২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ছিল তিন টাকা ৭০ পয়সা। ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই দাম বাড়তে বাড়তে পৌঁছায় সর্বোচ্চ ১১৯ টাকা ১০ পয়সায়।
অর্থাৎ তিন বছরে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে প্রায় ৩২ গুণ। এ সময়ে কোম্পানিটির বাজার মূলধন মাত্র সাত কোটি পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
নানা কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ার এ চমক দেখায় ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মৎস্য খাতের কোম্পানি বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
কখনো কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উদ্যোক্তারা নিজেই, কখনো ঋণসুবিধা-বহির্ভূত এ কোম্পানির শেয়ার কিনতে গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের ঋণসুবিধা দিয়ে ঋণদাতা কিছু প্রতিষ্ঠান, আবার কখনো একদল বিনিয়োগকারী সংঘবদ্ধ হয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আর এ সুযোগে কোম্পানির সংরক্ষিত (সাসপেন্স) হিসাব থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২১ হাজার শেয়ার গোপনে বিক্রি করে প্রায় ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন কোম্পানির দুই কর্মকর্তা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্দেশে কোম্পানির লেনদেনের তথ্যানুসন্ধান করে কারসাজির এসব ঘটনা উদ্ঘাটন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু এসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সদস্যের কারণে সে সময় এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে শেয়ারবাজার ধসের কারণ অনুসন্ধানে সরকারের উদ্যোগে কমিটি গঠনের পর নড়েচড়ে বসে এসইসি। এ সময় অভিযুক্ত কয়েকটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে শুনানিতে ডাকা হয়। তবে এসইসির পরিবর্তন ও পুনর্গঠন-জটিলতায় বিষয়টির তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটিও কোম্পানিটির শেয়ারের দর বাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি আমার কাছে এসেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছি।’
২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি কোম্পানি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, তারা এক কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পৌর এলাকায় এক দশমিক ২৭ একর জমি কিনেছে। নিবন্ধনসহ যার ব্যয় দেখানো হয় এক কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর কিছু দিন আগে কোম্পানির একাধিক উদ্যোক্তা বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সুবিধাভোগী বা ইনসাইডার লেনদেনের সন্দেহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন: ডিএসইর প্রতিবেদনে ঋণসুবিধাবহির্ভূত থাকা সত্ত্বেও বিচ হ্যাচারির শেয়ার কিনতে গ্রাহকদের ঋণ ও আর্থিক সমন্বয় (নেটিং) সুবিধা দিয়েছে এমন পাঁচটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, ব্যাংক এশিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক। সব প্রতিষ্ঠানই পরে ডিএসইর কাছে লিখিতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। এসইসির শুনানিতেও তারা একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বিচ হ্যাচারির শেয়ারের অস্বাভাবিক লেনদেনের সঙ্গে ১৯ জন বিনিয়োগকারীর জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কখনো এককভাবে, আবার কখনো সংঘবদ্ধভাবে এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটান। এর বাইরে আরও আটজন বিনিয়োগকারীর নিয়ম ভেঙে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে নেটিং ও ঋণসুবিধা নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন: শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইমরান, এস কে মনসুর আলী, হালিমা খাতুন, নোমান ইসলাম, আবু আহমেদ, এস এম জিল্লুর রহমান ও জিয়াউদ্দিন আদিল।
সংরক্ষিত হিসাবের শেয়ার আত্মসাৎ: ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সংরক্ষিত হিসাবে থাকা শেয়ারধারীদের প্রাপ্য ২১ হাজার বোনাস শেয়ার আত্মসাৎ করেছেন কোম্পানি সচিব (তৎকালীন) নূর ইসলাম ও শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল আলীম। এর মধ্যে সাড়ে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কোম্পানি সচিব আর চার লাখ টাকা নেন শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা। দুজনই বিষয়টি লিখিতভাবে ডিএসইর তদন্ত দলের কাছে স্বীকার করেছেন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাসপেন্স হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন কারণে অবণ্টিত শেয়ার জমা থাকে। পরে দাবিদার খুঁজে পাওয়া গেলে ওই সব শেয়ার বণ্টন করা হয়। প্রকৃত মালিককে না জানিয়ে কোম্পানির হিসাবে সংরক্ষিত থাকা এসব শেয়ার বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
যোগাযোগ করা হলে নূর ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানির সাসপেন্স হিসাব থেকে ২১ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোম্পানির শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল আলীমই এসব শেয়ার বিক্রি করেছেন।’
