলাম বাজারে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার চা বিক্রি হয়ে আসছে। সরকারের অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে আজ নিলাম বাজারে চা কেনাবেচা হয়নি। প্রথম আলো

বাজারে ফিরে এসেছে চিনি

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া ব্যবসায়ীদের আশ্বাসের পর বাজারে ফিরে এসেছে চিনি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দর ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে কিছু দোকানে এখনো ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে ছোলা, খেজুর, মুড়ি ও গুড়ের বাজার এখনো চড়া। তবে চাল, ডাল, মটরের (ডাবলি) দাম তেমন একটা বাড়েনি। কয়েক দিন ধরে এ পণ্যগুলোর দাম ব্যবসায়ীরা এতটাই বাড়িয়েছেন যে এখন নতুন করে আর বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। তার চেয়ে বর্তমান দামটিই ধরে রাখার কৌশল নিচ্ছেন তাঁরা।
এ ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়ো দুধের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মুরগির দাম কিছু কমেছে। আর গরু ও খাসির মাংসের দর বেঁধে দিলেও এখনো তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
সরকার-নির্ধারিত দরে চিনি: গত বুধবার চিনির দর বেঁধে দেওয়ার পর বাজার থেকে উধাও ছিল চিনি। সেই চিনির দেখা মিলেছে গতকাল সোমবার। যেসব দোকানে চিনি ছিল, গতকাল সেগুলোয় বিক্রি হয়েছে সরকার-নির্ধারিত ৬৫ টাকা দরে।
সকালে পলাশী বাজারে গিয়ে বেশির ভাগ দোকানে চিনির দেখা মেলে। কয়েকজন দোকানি জানান, পাইকারি বাজার থেকে ঠিকমতো সরবরাহ করায় তাঁরা এখন চিনি আনতে পারছেন। এ কারণে ৬৫ টাকায় বিক্রিও করতে পারছেন।
তবে পলাশী বাজারেরই কয়েকটি দোকানে ৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারণ জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, এ কয়দিন ৭০ টাকায় পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনেছেন। এ দামে বিক্রি করেই তাঁদের লোকসান হচ্ছে। ৬৫ টাকায় এ চিনি বিক্রি করা সম্ভব নয়। তবে দু-এক দিনের মধ্যেই ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করবেন বলে তাঁরা জানান।
হাতিরপুল বাজারের ভেতর ও বাইরে, পূর্ব তেজতুরী বাজার এবং পল্টনের বিভিন্ন দোকানেও ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গতকাল দুপুরে নয়াবাজারের অধিকাংশ দোকানে চিনি পাওয়া যায়নি। তিনটি দোকানে চিনি থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দাম চাওয়া হয়। এক দোকানি এইমাত্র চিনি এসেছে বলে জানান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, এখন থেকে ৬৫ টাকায় চিনি বিক্রি করবেন।
গত কয়েক দিনের চিনিশূন্য কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতেও গতকাল দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রায় সব দোকানেই চিনি বিক্রি হচ্ছে। দোকানি মাসুদ রানা বলেন, ‘এত দিন বাজারে চিনি ছিল না। আমরা কিনতে গিয়েও পাইনি। গতকাল (রোববার) বাজারে দু-তিন হাজার বস্তা চিনি এসেছে। এ কারণে সব দোকানে এখন চিনি আছে।’
খোলা সয়াবিন এখনো কম: নয়াবাজারের বেশির ভাগ দোকান ঘুরে খোলা সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি। একই অবস্থা পলাশী ও হাতিরপুল বাজারেও। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত। তবে কারওয়ান বাজারে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে এবং বিক্রিও হচ্ছে সরকার-নির্ধারিত দাম ১০৯ টাকায়।
খুচরা দোকানগুলোয় বেশি বিক্রি হচ্ছে বোতল ও প্যাকেটজাত তেল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।
চালের দর খুচরায় বেশি: পাইকারি বাজারে গত কয়েক দিনে চালের দাম বাড়েনি। তবে খুচরা বিক্রেতারা চাল বিক্রি করছেন বেশি দামে। এক সপ্তাহে কোনো কোনো চালের দাম দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে মোটা চালের দাম গতকাল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা দেখানো হলেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। নয়াবাজার কাঁচাবাজারে বিআর-২৮ চাল ৩৮ থেকে ৪০, নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজার ও পলাশী বাজারে দর ছিল নাজিরশাইল ৫২, মিনিকেট ৪৪ থেকে ৪৬, পারিজা ৪০ ও পাইজাম ৩৮ থেকে ৪২ টাকা।
