Feedjit Live

Thursday, July 7, 2011

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস

এস এম কৃষ্ণা এস এম কৃষ্ণা
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অংশীদার হতে চায় ভারত। এরই অংশ হিসেবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে এ আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন। আর অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ সংশ্লিষ্ট সব দেশকে ট্রানজিট দেওয়ার কথা বলেছেন। এদিকে সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও এস এম কৃষ্ণা জানিয়েছেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অংশীদার হতে চায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য গতকাল দুপুরে ঢাকায় এসেছেন এস এম কৃষ্ণা। তিন দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন তিনি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বিদ্যুৎ, বিনিয়োগ ও শুল্কবিষয়ক তিনটি চুক্তি সই হতে পারে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি অধিকতর সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। গতকাল বেলা একটায় ভারতীয় বিমান-বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে এস এম কৃষ্ণাকে অভ্যর্থনা জানান দীপু মনি। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। সন্ধ্যায় তিনি সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনা কমিশনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত ২০টি প্রকল্প ভারতের কাছে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে ১২টি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। আমরা কথা বলেছি ট্রানজিট নিয়ে। আলোচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিও এসেছে।’
এস এম কৃষ্ণা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাঁকে জানিয়েছি, ঋণচুক্তির আওতায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ট্রানজিটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিণত করার যে বিষয়টি তোলেন, তাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপের অনুরোধ জানানো হলে তাতেও ইতিবাচক সাড়া দেয় ভারত। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে অসম বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে সহায়ক হয়, সেই ক্ষেত্রগুলোতে যেন ভারত বিনিয়োগ করে। বাণিজ্য-বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে ভারতকে অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি ভারতের বাজারে আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুরোধে ভারত ইতিবাচক সাড়া দেয়।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রজিত মিত্তার ও দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক এ করিম উপস্থিত ছিলেন।
আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ সকাল ১০টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করবেন। এক ঘণ্টার আলোচনায় ২০১০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণা পর্যালোচনা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়।
সেপ্টেম্বরে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে সইয়ের জন্য বেশ কিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল চূড়ান্ত করতে দুই দেশের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এসব চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন এবং ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তর ও সীমানা চিহ্নিতকরণ। এ ছাড়া সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হচ্ছে ট্রানজিটের আওতায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার, যৌথ বিনিয়োগে খুলনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ভারতে বাংলাদেশের ৬১ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সুন্দরবনের বাঘ সুরক্ষাসংক্রান্ত চুক্তি ও প্রটোকল।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ও শুল্ক বন্দরসংক্রান্ত তিনটি চুক্তি ও প্রটোকল সই হতে পারে।
বিমানবন্দরে: ঢাকা নেমেই এস এম কৃষ্ণা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ সফরে আসতে পেরে তিনি বেশ সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও গভীর অংশীদারি চায়।
কৃষ্ণা বলেন, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের নেতৃত্ব বেশ কয়েকটি নতুন ও ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে উষ্ণতম সময় পার করছে।
দীপু মনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি তাঁর সঙ্গে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছি।’
সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সম্পাদকদের বলেছেন, তাঁর এ সফর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতির অংশ। তিনি জানান, ঢাকায় আসার আগে গত মঙ্গলবার তিনি মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি তাঁর আস্থা ও সহমর্মিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। কারণ, অনেক বিষয়েই বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে, মতপার্থক্য নেই। এস এম কৃষ্ণা গত বছরের জানুয়ারির পর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
সম্পাদকদের পক্ষ থেকে অভিমত দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যদি দ্রুত বাস্তবায়িত না হয়, তবে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরির অবকাশ থাকে। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে কেন? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০টি প্রকল্প তৈরি করেছে। এর মধ্যে দুই দেশের সম্মতিতে ১২টি অনুমোদিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আমলাতন্ত্র বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এস এম কৃষ্ণা বলেন, যেটাই হোক না কেন, ভারতের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে বদ্ধপরিকর। দিল্লি শীর্ষ বৈঠকের পর অনেক কাজ হয়েছে। কারিগরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব কাজ হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগে।
শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে এস এম কৃষ্ণা বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ইদানীং সীমান্তের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আমরা আরও উন্নত করতে চাই।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন মাহবুবুল আলম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মাহফুজ আনাম, গোলাম সারওয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন, আবেদ খান, মতিউর রহমান চৌধুরী ও মতিউর রহমান।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More