ডিএসইর তদন্ত দলের কাছে কেন লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, জানতে চাইলে ডিএসইর লোকজন জোর করে তাঁর কাছ থেকে এ স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। নূর ইসলাম জানান, তিনি বর্তমানে কোম্পানি সচিবের দায়িত্বে নেই। তবে কোম্পানির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে।
মূল্য সংবেদনশীল তথ্য-প্রতারণা: ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল কোম্পানির পক্ষ থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে জানানো হয়, পরিচালনা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানি সমুদ্রগামী চারটি ট্রলার কিনবে, যা মাছ ধরা, প্রক্রিয়াজাত করা ও রপ্তানির কাজে ব্যবহার করা হবে। এমন তথ্য প্রকাশের পরদিন ১৩ এপ্রিল ডিএসই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়। চারটি সমুদ্রগামী ট্রলার কেনার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে কোম্পানিকে চিঠি দেয় ডিএসই। চিঠির জবাবে ২৭ এপ্রিল কোম্পানি জানায়, চারটি ট্রলার কিনতে ৬০ কোটি টাকা খরচ হবে। এ জন্য কৃষি ব্যাংকে ঋণ আবেদন করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওই দিনই ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, কোম্পানির প্রায় ১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যার কারণে কোম্পানিটিকে নতুন করে চারটি ট্রলার কেনার ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া কোম্পানি সচিব নূর ইসলাম এক চিঠি দিয়ে ডিএসইকে জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা সি ফুডস লিমিটেড ও তার দুটি কারখানা অধিগ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের প্রাথমিক প্রস্তুতিও কোম্পানি শুরু করেছে। যদিও এসব ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিষয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি। কোম্পানিটির এসব তথ্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে নূর ইসলাম জানান, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। আর চেয়ারম্যানকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।
এসব মূল্য সংবেদনশীল তথ্য শেয়ারের দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। শেয়ারটির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল এসইসিও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দাম বাড়ানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডিএসইর সদস্য ব্রোকারেজ হাউস আরাফাত সিকিউরিটিজ, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি মজিবুর রহমানকে পৃথকভাবে মোট ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করে এসইসি।
২০০৬ ও ২০০৭ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। অথচ পরের তিন বছর যথাক্রমে ১০, ১২ এবং ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়।
অর্থাৎ তিন বছরে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে প্রায় ৩২ গুণ। এ সময়ে কোম্পানিটির বাজার মূলধন মাত্র সাত কোটি পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
নানা কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ার এ চমক দেখায় ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মৎস্য খাতের কোম্পানি বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
কখনো কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উদ্যোক্তারা নিজেই, কখনো ঋণসুবিধা-বহির্ভূত এ কোম্পানির শেয়ার কিনতে গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের ঋণসুবিধা দিয়ে ঋণদাতা কিছু প্রতিষ্ঠান, আবার কখনো একদল বিনিয়োগকারী সংঘবদ্ধ হয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। আর এ সুযোগে কোম্পানির সংরক্ষিত (সাসপেন্স) হিসাব থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২১ হাজার শেয়ার গোপনে বিক্রি করে প্রায় ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন কোম্পানির দুই কর্মকর্তা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্দেশে কোম্পানির লেনদেনের তথ্যানুসন্ধান করে কারসাজির এসব ঘটনা উদ্ঘাটন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু এসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সদস্যের কারণে সে সময় এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে শেয়ারবাজার ধসের কারণ অনুসন্ধানে সরকারের উদ্যোগে কমিটি গঠনের পর নড়েচড়ে বসে এসইসি। এ সময় অভিযুক্ত কয়েকটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে শুনানিতে ডাকা হয়। তবে এসইসির পরিবর্তন ও পুনর্গঠন-জটিলতায় বিষয়টির তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটিও কোম্পানিটির শেয়ারের দর বাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি আমার কাছে এসেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়েছি।’