ছোলার দাম চড়ছেই: সাধারণ মানুষ যে ছোলাটা কেনে, রাজধানীর খুচরা দোকানগুলোয় তা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর উন্নত মানের ছোলার দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, ছোলার দাম কমেছে। রাজধানীর রহমতগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে সাধারণ ছোলা ৫৮ থেকে ৬০ এবং উন্নত মানের ছোলা সর্বোচ্চ ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই ধরনের ছোলাতেই দাম কমেছে দুই টাকা।
এ ছাড়া খুচরা দোকানে দেশি মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫, বিদেশি ডাল ৭৫ থেকে ৮০ এবং মুগ ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খেজুরের বাজার গরম: রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও দোকানে চড়া দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। বাংলা খেজুর ৬০, মরিচা ১০০ থেকে ১২০, নাগা ১১০ থেকে ১২০, বড়ই ১৭০ থেকে ১৮০ ও মরিয়ম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত খেজুরের দাম আরও চড়া।
বেড়েছে গুঁড়ো দুধের দাম: গত এক সপ্তাহে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। দোকানিরা জানান, এক কেজির প্যাকেটের মার্কস দুধের দাম ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৪০, ফ্রেশ ৪১৫ থেকে ৪২৫, ডিপ্লোমা ৪৯০ থেকে ৫১০ টাকা হয়েছে।
মাংস ও মুরগি: ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংস ২৭০ এবং বিদেশি গরুর মাংস ২৫০, মহিষের মাংস ২৪০, খাসির মাংস ৪০০, বকরি ও ভেড়ার মাংস ৩৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে গতকাল গরুর মাংস ২৭০ ও খাসির মাংস ৪২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম ছিল ২৭০ ও ৪০০ টাকা।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। কারওয়ান বাজারে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। নয়াবাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজিতে। আর দুই বাজারেই দেশি মুরগির দর ছিল যথাক্রমে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
ডিসিসিকে চিঠি: রাজধানীর সব দোকানে দৃশ্যমান স্থানে নিত্যপণ্যের মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশ দিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) গতকাল চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে খুচরা দোকানিরা ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা করতে পারবেন না।
আমাদের চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে গতকাল চিনির সরবরাহ বেড়েছে। এস আলম গ্রুপ উৎ পাদন শুরুর পর ২৪০ জন পরিবেশকের মাধ্যমে চিনি সরবরাহ করছে। গতকাল থেকে ব্যবসায়ী গ্রুপটি পাঁচটি স্থানে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি শুরু করেছে। এ পাঁচ স্থানে ৬৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে। তবে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সরকারি দরের চেয়ে লিটারপ্রতি দুই টাকা কমে অর্থাৎ ১০৭ টাকায়।
এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মীর মইনুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে ন্যায্যমূল্যের কেন্দ্রের সংখ্যা ২০-২৫টিতে উন্নীত করা হবে।
এ ছাড়া বিএসএম গ্রুপ ১৪ জন পরিবেশকের মাধ্যমে গতকাল থেকে ছয় টন করে চিনি সরবরাহ করছে। পরিবেশকদের কাছে এই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়। পরিবেশকেরা খুচরা বিক্রেতাদের কেজিপ্রতি ৬৩ টাকায় চিনি সরবরাহ করবেন। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার থেকে ৫৫ টাকায় ছোলাও বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাজারে এখন আগের চেয়ে চিনির সরবরাহ বেশি। এ কারণে চিনির দামে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে চিনি কিনতে পারায় চট্টগ্রামের কয়েকটি বাজারের নির্দিষ্ট কয়েকটি দোকানে সরকার-নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে। কাজীর দেউড়ি বাজারের খান ডিপার্টমেন্ট স্টোর গতকাল ৬৪ টাকায় তিন বস্তা চিনি কিনে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।
আবার বেশি দামে কেনা খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনো ৬৮-৭০ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন। কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের রাকিন ডিপার্টমেন্ট স্টোরের পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো সরকারি দামে চিনি কিনতে পারিনি। এ কারণে এই বাজারে ৬৮-৭০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে।’

