Feedjit Live

Sunday, July 10, 2011

ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী

Details
বাজারে ডলার সংকটে ডলারের দাম অস্থির হয়ে উঠছে। হঠাত্ করেই খোলা বাজারে চড়ে গেছে ডলারের দাম। বাজারে ডলারের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত সরবরাহ না করায় ডলার সংকট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি দামও অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাস্ফীতি ও কার্যকারিতা হারাবে। তবে বাজারে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং সূত্র জানায়, গেল সপ্তাহে ৭৪ টাকা ৫৬ পয়সা পর্যন্ত ডলারের দাম উঠে। তবে ব্যাংক ও গ্রাহকভেদে এর কিছুটা হেরফের হয়েছে। ডলারের দাম বাড়তে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেলিফোনে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও কখনো কখনো নিষ্ক্রীয় ভূমিকা পালন করে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার ফলে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৭৮ টাকা পর্যন্ত কার্ব মার্কেটে ডলারের লেনদেন হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও ব্যাংকগুলোতে সর্বোচ্চ ৭১ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত ডলারের কেনাবেচা হয়। ডিসেম্বরেও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম ছিল কমবেশি ৭০ টাকা। এ সময়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭২ টাকা। ডলারের এ মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে তারল্য সংকটের মতই ডলার সংকট রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী ডলার বাজারে সরবরাহ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তানুযায়ী ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাধ্যতামূলক ভাবে রাখতে হচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতেও ডলারের জমা রাখা জরুরী। ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনাও কিনেছে। ফলে, অফিসিয়াল চ্যানেলে ডলারের সরবরাহ কিছুটা কম। এদিকে, রেমিটেন্স প্রবাহ আগামী দিনগুলোতে কমে আসার আশংকাও করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসুযোগ নষ্ট হওয়ায় এ আশংকা করা হচ্ছে। আবার ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণেও কেউ কেউ ডলারে বিনিয়োগ করেছে এমনটিও বলেছে কোন কোন সূত্র।
স্বাভাবিকভাবে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। গত কয়েক মাস ধরেই চাহিদামত ডলার না পাওয়ায় ব্যাংকগুলোকে তৃতীয় মুদ্রায় এলসি খুলতে হচ্ছে। থার্ড কারেন্সি (ডলারের পরিবর্তে ইউরো বা পাউন্ড) কিনতেও বেশি দাম দিতে হয়। তাতে গড়ে ডলারের দাম বেড়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে অনেকেই নেতিবাচক দিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এর ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেশি হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভাসমান মুদ্রা বিনিময় হার চালু করলেও এখনো ডলারের মান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রেমিটেন্স ও রফতানিতে উত্সাহ যোগাতে অনেকটা পরিকল্পিতভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়ে রাখা হচ্ছে। যা আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন করতো। এখন সেটি অঘোষিতভাবেই করা হচ্ছে। প্রকৃত বিনিময় হার কার্যকর করা হলে টাকার মান বৃদ্ধি পেত। টাকার বিপরীতে ডলার দুর্বল হত। তাতে আমদানি পণ্যের দামও কম হতো।
ফিনান্সিয়াল ইকনোমিস্ট ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, এখন যেহেতু ডলার ছাড়াও অন্য মুদ্রায় আমদানি ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে, তাই ডলারের বাড়তি দাম ধরে রাখার কোন যুক্তি নেই। বরং টাকা ও ডলারের মূল্যমান প্রকৃত বাজারভিত্তিক করে দেয়াই উত্তম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৩ সালে মুদ্রার ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট বা ভাসমান বিনিময় হার বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে এটি করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আশংকা করছে, কার্যকর বিনিময় হার চালু থাকলে ডলারের দাম ৪/৫ টাকা কমে আসবে। কিন্তুু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতির কারণে ডলারের বাড়তি দাম অব্যাহত থাকলে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়ে যাবে। তাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাবে না। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিও কার্যকারিতা হারাবে।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More