২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি কোম্পানি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, তারা এক কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পৌর এলাকায় এক দশমিক ২৭ একর জমি কিনেছে। নিবন্ধনসহ যার ব্যয় দেখানো হয় এক কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর কিছু দিন আগে কোম্পানির একাধিক উদ্যোক্তা বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করেন। এ তথ্য উল্লেখ করে পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সুবিধাভোগী বা ইনসাইডার লেনদেনের সন্দেহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন: ডিএসইর প্রতিবেদনে ঋণসুবিধাবহির্ভূত থাকা সত্ত্বেও বিচ হ্যাচারির শেয়ার কিনতে গ্রাহকদের ঋণ ও আর্থিক সমন্বয় (নেটিং) সুবিধা দিয়েছে এমন পাঁচটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, ব্যাংক এশিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক। সব প্রতিষ্ঠানই পরে ডিএসইর কাছে লিখিতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। এসইসির শুনানিতেও তারা একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বিচ হ্যাচারির শেয়ারের অস্বাভাবিক লেনদেনের সঙ্গে ১৯ জন বিনিয়োগকারীর জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কখনো এককভাবে, আবার কখনো সংঘবদ্ধভাবে এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটান। এর বাইরে আরও আটজন বিনিয়োগকারীর নিয়ম ভেঙে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে নেটিং ও ঋণসুবিধা নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন: শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইমরান, এস কে মনসুর আলী, হালিমা খাতুন, নোমান ইসলাম, আবু আহমেদ, এস এম জিল্লুর রহমান ও জিয়াউদ্দিন আদিল।
সংরক্ষিত হিসাবের শেয়ার আত্মসাৎ: ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সংরক্ষিত হিসাবে থাকা শেয়ারধারীদের প্রাপ্য ২১ হাজার বোনাস শেয়ার আত্মসাৎ করেছেন কোম্পানি সচিব (তৎকালীন) নূর ইসলাম ও শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল আলীম। এর মধ্যে সাড়ে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কোম্পানি সচিব আর চার লাখ টাকা নেন শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা। দুজনই বিষয়টি লিখিতভাবে ডিএসইর তদন্ত দলের কাছে স্বীকার করেছেন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাসপেন্স হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন কারণে অবণ্টিত শেয়ার জমা থাকে। পরে দাবিদার খুঁজে পাওয়া গেলে ওই সব শেয়ার বণ্টন করা হয়। প্রকৃত মালিককে না জানিয়ে কোম্পানির হিসাবে সংরক্ষিত থাকা এসব শেয়ার বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
যোগাযোগ করা হলে নূর ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানির সাসপেন্স হিসাব থেকে ২১ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোম্পানির শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল আলীমই এসব শেয়ার বিক্রি করেছেন।’
ডিএসইর তদন্ত দলের কাছে কেন লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, জানতে চাইলে ডিএসইর লোকজন জোর করে তাঁর কাছ থেকে এ স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। নূর ইসলাম জানান, তিনি বর্তমানে কোম্পানি সচিবের দায়িত্বে নেই। তবে কোম্পানির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে।
মূল্য সংবেদনশীল তথ্য-প্রতারণা: ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল কোম্পানির পক্ষ থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে জানানো হয়, পরিচালনা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানি সমুদ্রগামী চারটি ট্রলার কিনবে, যা মাছ ধরা, প্রক্রিয়াজাত করা ও রপ্তানির কাজে ব্যবহার করা হবে। এমন তথ্য প্রকাশের পরদিন ১৩ এপ্রিল ডিএসই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়। চারটি সমুদ্রগামী ট্রলার কেনার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে কোম্পানিকে চিঠি দেয় ডিএসই। চিঠির জবাবে ২৭ এপ্রিল কোম্পানি জানায়, চারটি ট্রলার কিনতে ৬০ কোটি টাকা খরচ হবে। এ জন্য কৃষি ব্যাংকে ঋণ আবেদন করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওই দিনই ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, কোম্পানির প্রায় ১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যার কারণে কোম্পানিটিকে নতুন করে চারটি ট্রলার কেনার ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া কোম্পানি সচিব নূর ইসলাম এক চিঠি দিয়ে ডিএসইকে জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা সি ফুডস লিমিটেড ও তার দুটি কারখানা অধিগ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের প্রাথমিক প্রস্তুতিও কোম্পানি শুরু করেছে। যদিও এসব ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিষয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি। কোম্পানিটির এসব তথ্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে নূর ইসলাম জানান, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। আর চেয়ারম্যানকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।
এসব মূল্য সংবেদনশীল তথ্য শেয়ারের দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। শেয়ারটির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল এসইসিও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দাম বাড়ানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডিএসইর সদস্য ব্রোকারেজ হাউস আরাফাত সিকিউরিটিজ, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি মজিবুর রহমানকে পৃথকভাবে মোট ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করে এসইসি।
২০০৬ ও ২০০৭ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। অথচ পরের তিন বছর যথাক্রমে ১০, ১২ এবং ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়।
0 comments:
Post a Comment