Monday, July 25, 2011

 ডিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় ৬০৭ কোটি টাকার লেনদেন

প্রথম ঘণ্টা শেষে আজ সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে সূচক বেড়েছে, বেড়েছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম আলো
আজ দুপুর ১২টার দিকে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ২৭.৯৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬৭৩৮.৪৭ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময় লেনদেন হওয়া ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৫৫টির, কমেছে ৭৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে লেনদেনের ছয় মিনিটের দিকে সূচক ৪৭ পয়েন্ট বাড়ে। এরপর সূচক বাড়ার হার কমতে থাকে। ২২ মিনিটের দিকে সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। তবে প্রথম ঘণ্টায় সূচক গতকালের চেয়ে কমেনি।
এ সময় লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে—আরএন স্পিনিং, পিএলএফএসএল, বেক্সিমকো, বেক্সটেক্স, মালেক স্পিনিং, তিতাস গ্যাস, ম্যাকসন স্পিনিং, গ্রামীণফোন, আফতাব অটো ও কেয়া কসমেটিকস।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিএসইতে সিএসসিএক্স সূচক ২১.১০ পয়েন্ট বেড়ে ১২,৩৫৯.৫৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এ সময়ে লেনদেন হওয়া ১৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ৮৫টির, কমেছে ৭২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। মোট লেনদেন হয়েছে ৫৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে আবার আশ্বাস

