Feedjit Live

Thursday, June 30, 2011

১১ বছরে বরাদ্দ বেড়েছে তিন গুণ, ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি

১১ বছরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ২০০১-০২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল প্রায় চার হাজার কোটি টাকা, তা ২০১১-১২ অর্থবছরে এসে দাঁড়াবে ১২ হাজার কোটি টাকায়, যা মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
গতকাল বুধবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল আয়োজিত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট-সংক্রান্ত এক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এ তথ্য দেওয়া হয়।
সংলাপে অংশ নেওয়া প্রায় সব বক্তাই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এই অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন।
তবে সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বাজেটের বরাদ্দ খুবই অপর্যাপ্ত।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ এই বিপুল অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেটের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মোট আয়ের ৬২ শতাংশ চলে যায় কর দিতে। আর সেই করের টাকার বাজেটের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ পায় সেনাবাহিনী। আর কৃষিতে বরাদ্দ পায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ। কৃষির বরাদ্দ কীভাবে খরচ হচ্ছে, এর ফল কী আসছে, তার সবই দেখতে পাই। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীতে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো ফল দেখতে পাই না।’
এ কে আজাদ বলেন, সেনাবাহিনী রাস্তা তৈরি করছে, উন্নয়নকাজে অংশ নিচ্ছে। তার জন্য জাতীয় বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দের দরকার আছে কি না, তা আলোচনা হওয়া উচিত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘প্রতিরক্ষার বিষয়গুলোতে সব দেশেই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তবু আমাদের দেশে প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে প্রতিরক্ষা কমিটির সামনে আলোচনা হয়। প্রতিবছরই প্রতিরক্ষার বরাদ্দ ও ব্যয়ের ওপর নিরীক্ষা হয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির কাছে যায়। সরকারের অন্যান্য সংস্থার আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন যতটুকু প্রকাশ করা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর আয়-ব্যয়ও ততটুকু প্রকাশিত হয়।
সংলাপ অনুষ্ঠানের সভাপতি ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, কোনো কিছু চাপা থাকলে অনেক প্রশ্ন ওঠে। তাই বিষয়গুলোর খোলামেলা আলোচনা ভালো। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহি চৌধুরী ‘বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটের তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরে বলা হয়, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ খাতে বাজেট বরাদ্দ অনেক কম।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাজেট বৃদ্ধি মানেই মানসম্মত বাহিনী নয়। প্রতিরক্ষা বরাদ্দ বৃদ্ধির ভালো ফল হলো দেশে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, কাজের সুযোগ তৈরিসহ অর্থনীতির গতিবৃদ্ধি। অন্যদিকে এর ফলে অর্থনীতিতে বোঝাও তৈরি হয়। দরিদ্র দেশ থেকে ধনী দেশগুলোতে সম্পদ চলে যায় এবং এটি গণতন্ত্রের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
সাবেক সেনাপ্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায় বেতন-ভাতা, পেনশন, রেশন ইত্যাদিতে। তাই বাহিনীর উন্নয়নের জন্য এই প্রতিরক্ষা বাজেট খুবই অপর্যাপ্ত।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর বিষয়গুলো এখনো আলোচনার ঊর্ধ্বে। জাতীয় বাজেটে পরিষ্কারভাবে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয় না। তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, শত্রুর মোকাবিলার জন্য প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের জন্য হুমকি কারা, এরা কী অভ্যন্তরীণ, না বহিঃশত্রু, তা স্পষ্ট নয়। বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আগে, নাকি সামরিক ট্যাংক আগে কেনা হবে—বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। প্রথাগত যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত, তার খোলামেলা আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’
সেনাবাহিনীর বাজেট শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সেনাবাহিনীর কোনো কিছুই গোপন নয়। যথাযথ দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কেউ এর বরাদ্দ ও খরচের বিষয়ে জানতে পারেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর মোট বরাদ্দের মধ্যে সেনাবাহিনী পেয়েছে ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশ, বিমানবাহিনী ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, নৌবাহিনী ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাকিটা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে (ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ক্যাডেট কলেজ এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠান) ব্যয় হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সেনাবাহিনীর মোট বরাদ্দের ৫৮ শতাংশ খরচ হয় বেতন ও অন্যান্য ভাতা বাবদ, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ সরবরাহ ও সেবা খাতে, ১ দশমিক ৮ শতাংশ মেরামত খাতে, ২১ দশমিক ৭২ শতাংশ সামরিক উপকরণ সংগ্রহ এবং দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কল্যাণ খাতে ব্যয় হয়।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জহির বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্যও বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এ জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল ও সর্বাধুনিক সরঞ্জাম। আর এর জন্য চলতি বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে শুধু জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনীর বিষয়গুলো সেই পাকিস্তান আমল থেকেই ‘অতি সংবেদনশীল’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই চিত্রের পরিবর্তন আনতে হবে।
মেজর জেনারেল (অব.) রেজা নূর বলেন, ‘উপযুক্ত বরাদ্দের অভাবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারছে না।’
রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এত অর্থ খরচের ফল কী হচ্ছে, তা যদি মানুষ জানতে পারে, তাহলে তারা বিষয়টি মানবে।
চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট নেছারউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘গরিব দেশ হিসেবে এটা অনেক বড় বরাদ্দ। আমাদের কষ্টের এই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, আমরা তা জানি না।’
সংলাপের সূচনা বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনুন নিশাত উপস্থিত ছিলেন।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More