বাজার থেকে চিনি উধাও করার চার দিন পর ব্যবসায়ীরা জানালেন, এখন থেকে চিনি পাওয়া যাবে। এমনকি প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়ানোর পর ব্যবসায়ীরা আরও আশ্বাস দিলেন, রমজান মাসে বাজারদর স্থিতিশীল থাকবে।
চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার চরম অস্থির থাকার পর গতকাল রোববার ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সকালে বৈঠক করেছে ট্যারিফ কমিশন। বিকেলে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া হাইকোর্ট গতকাল চিনি ও সয়াবিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে সাতজন ডিও ব্যবসায়ীর নামে মামলা করার সুপারিশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘আপনারা তো এক মাস আগেই কথা দিয়ে গেলেন যে রমজানে পণ্যমূল্য বাড়াবেন না। হঠা ৎ চিনির দাম বাড়িয়ে দিলেন কেন?’ জবাবে ব্যবসায়ীরা কারখানা বন্ধ থাকাসহ তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, কিছু সমস্যার কারণে চিনির ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হলেও তা কেটে গেছে। রমজানেও পণ্যমূল্য আর বাড়বে না।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চিনি ও ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা মালিকদের পাশাপাশি চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ‘ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল ও চিনির কোনো সংকট নেই, আগামী দিনেও কোনো সংকট থাকবে না। শুধু ঢাকায় চিনির ক্ষেত্রে চাহিদা ও সরবরাহের একটু সমস্যা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ রকম হবে না।’
ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ডিলার ও পরিবেশক পদ্ধতির মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। যে এলাকায় পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য এলাকায় পণ্য বিতরণ করা যায় না। এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরিবেশকেরা নিজ এলাকায় পণ্য সরবরাহ করে উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য এলাকায়ও সরবরাহ করতে পারবেন।’
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে চারটি চিনি পরিশোধন কারখানা বন্ধ থাকা, হরতাল ইত্যাদি কারণ তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এখনো চান না পরিবেশক পদ্ধতিটি হোক। কিন্তু এটি করা হবেই।
আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, চিনির দর কাল থেকেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মিলগেটে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরেই চিনি সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানিয়ে এসেছেন তাঁরা।
ডিও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল অত্যাবশ্যকীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে সাতজন ডিও ব্যবসায়ীর নামে মামলা করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া দেশের সব ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধন কারখানা মালিকদের পরিবেশক পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে চালুর জন্য আবারও নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নির্দেশে বলা হয়েছে, পণ্য বিপণন আদেশ ২০১১ অনুযায়ী ডিও প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চিনি ও ভোজ্যতেল বর্তমানে শুধু পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমেই বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। তিন মাসের সময় দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০ জুন। ডিও প্রথা বিলুপ্তির আগে অনেকে যেসব ডিও ইস্যু করেছিল, সে পণ্যও পরিবেশকের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে চিনির মজুদ রয়েছে এক লাখ দুই হাজার টন। আরও দুই লাখ ৩৭ হাজার টন চিনি দেশে এসে পৌঁছাবে রমজানের মধ্যে। অন্যদিকে, ভোজ্যতেলের মজুদ এক লাখ ৩১ হাজার টন। আর, দেশে এসে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও তিন লাখ ৩৭ হাজার টন।
ট্যারিফ কমিশনে বৈঠক: চিনির দর, সরবরাহের সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশক পদ্ধতি চালুর বিষয়ে পরিশোধন কারখানা মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন।
বৈঠক শেষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সরকার-নির্ধারিত ৬৫ টাকা কেজি দরেই চিনি বিক্রি করতে হবে। গত কয়েক দিন কারখানার মালিকেরা রাজধানীতে কম সরবরাহ করে বেশি সরবরাহ করেছেন রাজধানীর বাইরে। তাই চিনির সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, চালান প্রথা (ডিও) থেকে পরিবেশক পদ্ধতিতে উত্তরণের প্রক্রিয়াতে কিছু সময় লাগছে। এ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে কোনো কোনো ব্যবসায়ীর অনীহা রয়েছে। ফলে এক ধরনের অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। দর বাড়ার পেছনে এটাও একটা কারণ বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, পরিশোধন কারখানা থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। এখন সরবরাহ ঠিক হয়েছে। সোমবার থেকেই পাইকারি বাজারে তাঁরা নির্ধারিত দর অর্থা ৎ ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করবেন।
সরবরাহের নানা আশ্বাস: এদিকে, দেশে চিনির মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।
গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএফআইসির পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংস্থার গুদামে বর্তমানে ৫০ হাজার টন চিনি মজুদ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিএসএফআইসির নির্ধারিত ডিলারদের মধ্যে ১০ হাজার টন চিনি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, চলতি মাসে দেওয়া হবে আরও ১০ হাজার টন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ২০ হাজার টন চিনি জাহাজীকরণের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগির এ চিনি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজার থেকেও কেনা হবে ২০ হাজার টন চিনি। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে কেনা পাঁচ হাজার ৮১৩ টন চিনি এরই মধ্যে বিএসএফআইসির গুদামে গুদামজাত করা হয়েছে।
এদিকে, দেশবন্ধু চিনিকল কর্তৃপক্ষ গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুলভ মূল্যে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে তারা। প্রতি কেজি ৬৫ টাকা করে পরিবেশকদের মাধ্যমে মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরায় চিনি বিক্রি করা হবে।
চার কর্মকর্তা তলব: চিনি ও সয়াবিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভূমিকা জানাতে টিসিবির চেয়ারম্যানসহ চার কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে।
গতকাল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ সম্পূরক এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন ও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন। এরপর ওই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নিষ্ক্রিয়তা ও আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল না করায় এ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গতকাল সম্পূরক আবেদনটি করা হয়।
আদালতের নির্দেশনায় সরকার-নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে কেউ যেন সয়াবিন তেল ও চিনি বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য সাধারণ ও পাইকারি বাজারগুলো তদারক করতে বাণিজ্য ও খাদ্যসচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা ৎ ক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিতের কথাও রয়েছে নির্দেশনায়। অবৈধভাবে মজুদ করে কেউ যেন বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন, এ বিষয়টি তদারক করতেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া টিসিবির চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক (আমদানি-রপ্তানি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৯ আগস্ট হাজির হতে বলা হয়।  প্রথম আলো

 ডিএসইতে লেনদেন বেড়েই চলছে

আগের দিনগুলোর ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববারও দেশের শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার।
অন্যান্য খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের দর কমলেও ব্যাংকিং খাতের চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত এ খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে লেনদেনের ওপরে। ডিএসইতে গতকাল এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি সময়কালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ধসের পর বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে প্রবল তারল্য-সংকট বিরাজ করছিল। ইতিমধ্যে এই সংকট অনেকাংশে কমেছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় লেনদেন বেড়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগও লেনদেন বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
শাকিল রিজভী বলেন, বাজার বাড়তে থাকলে সবাই আসে। আবার কমতে থাকলে সবাই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত ছিল। তাহলে বাজারও স্বাভাবিক আচরণ করত।
ডিএসইর সভাপতি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন শেয়ার সরবরাহ দরকার। আর এ জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গতকাল দিন শেষে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭১০ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ১৮৭ পয়েন্ট হয়েছে। সিএসইতে হাতবদল হয়েছে ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর মধ্যে বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গতকাল ১৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো, আফতাব অটোমোবাইলস, আরএন স্পিনিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা ও এমজেএল বিডি। প্রথম আলো

Sunday, July 24, 2011

এত চিনি গেল কোথায়?

চট্টগ্রাম বন্দরে এক সপ্তাহ আগে এমভি পিলিয়ন জাহাজ থেকে খালাস হয়েছে সিটি গ্রুপের ৫২ হাজার ৪০০ টন অপরিশোধিত চিনি।
দেশবন্ধু ও আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের আমদানি করা ৫৩ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি খালাস করে নেওয়া হচ্ছে পরিশোধন কারখানায়।
রোজার আগ মুহূর্তে এই তিন কোম্পানিই এনেছে এক লাখ পাঁচ হাজার টন চিনি।
অন্যদিকে ক্ষমতা বাড়ানোর পর দুই দিন আগে থেকে উৎপাদন শুরু করেছে এস আলম রিফাইনারিও। এই কোম্পানির আগের ছয় থেকে সাত হাজার টনের অপরিশোধিত চিনির মজুদ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হাতে আছে ৫৩ হাজার টন।
অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এখন এক লাখ ৬৩ হাজার টন চিনির মজুদ আছে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, এত চিনি কোথায় গেল?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রিফাইনারির ক্ষমতা বাড়ানোর কারণে এতদিন চিনি উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে দুই দিন আগে থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। পাইপলাইনে চিনি বন্দরে আসার পথে রয়েছে। ফলে রোজার সময় চিনির সংকট হবে না।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের শুরুতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চিনি আমদানি হয় সবচেয়ে কম। পরিশোধন কারখানার মালিকেরা এ সময় চিনি আমদানি করেননি।
এর আগে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বেশি চিনি আমদানি হওয়ায় সংকট প্রকট হয়নি। গত মার্চ মাস থেকে চিনি আমদানি শুরু হয়। গত চার মাসে (মার্চ থেকে জুন) চিনি আমদানি হয় চার লাখ ৪৫ হাজার ৪২৭ টন। এ মাসে এসেছে এক লাখ পাঁচ হাজার টন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সিটি গ্রুপের ৫২ হাজার ৪০০ টন চিনি খালাস করা হয়েছে। এসব চিনি এখন পরিশোধন করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
দেশবন্ধু সুগার রিফাইনারির আমদানি করা ২৭ হাজার টন চিনির মধ্যে খালাস হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫০ টন।
এ ছাড়া আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডেরও ২৬ হাজার টন চিনির মধ্যে ৪৫০ টন খালাস হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে এই দুটি জাহাজ থেকে কয়েক দিন চিনি খালাস করা যায়নি। তবে গতকাল শনিবার থেকে দুটি জাহাজ থেকে আবার চিনি খালাস শুরু হয়েছে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
কাস্টম হাউসের নথিপত্রে দেখা গেছে, সর্বশেষ চালানের এসব অপরিশোধিত চিনির দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫১ টাকায়।
যেমন, ব্রাজিল থেকে আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ২৬ হাজার টন চিনি আমদানি করেছে। এই চিনির কেজিপ্রতি দাম পড়েছে ৫০ টাকা ৮৬ পয়সা।
এই দামের সঙ্গে চিনি খালাসের নানা প্রক্রিয়ার খরচ এবং পরিশোধন খরচ মিলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা ধরা হলে খরচসহ প্রতি কেজি চিনির মূল্য পড়ে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা। খুচরা বাজারে এই চিনিই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭১ টাকায়।
চিনি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছয়টি চিনি পরিশোধন কারখানার মধ্যে চারটি বন্ধ থাকায় চিনির সরবরাহ কমে যায়। বাড়তি চাহিদার বিপরীতে কম সরবরাহকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বন্ধ কারখানাগুলো চালু হচ্ছে। এতে অন্তত রোজার সময় সংকট হবে না বলে ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করেছেন।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার চিনির দর ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা চিনি বিক্রিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৮ টাকা। এই দরে চিনি এনে ৬৫ টাকায় বিক্রি না করলে আবার তদারকি দলের মুখে পড়তে হবে। এ কারণে অনেকে চিনি কিনলেও ভয়ে বিক্রি করছেন না।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হাতে থাকা ৫৩ হাজার টন চিনি এখনই খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত। এতে চিনির বাজার স্থিতিশীল হবে।প্রথম আলো

 ৪৫ টাকায় আমদানি করা ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের প্রতি কেজি ছোলার দাম পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। এই ছোলা চার হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি ছোলায় আমদানি মূল্যের চেয়ে খুচরা মূল্য ২৩-২৫ টাকা বেশি। মিয়ানমার থেকে ৫৮-৫৯ টাকায় কেনা ছোলাও বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকায়।
রোজার বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি স্তরেই বেশি মুনাফার কারণে ছোলার দামে এই অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নথিপত্রে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়া—এই তিন দেশ থেকেই ছোলা আমদানি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সাধারণ মানের ছোলার দাম পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ছোলার দাম সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ টাকা। ইথিওপিয়া থেকে আমদানি করা ছোলার দাম পড়ছে ৪৯ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৩ টাকা।
১৭ জুলাই আমদানিকারক চিটাগাং স্টোর ৪৫ টাকা ১৬ পয়সা দরে ৪৬৯ দশমিক ৩ টন ছোলা আমদানি করে অস্ট্রেলিয়া থেকে। প্রতি কেজি ছোলা খালাসে সব ধরনের খরচ তিন টাকা ধরা হলে আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৪৮ টাকা ১৬ পয়সা।
চিটাগাং স্টোরের আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ছোলা মণপ্রতি দুই হাজার ১০ টাকায় বিক্রি করেছি ডিও ব্যবসায়ী ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে।’ এই হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৫৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে আমদানিকারক লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ টাকা।
এই ছোলা ডিও ব্যবসায়ী ও ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও কর্ণফুলী মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা এই ছোলা বিক্রি করছেন ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়।
মিয়ানমার থেকে সাড়ে ৫৮ থেকে সাড়ে ৫৯ টাকায় ছোলা কিনছেন আমদানিকারকেরা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা এই ছোলা কিনছেন কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ২২ পয়সায়।
কর্ণফুলী মার্কেটের খোকন স্টোরের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান মিয়ানমারের ছোলা কেজিপ্রতি বিক্রি করছেন ৭৮ টাকায়। দাম এত বেশি কেন, জানতে চাইলে তিনি রসিদ দেখিয়ে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে গত বুধবার মণপ্রতি দুই হাজার ৭৭০ টাকায় (কেজিপ্রতি ৭৪ টাকা ২২ পয়সা) এই ছোলা কিনেছি। দোকানে আনার খরচসহ কেজিপ্রতি দাম পড়েছে প্রায় ৭৬ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স তৈয়বীয়া স্টোরের মো. সোলায়মান জানান, গুদাম থেকে মালামাল পরিবহন ও খালাসের খরচ বেড়েছে। এসব খরচ যোগ করে প্রতি মণে ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করছি। দাম বাড়লে সব সময় আমরাই বিপদে পড়ি। অথচ আমদানিকারক থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে যাঁরা পণ্য কেনেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি মুনাফা করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানে ছোলার চাহিদা ধরা হয় ন্যূনতম ৬০ হাজার টন। এই মাসের প্রথম ২০ দিনে ছোলা আমদানি হয়েছে নয় হাজার ১৬৯ টন। এর আগের তিন মাসে ছোলা আমদানি হয় ৩৯ হাজার টন। আগামী দুই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া, ইথিওপিয়া ও মিয়ানমার থেকেও বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

 চিনি নেই, গুড়ের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা

সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খোলাবাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করার পর খোলাবাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাদের প্রশ্নের জবাব এড়াতে দোকানি ‘চিনি নাই’ লিখে রেখেন। গতকাল ছবিটি রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো
বাজার থেকে চিনি এখনো উধাও। চিনির বিকল্প হিসেবে আছে গুড়। কিন্তু এখানেও ব্যবসায়ীদের কারসাজি। রাতারাতি গুড়ের দাম কেজিপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা। আর চিনি ও গুড়ের এই বাজারে সংকটে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
তিন দিন হয়ে গেলেও চিনির সংকট মেটেনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল শনিবার বাজারে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ভরসা এখন আজ রোববারের একটি বৈঠক। চিনিসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের বিকেলে বৈঠকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, চিনির মতোই অবস্থা খোলা সয়াবিন তেলের। বাজারে এটিও খুব একটা মিলছে না। তবে যেসব দোকানে খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, খুচরা দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০৯, পাম তেল ৯৯ ও চিনি ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়ার কথা। গত বুধবার সরকারি পর্যায়ে এই দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকেই চরম অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার।
গুড়ের দামও চড়া: বাজারে চিনির সংকট চলায় অনেক ক্রেতারই নজর ছিল গুড়ের দিকে। এই সুযোগে গুড়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারে গতকাল আখের গুড় ৭০ থেকে ৮০ ও খেজুরের গুড় ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাঁচ-ছয় দিন আগেও তাঁরা আখের গুড় ৬০ আর খেজুরের গুড় ৬৫ টাকায় বিক্রি করতেন।
হঠাৎ গুড়ের দাম কেন বাড়ল—জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. ছালেহ বলেন, ‘রাজশাহী ও নাটোরের পাইকারি বাজার থেকেই আমাদের গুড় কিনতে হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালে আমাদের কী করার আছে।’ তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ, চিনির দাম বাড়ার কারণে সুযোগ বুঝে পাইকারি ব্যবসায়ীরা গুড়ের দাম বাড়িয়েছেন।
চিনির দেখা মেলা ভার: রাজধানীর পূর্ব তেজতুরী বাজারের চারটি দোকান ঘুরে গতকাল একটিতে চিনির দেখা মেলে। ক্রেতা সেজে দাম জানতে চাইলে দোকানি বললেন, কেজি ৭৫ টাকা। এত বেশি কেন? জবাবে তাঁর উত্তর, ‘যান, দেখেন এর কম দামে চিনি পান কি না।’
গতকালও কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকানগুলোতে চিনি দেখা যায়নি। দোকানিরা জানান, ক্রেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে নতুন করে চিনি আনেননি তাঁরা।
তবে কারওয়ান বাজার ঘুরে দুটি দোকানে দেশি চিনি দেখা গেছে। দেশি হলেও এই চিনির দাম কিন্তু কম নয়, পাক্কা ৭৫ টাকা কেজি।
ব্যবসায়ীদের আশ্বাস: যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আশপাশে ৮০ হাজার টন চিনি রয়েছে। আরও সাড়ে তিন লাখ টন চিনি আসছে। শিগগিরই চিনির সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের ২৯০ জন পরিবেশককে ৬০ টাকা করে চিনি দিচ্ছি, যেন তারা সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করতে পারে। কাল থেকে সবাই হাতের নাগালে চিনি পাবেন।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশবন্ধু গতকাল মন্ত্রণালয়কে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি গতকাল রাজধানীতে তাদের নয়জন পরিবেশককে ১৬০ মেট্রিক টন চিনি সরবরাহ করেছে। চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ মন্ত্রণালয়কে বলেছে, তাদের ৭৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি দেশে আসার অপেক্ষায় আছে। আরেক পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম বলেছে, চট্টগ্রামে তারা লালসালু টাঙিয়ে সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করবে।
চিনির অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকেই মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এর জন্য পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করে আসছেন। তবে গোলাম মোস্তফা বলেন, মিলগেট থেকে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় চিনি বিক্রি করা হচ্ছে। তাহলে কেন ওই চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি করা হবে? পরিবেশক-প্রথা যেন কার্যকর হতে না পারে সে জন্যই পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ কাজ করছেন।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি দল গতকালও মৌলভীবাজারে অভিযান চালান। অভিযান শেষে আদালত পরিচালনাকারীরা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম মুর্তজা রেজা চৌধুরীর কাছে তাঁদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, পাইকারি ব্যবসায়ীরা আদালতকে বলেছেন, তাঁরা এখন থেকে সরকার-নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করবেন। আর যেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা না হয়।
খোলা সয়াবিনও মিলছে না: রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। হাতিরপুল বাজারের দু-তিনটি দোকানে খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১১২ টাকা লিটারে। তবে কারওয়ান বাজারের অনেক দোকানেই খোলা সয়াবিন বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১২ টাকায়।
তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৫ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা: রাজধানীর মিরপুর, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জন খুচরা ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দুটি দল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তাঁরা ক্রেতাদের কাছে চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছিলেন। পাশাপাশি কয়েকটি রেস্টুরেন্ট নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি ও বিতরণ করছিল।
অধিদপ্তরের দুই উপপরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ ও মো. মনিরুজ্জামান অভিযান পরিচালনাকারী দল দুটির নেতৃত্ব দেন।

দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রাথমিকভাবে আদমশুমারিতে যে সংখ্যাটি পাওয়া গেছে, তা থেকে সাধারণত প্রতি আদমশুমারিতেই পাঁচ-ছয় শতাংশ বেশি হয়। সে হিসেবে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২০-২৫ লাখ। তবে দেশের বাইরে আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি হবে।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাজেট বাস্তবায়ন’ সম্পর্কিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া রাজনৈতিক ইচ্ছার বিষয়। তবে আমার মনে হয়, নতুন ব্যাংক হলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে।’
পুঁজিবাজার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন বিধিবিধান হচ্ছে। শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোম্পানির শেয়ার আসার ব্যাপারে আমলাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বর্তমানে ডলারের যে দাম তা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেই আমদানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

ডিএসইতে ১৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ রোববারও লেনদেন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। গত বৃহস্পতিবারের মতো আজও লেনদেন বেড়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে। গত ডিসেম্বরে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস নামার পর আজকের লেনদেন সর্বোচ্চ। এ ছাড়া দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই সারা দিন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে ভয়াবহ ধসের পর বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে ভুগছিলেন। চলতি অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাজারে তারল্যসংকটও অনেকাংশে কমে গেছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাজারে ভয়াবহ ধসের পর বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে প্রবল তারল্যসংকট বিরাজ করছিল। এই সংকট অনেকাংশে কমেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় লেনদেনও বেড়েছে।
শাকিল রিজভী আরও বলেন, বাজার বাড়তে থাকলে সবাই আসে। আবার কমতে থাকলে সবাই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি উল্টো হওয়া উচিত ছিল। তাহলে বাজারও স্বাভাবিক আচরণ করত। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগও লেনদেন বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তিনি।
এ অবস্থায় নতুন শেয়ার সরবরাহ করা দরকার বলে মনে করছেন ডিএসইর সভাপতি। নতুন শেয়ারবাজারে আনার ব্যাপারে ডিএসইর পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান শাকিল রিজভী।
আজ ডিএসইতে এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর এক হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই হিসাবে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার এক হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা লেনদেন হয় ডিএসইতে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আজ দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৪৯.৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬৭১০.৫৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আজ ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের ১০ মিনিটের দিকে সূচক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। প্রথম ঘণ্টা শেষে সূচক কিছুটা কমলেও দ্বিতীয় ঘণ্টা শেষে আবার বাড়তে শুরু করে। বেলা একটায় দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ পয়েন্ট বেড়েছিল, যা দিন শেষে কিছুটা কমে যায়।
আজ লেনদেন হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে আজ লেনদেনে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো, আফতাব অটো, আরএন স্পিনিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ার, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা ও এমজেএল বিডি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক ৭১.৯৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯১৮৬.৭০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে নয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে আজ ১৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।প্রথম আলো

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More